ক্রীড়া ডেস্ক

  ১২ জুন, ২০১৯

গতিদানবদের বলেও পড়ছে না ‘হালকা’বেল!

চলতি বিশ্বকাপ শুধু জয় কিংবা হারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। প্রতিকূল আবহাওয়া, বাজে আম্পায়ারিং, অসামঞ্জস্য সূচি, পিচের অদ্ভুত আচরণের সঙ্গে অবিশ্বাস্য কা-ও ঘটছে অহরহ। সেসব ভূতুড়ে ঘটনার একটি ‘জিং বেল’। অনেকেই হয়তো উপলব্ধি করছেন, কিন্তু আসলে বুঝতে পারছে না ব্যাপারটা কী? এক বা দুবার নয়, গুণে গুণে পাঁচ-পাঁচবার ঘটেছে এমন ঘটনা। স্টাম্পে বল লাগছে অথচ বেল পড়ছে না! এমনকি গতিদানবদের দুর্বার গতিও পরাস্ত করতে পারছে না বেলকে! লন্ডনের দ্য ওভালে ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের কথাই ধরা যাক। অজি ইনিংসের একেবারে শুরুতে জাসপ্রীত বুমরাহর একটা ডেলিভারিতে ডেভিড ওয়ার্নারের ব্যাটে লেগে বল উইকেটে আঘাত করলেও বেল পড়েনি। ফলে ক্রিকেটের নিয়মানুযায়ী নট-আউট থাকেন অজি ব্যাটসম্যান। বেঁচে যাওয়া ওয়ার্নার শেষ পর্যন্ত ৫৬ রান করেন।

এর আগে নটিংহামের ট্রেন্ট ব্রিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে মিচেল স্টার্কের ১৪৬ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় ছুটে আসা গোলা উইকেটে লাগলেও বেল অনড়! সে ক্ষেত্রে বেঁচে যাওয়া ব্যাটসম্যানের নাম ক্রিস গেইল। যদিও বেঁচে গিয়েও ওই ম্যাচে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি ক্যারিবীয় ব্যাটিংদৈত্য।

বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও একই ঘটনার সাক্ষী হয়েছেন ওভালের দর্শকরা। বেল না পড়ায় সেই যাত্রায় বেঁচে গিয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার ওপেনার কুইন্টন ডি-কক। আবার লঙ্কান অধিনায়ক দিমুথ করুনারতেœ একইভাবে নিষ্কৃতি পান নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। ইংল্যান্ডের বেন স্টোকসের বলে এমন পরিস্থিতির সামনে পড়েন বাংলাদেশের মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনও।

ক্রিকেটের নিয়মানুযায়ী, স্টাম্পে বল লেগে যদি বেল পড়ে যায় তাহলে ব্যাটসম্যান আউট। কিন্তু উইকেটে বল লাগার পরও বেল না পড়লে ব্যাটসম্যানকে নট-আউট বিবেচনা করা হয়। বল উইকেটে লাগলেও বেল না পড়ার এতগুলো ঘটনায় তাই রীতিমতো হইচই শুরু হয়েছে, যা বিশ্বকাপের দ্বাদশ আসরকে এরই মধ্যে বিতর্কিত করে তুলেছে।

ওয়ার্নারের ঘটনা নিয়ে ওভাল ম্যাচের পর প্রতিবাদী হয়েছেন বিরাট কোহলি। ভারত অধিনায়ক বলেছেন, ‘অবশ্যই ওয়ার্নারের বেঁচে যাওয়াটা ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট হতে পারত। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এটা প্রত্যাশিত নয়। প্রযুক্তি খুব ভালো। বেলে হাত লাগলে বা ছুঁলেও আলো জ্বলছে। কিন্তু বেল ফেলতে গেলে রীতিমতো ধাক্কা লাগাতে হচ্ছে উইকেটে। আমি নিজে ব্যাটসম্যান হয়ে এটা বলছি।’

সঙ্গে ভারতীয় অধিনায়কের সংযোজন, ‘আমরা নিজে স্টাম্প পরীক্ষা করেছি। খুব শক্ত করে মাটিতে পোঁতা হয়েছে, এমনও নয়। তাহলে কী হচ্ছে? আমার কাছে কোনো ব্যাখ্যা নেই। মনে রাখবেন, যে বোলারের ক্ষেত্রে ঘটনা ঘটেছে, তারা সবাই ফাস্ট বোলার। কেউ মিডিয়াম পেসার নয়। তাহলে কি স্টাম্পগুলো বেশি ভারী? কোনো দলই চাইবে না, একটা ভালো বলে ব্যাটসম্যানকে আউট করার পরও সে ক্রিজে থেকে যাক। আমি অন্তত এ রকম কিছু আগে দেখিনি।’ কোহলিকে সমর্থন করেছেন অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চও। তিনি স্বীকার করেছেন, কোনো বড় ম্যাচে এই ধরনের ঘটনা ম্যাচের ফল বদলে দিতে পারে। তবে আইসিসির দাবি, বিশ্বকাপে যে ‘জিং বেল’ ব্যবহার করা হচ্ছে, তা সাধারণ কাঠের বেলের চেয়ে হালকা। এরপরও কেন বেল পড়ছে না, সেটা ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছেও রহস্য হয়ে ধরা দিয়েছে। তবে আইসিসি মনে করে, স্টাম্পের ঘনত্ব বেশি হওয়াতে এমনটা ঘটছে। এ ব্যাপারে ইংল্যান্ডের দুই সাবেক অধিনায়ক নাসের হুসেইন ও মাইকেল ভনের দাবি, অবিলম্বে বিষয়টার সমাধান করা উচিত আইসিসির। নাসের বলেছেন, ‘প্রথমে সবাই ভেবেছিল, এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কিন্তু বিশ্বকাপে প্রথম দশ দিনের মধ্যে পাঁচবার এ ঘটনা ঘটেছে। এটা টুর্নামেন্টের জন্য মোটেই ইতিবাচক নয়। বিগ ম্যাচে মোক্ষম সময়ে এভাবে কোনো ব্যাটসম্যান বেঁচে গেলে সেটা হবে অনৈতিক।’ একইভাবে মাইকেল ভনের দাবি, প্রয়োজনে প্রযুক্তি বদল করা হোক। ভনের ভাষ্য, ‘বেলে আলো জ্বলার দরকার নেই, কিন্তু সেটাতে বল লাগলে পড়ে যাওয়া জরুরি। এটুকু আইসিসিকে নিশ্চিত করতে হবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close