ক্রীড়া ডেস্ক

  ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

সেই মাদ্রিদেই মুদ্রার উল্টো পিঠ দেখল লিভারপুল

গোলমুখের ১২ গজ দূরে আলভারো মোরাতা যখন বল পেলেন, তার সামনে ছিলেন কেবল অ্যালিসন বেকার। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের জয়ের ব্যবধানটা বাড়াতে পারতেন তখন মোরাতা। কিন্তু শট করার বদলে পা পিছলে খেই হারালেন, পড়েও গেলেন। ডিয়েগো সিমিওনে এখন বুঝি খুব করে চাইছেন এই মুহূর্তটা একেবারে ভুলে যেতে। ওই মুহূর্তটা তার দলকে ভোগাবে কি না সেটা বোঝা যাবে আসলে অ্যানফিল্ডের পরের লেগে। তার আগ পর্যন্ত একটা প্রেরণা সঙ্গী হয়েছে অ্যাটলেটিকোর। ঘরের মাঠ ওয়ান্ডা মেট্রোপলিটানোতে বিশ্ব ও ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন লিভারপুলকে একমাত্র গোলে হারিয়ে দিয়েছে তারা।

এ মাঠেই গত মৌসুমের ফাইনালে টটেনহামকে হারিয়ে ১৪ বছর পর মুকুট মাথায় তুলেছিল লিভারপুল। সেই অর্জনের সুখস্মৃতি নিয়ে সাড়ে আট মাস পর মাদ্রিদের ময়দানে খেলতে নেমেছিল অলরেডরা। তবে এবার তাদের মুদ্রার উল্টো পিঠটাই দেখিয়ে দিল স্বাগতিকরা।

পরশু রাতে ম্যাচের শুরু থেকে একেবারে শেষ পর্যন্ত ডাগ আউটে দাঁড়িয়ে সবাইকে বারবার শান্ত থাকার তাড়া দিয়েছেন সিমিওনে। শুরুতেই গোলের পরও লাগাম টেনে ধরতে চেয়েছেন দলের, শেষ দিকে ওয়ান্ডার মাতাল দর্শকদেরও শান্ত রাখতে চেয়েছেন। ফলে লিভারপুলকে মৌসুমের তৃতীয় হার উপহার দিয়েছে তার দল। অথচ এই ম্যাচে স্পষ্ট ফেভারিট ছিল ইয়ুর্গেন ক্লপের লিভারপুল। কিন্তু ছোট হওয়ার ওই ‘অসহায়ত্বটাই’ মঙ্গলবার তাতিয়ে দিয়েছিল মাদ্রিদ জায়ান্টদের।

প্রতিপক্ষের রক্ষণদুর্গে বুভুক্ষুর মতো ঘুরেও হতাশ হয়ে ফেরাটা এই মৌসুমে ট্রেন্ড বানিয়ে ফেলেছিল অ্যাটলেটিকো। এ অবস্থায় ইউরোপসেরারা যখন ঘরে, তখন গোলের অপেক্ষা আরো দীর্ঘায়িত হবে, হয়তো এমনটাই ভেবেছিল ফুটবল অনুরাগীরা। কিন্তু পরশু এগিয়ে যেতে খুব একটা সময় নিল না স্বাগতিকরা। অবশ্য তাতে বড় সৌভাগ্যের ছোঁয়াও ছিল। কর্নার থেকে ফাবিনহোর পা ছুঁয়ে গোলমুখের একদম সামনে বল পেয়ে গিয়েছিলেন সাউল নিগুয়েজ। টোকা দিয়ে সেটাকে লিভারপুলের জালে পাঠিয়ে ওয়ান্ডার ভরা গ্যালারিকে আনন্দে ভাসালেন তিনি। ম্যাচের বয়স তখন সবে ৪ মিনিট।

অবশ্য ওয়ান্ডা তেতে ছিল আগে থেকেই। লিভারপুলের প্রবল চাপও তাই অ্যাটলেটিকো সামাল দিয়েছে বুক চিতিয়ে। বাকি সময় দুই দলের খেলা হয়েছে অনুমিতভাবে। অ্যাটলেটিকো নিজেদের রক্ষণ সামলাতে ব্যস্ত ছিল। আর লিভারপুল বল পজেশনে ঢের এগিয়ে থেকে আক্রমণ করে ম্যাচে ফেরার চেষ্টা চালাচ্ছিল। প্রথমার্ধে কাউন্টার অ্যাটাকে বেশি ভয়ংকর ছিল অ্যাটলেটিকোর আক্রমণভাগ। রবার্টসন আর অ্যালিসন দুই দফায় দলকে রক্ষা করেছেন বিপদের হাত থেকে।

অ্যাটলেটিকোর ৪-৪-২ ফর্মেশনে মিডফিল্ড লাইনও ছিল ডিফেন্সের মতোই ন্যারো। কিয়েরান ট্রিপিয়ের ইনজুরির কারণে ছিলেন না। তার অভাব বুঝতে দেননি হেক্টর হেরেরা এবং হোসে জিমেনেজ। সাভিচ-ফিলিপেরাও ভুল করেননি। তাতে লিভারপুলের হেন্ডারসন-ভিনালডাম-ফাবিনহোরা ভুগলেন বারবার। পরশু সালাহ-মানে-ফিরমিনোর বিখ্যাত সমন্বয়ের দেখা মিলেছে আরেকবার। কিন্তু অ্যাটলেটিকোর রক্ষণভাগ হতাশা উপহার দিয়েছেন তাদেরও। যে ত্রয়ী প্রতিপক্ষ শিবিরে ত্রাস সৃষ্টি করেন, তারাই কি না ম্যাচ শেষ করলেন গোলমুখ বরাবর কোনো শট না করেই! শেষদিকে অবশ্য নিজ সমর্থকদের গলাফাটা আনন্দধ্বনি অ্যাটলেটিকোর কাজটা সহজ করে দিয়েছে। এত কিছুর পরও সিমিওনে হয়তো পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারলেন না। হবেনইবা কী করে? এবার যে লিভারপুলের ডেরা অ্যানফিল্ডে কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে। গল্পের রোমাঞ্চকর অংশ তো এখনো বাকি!

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close