ক্রীড়া ডেস্ক

  ০৫ অক্টোবর, ২০১৯

ছেলের ছদ্মবেশে খেলে আজ মেয়েদের জাতীয় দলে!

পুরুষদের সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার নারী ক্রিকেট দলও এখন ভারত সফর করছে। দুই দলের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে ভারতের হয়ে অভিষেকেই ইতিহাস গড়েছেন শেফালি ভার্মা। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ভারতের সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার এখন ১৫ বছর বয়সি এই হার্ডহিটার। এত অল্প বয়সে দেশের হয়ে খেলার সুযোগ পাওয়ায় সম্ভবত উঠতি নারী ক্রিকেটারদের প্রেরণার পাত্রী হয়ে উঠেছেন শেফালি।

খেলার প্রতি ভালোবাসা থাকলে কোনো কিছুই আর অসম্ভব হয়ে থাকে না। ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের রোহতাক অঞ্চলে বেড়ে উঠা শেফালি তার উদাহরণ। নিজের এলাকায় মেয়েদের কোনো ক্রিকেট শেখানোর একাডেমি না থাকায় শেফালিকে চরম পথই বেছে নিতে হয়েছিল। খেলা শিখেছেন ছেলেদের একাডেমিতে, ছেলেদের ছদ্মবেশ ধারন করে।

সেই শেফালিই আজ বিশ্লেষকদের চোখে ভারতীয় নারী ক্রিকেটের ‘ভবিষ্যৎ’। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে প্রোটিয়া নারীদের বিপক্ষে তার ৩৩ বলে ৪৬ রানের ইনিংস ভারতের জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে। এ বছর মেয়েদের সিনিয়র টি-টোয়েন্টি লিগে ৬ ইনিংসে ১৮৬ রান করেছেন শেফালি। স্ট্রাইকরেট ১৮৭.৮৭, এর মধ্যে ৮৮ শতাংশ রান এসেছে বাউন্ডারি থেকে।

শেফালির ক্রিকেটার হয়ে উঠা মূলত তার বাবা সঞ্জিব ভার্মার জন্য। অনেক অনুরোধ করেও মেয়েকে ছেলেদের একাডেমিতে ভর্তি করতে পারেননি তিনি। শেষ পর্যন্ত বাবা হয়ে মেয়েকে নির্দেশ দেন, চুল কেটে ছেলেদের মতো হয়ে যেতে। রোহতাক জেলার সবগুলো ক্রিকেট একাডেমিই সঞ্জিব ভার্মাকে ফিরিয়ে দিয়েছিল। ছোট্ট একটি অলংকার দোকানের মালিক এই ক্রিকেট পাগল বাবা ভারতীয় গণমাধ্যম ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’কে বলেন সেসব দাহকালের কথা, ‘কোনো একাডেমিই আমার মেয়েকে ভর্তি করতে চায়নি। কারণ রোহতাকে মেয়েদের জন্য কোনো একাডেমি ছিল না। তাকে একটা সুযোগ দেওয়ার জন্য সবার কাছে আমি হাত পেতেছি। কিন্তু কেউ কানে তোলেনি। সব জায়গা থেকে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর ওর চুল কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নেই। এরপর ছেলে হিসেবে তাকে একাডেমিতে ভর্তি করাই।’

শেফালি যে ছেলের ছদ্মবেশে ক্রিকেট শিখছে, তা বুঝে ফেললে বিপদের সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু তার বাবা জানালেন, কেউ টের পায়নি, ‘ভয় তো ছিলই। তবে কেউ বুঝতে পারেনি। ৯ বছর বয়স পর্যন্ত সব বাচ্চাকে দেখতে একই রকম লাগে।’ ছেলেদের সেই একাডেমিতে ভীষণ কঠিন সময় কেটেছে শেফালির। ছেলেদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে খেলতে হতো। এতে চোটও পেয়েছেন। শেষ পর্যন্ত তার স্কুল মেয়েদের ক্রিকেট দল বানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যায়। শচীন টেন্ডুলকারকে দেখে বড় ক্রিকেটার হওয়ার প্রেরণা পেয়েছেন শেফালি। ২০১৩ সালে হরিয়ানার বিপক্ষে ক্যারিয়ারের শেষ রঞ্জি ট্রফির ম্যাচ খেলেন টেন্ডুলকার। সে ম্যাচে গ্যালারিতে শেফালিকে কাঁধে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন তার বাবা।

বার্তা সংস্থা পিটিআইয়ের সঙ্গে আলাপচারিতায় স্মৃতিচারণ করেন শেফালি, ‘শচীন স্যারকে দেখতে স্টেডিয়ামের ভেতরে যত মানুষ ছিল, বাইরেও সে পরিমাণই ছিল। তখনই বুঝতে পারি ভারতের ক্রিকেটার হওয়া কতটা সম্মানের ব্যাপার। বিশেষ করে শচীন স্যারের মতো হতে পারলে। ওই দিনটা জীবনে কখনো ভুলব না। আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরু হয়েছে ওখান থেকেই।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close