সাহিদ রহমান অরিন
টাইগার কাপ্তানের অবদান কতটুকু?
ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (সিপিএল) শিরোপা জিতলেন সাকিব আল হাসান। কাল সপ্তম আসরের ফাইনালে গায়ানা অ্যামাজন ওয়ারিয়র্সকে ২৭ রানে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় সাকিবের বার্বাডোজ ট্রাইডেন্টস। ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই টি-টোয়েন্টি প্রতিযোগিতায় টাইগার কাপ্তানের এটি ২য় শিরোপা। এর আগে ২০১৬ সালে জ্যামাইকা তালাওয়াসের হয়ে শিরোপা জিতেছিলেন তিনি।
সিপিএলের সদ্য সমাপ্ত আসরে মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ দুই-ই দেখেছেন সাকিব। রাউন্ড রবিন পর্বের ম্যাচগুলোতে আলো ছড়ালেও নকআউট পর্বে এসে তার পারফরম্যান্সের ঔজ্জ্বল্য ক্রমশ হ্রাস পেয়েছে। আগের ম্যাচগুলোতে ব্যাট হাতে ওয়ান ডাউনে নামলেও ফাইনালে মিডল অর্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। তবে জায়গা বদলালেও ভাগ্য বদলায়নি সাকিবের। রান আউটে কাটা পড়ার আগে একশ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ১৫ রান। গায়ানার ইনিংসে পঞ্চম ওভারে বোলিংয়ে এসে দিয়েছেন ৫ রান। এরপর তাকে বোলিং আনা হয় ১৭তম ওভারে। সেই ওভারে দেন ১৩ রান। যার ফলে সাকিবের হাতে আর বল তুলে দেওয়ার সাহস দেখাননি ট্রাইডেন্টস দলপতি হোল্ডার।
তবে চূড়ান্ত পর্বে আশাহত করলেও পয়েন্ট তালিকায় বার্বাডোজের শীর্ষ দুইয়ে থাকার পেছনে বিশেষ অবদান ছিল বাংলাদেশ অধিনায়কের। সিপিএলের এই মৌসুমে সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস প্যাট্রিয়টস ম্যাচ দিয়ে প্রথমবার মাঠে নামেন সাকিব। ৪ ওভার হাত ঘুরিয়ে মাত্র ১৪ রান খরচায় পান এক উইকেট। পরে ব্যাট হাতে উপহার দেন ২৫ বলে ৩৮ রানের ঝোড়ো ইনিংস। এরপরও রুদ্ধশ্বাস ম্যাচটা ১ রানে হেরে যায় সাকিবের দল। তবে পরাজয়ের ব্যবধানটা অতি নগণ্য হওয়ায় সেটা নেট রানরেটে খুব একটা প্রভাব ফেলেনি।
দ্বিতীয় ম্যাচে সেন্ট লুসিয়া জুকসের বিপক্ষে ২১ বল খেলে ২২ রান তোলেন সাকিব। বল হাতে ৪ ওভারে ২০ রান দিয়ে শিকার ধরেন একটি। তার অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ২৪ রানের অনায়াস জয়ে কক্ষপথে ফেরে বার্বাডোজ। ত্রিনবাগো নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে নিজের তৃতীয় ম্যাচে বোলিংয়ে গোড়াপত্তন করেন সাকিব। ২৫ রান দিয়ে ফেরান দুই ওপেনারকে। অবশ্য এ ম্যাচে উইলোখ- হাতে ব্যর্থ হয়েছেন বাংলাদেশি মেগাস্টার। ১৪ বল খেলে তোলেন ১৩ রান, সাদা বলটাকে সীমানাছাড়া করতে পারেননি একবারও। তবে সতীর্থ ব্যাটসম্যানরা জ্বলে ওঠায় ম্যাচটা ৭ উইকেটে জিতে নেয় বার্বাডোজ, পেয়ে যায় প্লে-অফের টিকিটি।
বার্বাডোজের কোয়ালিফায়ারে ওঠার ক্ষেত্রে ওই ম্যাচগুলোতে জয় বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আর দলকে মূল্যবান ৪ পয়েন্ট পাইয়ে দিতে দারুণ অবদান রেখেছেন সাকিব। ওভার প্রতি ৫ রানেরও কম দিয়ে নিয়মিত বোলিংয়ের গোড়াপত্তন করেছেন। নিখুঁত নিশানায় বল ফেলে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের চাপে রেখেছেন। পরে সেটার ফায়দা তুলেছেন সাকিবের সতীর্থ বোলাররা।
টুর্নামেন্টে ৬ ম্যাচ খেলে সাকিব উইকেট পেয়েছেন এক হালি। যদিও দুটি কোয়ালিফায়ার ও ফাইনালে ছিলেন একেবারেই নিষ্প্রভ। প্রথম কোয়ালিফায়ারে ৩২ বছর বয়সি তারকাকে বেধড়ক পিটিয়েছেন গায়ানার ব্যাটসম্যানরা। ওই ম্যাচে বল হাতে ৪ ওভারে দিয়েছেন ৪৬ রান, ব্যাট হাতে করেছেন মাত্র ৫। ত্রিনবাগোর বিপক্ষে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে ২ ওভারে বিলিয়েছেন ২৭ রান। তার আগে ব্যাটে ঝড় তোলার আভাস দিয়েও ১২ বলে একটি করে চার-ছক্কায় থেমেছেন ১৮ রানে। আসর শেষে সাকিবের বোলিং ইকোনমি রেট ৭.৫০। ব্যাটিং পরিসংখ্যানও আহামরি নয়। ১৮.৫০ গড়ে, ১১৫.৬২ স্ট্রাইক রেটে তার সংগ্রহ ১১১ রান।
তবে ব্যক্তির চেয়ে দলীয় সাফল্যতেই যদি হয় লেনাদেনা, তাহলে দেশের গর্ব সাকিবকে চ্যাম্পিয়ন অলরাউন্ডার ডাকতে নেই মানা!
"