ক্রীড়া প্রতিবেদক

  ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

একমাত্র ভরসা বৃষ্টি

দুইটি লক্ষ্য মাথায় রেখে চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করতে নেমেছিল বাংলাদেশ। চ্যালেঞ্জ দুটি শক্ত। জিততে হলে করতে হবে ৩৯৮ রান। জিতলেই ১৪২ বছরের টেস্ট ইতিহাসে সফল চেজিংয়ে হবে পঞ্চম বিশ্বরেকর্ড।

আর ম্যাচ বাঁচাতে হলে পার করতে হবে ১৫০ ওভার। দুটো লক্ষ্যই কঠিন। এর আগে ম্যাচ বাঁচাতে চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ ১৪২ ওভার ব্যাটিংয়ের রেকর্ড আছে টাইগারদের।

২০০৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টে চতুর্থ ইনিংসে ৩৭৪-এর চ্যালেঞ্জ মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে নাফিস ইকবালের ১২১, জাভেদ ওমরের ৪৩ এবং রাজিন সালেহর হার না মানা ৫৬ রানের ইনিংসে সেই প্রতিরোধ যুদ্ধে জয়ী হওয়ার অতীত আছে।

অথচ ৪র্থ ইনিংসের প্রতিরোধ ব্যুহ তৈরি করতে পারল কই? উল্টো বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং লাইন আপে ব্যাপক রদবদল এলোমেলো করে দিয়েছে ব্যাটিং!

একদিনের ক্রিকেটই বলুন কিংবা টি-টোয়েন্টি লোয়ার অর্ডারে ব্যাট করতে অভ্যস্ত মোসাদ্দেক। টেস্ট ক্যারিয়ারের ৩ ম্যাচের ৬ ইনিংসের মধ্যে ৭ নম্বর পজিশনে ৩ বার, ৮ নম্বর পজিশনে ২ বার নেমেছেন। ২০১৭ সালে শ্রীলংকায় বাংলাদেশের শততম টেস্ট জয়ে প্রথম ইনিংসে মোসাদ্দেকের ৭৫ রান এসেছে ৮ নম্বরে ব্যাট করে!

আফগানিস্তানের বিপক্ষে চলমান চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৪৮ রানের হার না মানা ইনিংসও এই ৮ নম্বরে। অথচ কি না তাকেই নামিয়ে দেয়া হলো ৩ নম্বরে! কোনো ফরমেটে ৩ নম্বরে খেলতে কখনোই অভ্যস্ত নন মোসাদ্দেক। ব্যাটিং অর্ডারে এই প্রমোশনটাও চান না। সেই অস্বস্তির কথা জানিয়ে দিলেন তিনি চায়নাম্যান জহির খানের ৪র্থ ওভারে অফ স্ট্যাম্পের অনেক বাইরের বল খেলতে গিয়ে লংঅফে ক্যাচ দিয়েছেন মোসাদ্দেক (১২)।

টেস্টে ৩ অথবা ৪ নম্বর পজিশনে অটোমেটিক পছন্দ মুমিনুল। ৩৬ টেস্টের মধ্যে ২৫ টেস্টে ৪৬ ইনিংস ব্যাট করেছেন মুমিনুল ৩ নম্বরে। ক্যারিয়ারের ৮টি সেঞ্চুরির ৫টিই এই পজিশনে। ৪ নম্বর পজিশনে ১১ টেস্টের ৩টিতে পেয়েছেন সেঞ্চুরি। আফগানদের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৪ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে করেছেন হাফ সেঞ্চুরি (৫২)। অথচ জীবনে প্রথম টেস্টে তাকে নামিয়ে দেয়া হলো ৫ নম্বরে। তার পরিণতি ৩ রানে আউট !

প্রথম ইনিংসে মুশফিকুর রহিমকে কেন ৬ নম্বরে নামানো হলো? মিডিয়ার এ প্রশ্নে সাকিবের জবাব ছিল, দীর্ঘক্ষণ উইকেট কিপিং করলে মুশফিক ভাইকে পাঁচ অথবা ৬ নম্বরে নামানোই ভালো। অথচ চতুর্থ ইনিংসে মুশিকে নামানো হলো ৪ নম্বরে। ৬৭ টেস্টের মধ্যে যা কিছু অর্জন তার সব ৫ এবং ৬ নম্বরে। টেস্টে তার ২টি ডাবলই এই দুটি পজিশনে। অথচ মুশফিককে নামিয়ে দেয়া হলো ৪ নম্বরে। হোল্ডিং ব্যাটসম্যান যখন নেই অবশিষ্ট তখন মাহমুদউল্লাহ ৭ নম্বরে, সৌম্য ৮ নম্বরে নামবেন এটাই তো স্বাভাবিক।

আসলে অবচেতনমনে ভয়, আতঙ্ক থেকেই ব্যাটিং অর্ডারে এই রদবদল। লেগ স্পিনার রশিদ খান, চায়নাম্যান জহির খানকে সামাল দিতে ব্যাটিং অর্ডারে ওপরের দিকে বাঁ-হাতি, ডান-হাতি কম্বিনেশন! এই ফর্মুলা প্রকারান্তরে যে নেতিবাচক, পরিচিত এবং অভ্যস্ত ব্যাটিং অর্ডার বাদ দিয়ে প্রকারান্তরে তা জানিয়ে দিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট। বিকাল ৪টা ৪০ মিনিটে বৃষ্টি খেলা থামিয়ে দেয়ার সময় চতুর্থ ইনিংসে বাংলাদেশের স্কোর ১৩৬/৬। সাকিব ৩৬, সৌম্য ০ রানে আছেন ব্যাটিংয়ে। জয় থেকে ২৬২ রান দূরে বাংলাদেশ, সমর্থকরা নিশ্চয়ই অসাধ্য সাধনের মতো অলীক স্বপ্ন দেখছে না। হার থেকে ৪ উইকেট দূরে দাঁড়িয়ে লজ্জা নিবারণে তাই অবিরাম বৃষ্টিই কামনা করছে বাংলাদেশ সমর্থকরা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close