ক্রীড়া প্রতিবেদক
কাংক্ষিত জয়ে স্বস্তির সুবাতাস
কাজটা পরশু দিনই এগিয়ে রেখেছিল বাংলাদেশ। কাল সকালে নেমেই পরপর দুই উইকেট তুলে নেওয়ায় প্রথম সেশনেই মিলছিল জয়ের সুবাস। অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিন, সিকান্দার রাজারা প্রতিরোধের চেষ্টায় সময়টা কেবল প্রলম্বিত করেছেন, বদলাতে পারেননি নিজেদের অনিবার্য পরিণতি। প্রথম ইনিংসের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও নাঈম হাসানের ঘূর্ণি সামলাতে ব্যর্থ জিম্বাবুয়েনরা। তার সঙ্গে তাইজুল ইসলামও জ্বলে উঠায় খেলা শেষ হয়েছে দ্রুত। টানা ৬ টেস্টে নাস্তানাবুদ হওয়ার পর অবশেষে টেস্ট জয়ের স্বাদ পেয়েছে বাংলাদেশ।
মিরপুর শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে চতুর্থ দিনের দ্বিতীয় সেশনেই হয়েছে দুদলের একমাত্র টেস্টের ফয়সালা। জিম্বাবুয়েকে ইনিংস ও ১০৬ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। টেস্টে এটি টাইগারদের ১৪তম জয়, যার অর্ধেকই এলো জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে।
ম্যাচের চতুর্থ ও পঞ্চম দিনে ছিল বৃষ্টির শঙ্কা। যা অবস্থা ছিল, তাতে কেবল প্রতিকূল আবহাওয়াই টেস্ট নিতে পারত পঞ্চম দিনে। ফাল্গুনের ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়েছে কাল সকাল থেকে। কিন্তু সেই বৃষ্টি বাধা হতে পারেনি বাংলাদেশের জন্য।
শেষ ৬ টেস্টের পাঁচটাই ইনিংস ব্যবধানে হেরেছিল বাংলাদেশ। হার ছিল ঘরের মাঠে আফগানিস্তানের বিপক্ষেও। এই সময়ে টেস্টে মুমিনুলদের খেলার ধরনও ছিল ভীষণ দৃষ্টিকটু। নানা কারণে তাই কোণঠাসা দলটি খুঁজছিল স্বস্তির সুবাতাস। এই ম্যাচ দিয়ে পাওয়া গেছে সব। ব্যাটসম্যানরা বড় ইনিংস উপহার দিয়ে পেয়েছেন আত্মবিশ্বাস, পেসারদের থেকে মিলেছে ভরসার ছবি, স্পিনাররা দেখিয়েছেন মুন্সিয়ানা। এ নিয়ে মাত্র দ্বিতীয়বারের মতো কোনো প্রতিপক্ষকে ইনিংস ব্যবধানেও হারাতে পেরেছে বাংলাদেশ। এই ম্যাচে বাংলাদেশের বড় অর্জন মুশফিকুর রহিমের ডাবল সেঞ্চুরি, লম্বা রান খরা কাটিয়ে মুমিনুল হকের সেঞ্চুরি।
গতকাল ২ উইকেটে ৯ রানে নিয়ে খেলতে নেমে আর ৬ রান যোগ করতেই জিম্বাবুয়ে হারায় কেভিন কাসুজাকে। তাইজুল ইসলামের বলে সিøপে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। আগের দিনের শেষ বিকালের নায়ক নাঈম বল হাতে নিয়েই পান উইকেট। তার বলে সøগ সুইপ করে ক্যাচ উঠিয়ে ফিরে যান ব্রেন্ডান টেলর। এরপর পঞ্চম উইকেটে সিকান্দার আর আরভিনের ৬০ রানের জুটি। ইনিংস হার এড়াতে এই জুটিই ছিল সফরকারীদের শেষ ভরসা।
দারুণ ফিল্ডিংয়ে জুটি ভেঙেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল। ৪৩ করা আরভিন আউট হওয়ার পর বেশিক্ষণ টেকেননি সিকান্দার। তাইজুলের বলে কাভারে অনেকখানি লাফিয়ে দুর্দান্ত ক্যাচ ধরে ফেলেন মুশফিক।
কোমর ভেঙে যাওয়া জিম্বাবুয়ে এরপর টপাটপ খুইয়েছে উইকেট। টিমিসেন মারুমা আর রেজিস চাকাভার ছোট্ট এক জুটি ম্যাচের আয়ু সামান্য বাড়িয়েছে। থিতু হয়েও তারা টিকতে পারেননি নাঈম-তাইজুলের সামনে।
প্রথম ইনিংসে সম্ভাবনা জাগিয়েও ৫ উইকেট না পাওয়া নাঈম হাসান এবার মিটিয়েছেন সেই খেদ। আইন্সলে এনডেøাভুকে আউট করে পূরণ করেছেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ৫ উইকেট। শেষ ব্যাটসম্যানকে আউট করে তাইজুলও নেন ৪ উইকেট।
সাদা পোশাকের পর এবার টাইগারদের সামনে রঙিন পোশাকের চ্যালেঞ্জ। যার শুরুটা হচ্ছে ওয়ানডে সিরিজ দিয়ে। আগামী ১ মার্চ সিলেটে হবে দুদলের প্রথম ওডিআই ম্যাচ।
ঢাকা টেস্টের সংক্ষিপ্ত স্কোর
জিম্বাবুয়ে (১ম ইনিংস)
২৬৫ অলআউট, ১০৬.৩ ওভার
আরভিন ১০৭, মাসভাউরে ৬৪, চাকাভা ৩০
নাঈম ৭০/৪, রাহি ৭১/৪, তাইজুল ৯০/২
বাংলাদেশ (১ম ইনিংস)
৫৬০/৬, ১৫৪.০ ওভার
মুশফিক ২০৩*, মুমিনুল ১৩২, শান্ত ৭১
এনডেøাভু ১৭০/২, শুমা ৮৫/১, নিয়াউচি ৮৭/১
জিম্বাবুয়ে (২য় ইনিংস)
১৮৯ অলআউট, ৫৭.৩ ওভার
আরভিন ৪৩, মারুমা ৪১, সিকান্দার ৩৭
নাঈম ৮২/৫, তাইজুল ৭৮/৪, রাহি ৪/০
ফল : বাংলাদেশ ইনিংস ও ১০৬ রানে জয়ী
ম্যাচসেরা : মুশফিকুর রহিম
"