ক্রীড়া প্রতিবেদক

  ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

নাঈম-ভেল্কিতে এগিয়ে বাংলাদেশ

বাংলাদেশের দিন নাকি জিম্বাবুয়ের, নাঈম হাসানের নাকি ক্রেইগ আরভিনের? স্কোরকার্ডে চোখ রাখলে দ্বিধায় পড়ে যাবেন যে কেউ। তবে শেষ বিকালের একটি ডেলিভারি ব্যবধান গড়ে দিয়েছে খানিকটা। দারুণ সেই বলে সেঞ্চুরিয়ান আরভিনকে বোল্ড করেছেন নাঈম। তাতে একমাত্র টেস্টের প্রথম দিনটি বাংলাদেশ শেষ করেছে স্বস্তিতে, কিছুটা এগিয়ে থেকে।

আগের সিরিজে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে যে কৌশল বেছে নিয়েছিল জিম্বাবুয়ে, বাংলাদেশের বিপক্ষেও এগিয়েছে তেমন মন্থর পথচলায়। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে গতকাল তারা ৯০ ওভারে তুলেছে ৬ উইকেটে ২২৮ রান।

শন উইলিয়ামসের অনুপস্থিতিতে এই টেস্টে নেতৃত্ব পাওয়া আরভিন খেলেছেন বীরোচিত ইনিংস। দিনের শেষ প্রান্তে ১০৭ রান করে তার বিদায়েই হয়তো দিন শেষে একটু এগিয়ে বাংলাদেশ। টাইগারদের আসলে এগিয়ে রেখেছেন নাঈম হাসান। তার ঘূর্ণিতেই দিন শেষে হাসতে পেরেছে গোটা দল। গতকাল জুড়েই তিনি ছিলেন অসাধারণ। হাত ঘুরিয়েছেন ৩৬ ওভার, ৬৮ রান খরচায় নিয়েছেন ৪ উইকেট।

উইকেটগুলোর মতো গুরুত্বপূর্ণ ছিল তার ম্যারাথন স্পেলে বোলিং। এক পর্যায়ে টানা ৩২ ওভারের স্পেল করেন তরুণ এই অফ-স্পিনার। চার বোলারের বোলিং আক্রমণে তাই আরেক প্রান্তে অন্যদের ঘুরিয়ে ফিরিয়ে করাতে পেরেছেন টাইগার অধিনায়ক মুমিনুল হক। আরেক স্পিনার তাইজুল ইসলামের পারফরম্যানস ছিল নাঈমের উল্টো। দিনের শেষ ওভারের আগে ২০ ওভার করেও মেডেন পাননি। অভিজ্ঞ স্পিনারের বোলিং ছিল একদমই নির্বিষ।

দিনের প্রথম ভাগে বাংলাদেশকে ভোগান প্রিন্স মাসভাউরে ও আরভিন। প্রথম ঘণ্টায় যদিও দাপট ছিল বাংলাদেশের। শীতের রেশ খুব একটা না থাকলেও সকালের উইকেটে আর্দ্রতা ছিল খানিকটা। সেটি কাজে লাগিয়ে দারুণ বোলিং করেন আবু জায়েদ রাহি ও এবাদত হোসেন। দুজনের লাইন-লেংথ ছিল দুর্দান্ত, সুইংও পান যথেষ্ট। জিম্বাবুয়ের দুই ওপেনার খেলতে পারেননি স্বস্তিতে।

প্রথম ৬ ওভারে জিম্বাবুয়ের রান ছিল কেবল ১, সেটিও ওয়াইড থেকে। তবে দলের অপেক্ষা ছিল উইকেটের, ব্রেক থ্রু এনে দেন রাহি। তার দারুণ ডেলিভারিতে গালিতে ধরা পড়েন কাসুজা।

এরপর বল পুরোনো হতে থাকে, উইকেট হয়ে উঠতে থাকে সহজ। বাংলাদেশের বোলিং হারাতে থাকে ঝাঁজ। জিম্বাবুয়ে গড়ে তোলে জুটি। মাসভাউরে ও আরভিন এগিয়ে নেন দলকে। নাঈম শুরু থেকেই ভালো বোলিং করেছেন। কিন্তু তাইজুল করেছেন প্রচুর আলগা বল। ১ উইকেটে ৮০ রান নিয়ে মধ্যাহ্নভোজ বিরতিতে যায় জিম্বাবুয়ে।

বিরতির পর মাসভাউরে স্পর্শ করেন ফিফটি, ১১৭ বল খেলে। এ সময় নাঈমই যা একটু হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত নাঈমই ভাঙেন বাংলাদেশের মাথাব্যথা হয়ে ওঠা জুটি। নিজের বলে ফিরতি ক্যাচে ফেরান মাসভাউরেকে।

প্রথম দিনে বাংলাদেশের সেরা সময় আসে এরপর। ব্রেন্ডান টেলর আউট হন কা-জ্ঞানহীন শটে। একবার রিভার্স সুইপের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে পরের বলে আবার একই শট খেলতে যান অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান, নাঈমের বোল্ড হয়ে তার খেসারত দেন। আরভিনকে নিয়ে এরপর জুটি গড়ার চেষ্টা করেছিলেন সিকান্দার রাজা। নাঈম বাধা হয়ে দাঁড়ান এখানেও। অফ-স্টাম্প ঘেঁষা দারুণ ডেলিভারিতে থামান রাজাকে।

দ্বিতীয় নতুন বল প্রাপ্য হওয়ার ঠিক আগের ওভারে সাফল্য পান রাহি। দেরিতে সুইং করে ভেতরে ঢোকা বলে এলবিডব্লিউ টিমাইসেন মারুমা। তবে সংগীদের নিয়মিত হারিয়েও খেই হারাননি আরভিন। আপন ছন্দে এগিয়ে স্পর্শ করেন তিন অঙ্ক। বাংলাদেশের বিপক্ষে আগের ৪ টেস্ট খেলে তার সর্বোচ্চ ছিল ৩৫, গড় ছিল ২১। সেই ব্যাটসম্যানই এবার করলেন সেঞ্চুরি। শুধু কি তাই? ২০১০ সালে অ্যালিস্টার কুকের পর বাংলাদেশে এসে সফরকারী অধিনায়কের এটিই প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি।

আরভিন ছিলেন বলেই দিনটি বলা যাচ্ছিল না বাংলাদেশের। শেষ বেলায় দিনের দুই নায়কের দ্বৈরথে জিতলেন নাঈম। ২২৭ বলে ১০৭ করে বোল্ড হলেন আরভিন। বাংলাদেশ পেয়ে গেল পথরেখা। সেই পথরেখা ধরে এগিয়ে দ্বিতীয় দিনে জিম্বাবুয়ের ইনিংস দ্রুত শেষ করার আশা করতেই পারে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় নতুন বল এখনো বেশ চকচকে!

সংক্ষিপ্ত স্কোর

ঢাকা টেস্ট, ১ম দিন শেষে

জিম্বাবুয়ে (১ম ইনিংস)

২২৮/৬, ৯০.০ ওভার

আরভিন ১০৭, মাসভাউরে ৬৪

নাঈম ৬৮/৪, রাহি ৫১/২

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close