ক্রীড়া প্রতিবেদক

  ০৬ এপ্রিল, ২০১৯

দুদলের ২ নায়ক আল-আমিন ও আফিফ

জমজমাট ম্যাচে ব্রাদার্সের হার

কাল সকাল থেকেই আকাশ ছিল মেঘলা। কালবৈশাখী ঝড়ের আভাস। ফতুল্লায় আল-আমিন হোসেনের সেই ঝড়ে লন্ডভন্ড হলো বিকেএসপি।

আল-আমিনের বোলিং তা-বে বিকেএসপির ব্যাটসম্যানরা কেবল উইকেটে এসেছেন আর সাজঘরের পথ ধরেছেন। প্রাইম ব্যাংকের ২২৩ রানের জবাবে মাত্র ৫০ রানে অলআউট হয়েছে তরুণদের নিয়ে গড়া দলটি। আর ১৭২ রানের বিশাল জয় নিয়ে চলতে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে সুপার সিক্স নিশ্চিত করার পথে অনেকটাই এগিয়ে গেছে এনামুল হকের দল।

মেঘাচ্ছন্ন পরিবেশ পেয়ে সুইংয়ের পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন আল-আমিন। ৮ ওভার বল করেছেন। ২০ রান খরচ করেছেন, উইকেট নিয়েছেন ৫টি। বিকেএসপির প্রথম ছয় ব্যাটসম্যানের পাঁচজনই শিকার এই পেসারের। অভিমন্যু ঈশ্বরনের হাতে শামীম হোসেন রানআউট হলে প্রথম ছয়ের অন্যটি আল-আমিনের নামের পাশে লেখার সুযোগ হয়নি!

আল-আমিন তা-বে একপর্যায়ে মাত্র ২৬ রানে ৬ উইকেট হারায় বিকেএসপি। লোয়ারঅর্ডার ব্যাটসম্যান পারভেজ ইমন ১৫ রান করে লজ্জা এড়িয়েছেন সর্বনিম্ন রানের।

অল্পের জন্য সর্বনিম্ন রানের ইনিংসে নাম ওঠেনি বিকেএসপির। ২০০২ সালে সিলেটের বিপক্ষে চট্টগ্রামের ৩০ রান এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ঘরোয়া লিস্টে ক্রিকেটে সর্বনিম্ন রানের ইনিংস। বিকেএসপির ইনিংসটি ঠাঁই পেয়েছে পঞ্চম স্থানে।

বিকেএসপির ইনিংসটিতে তিনজন ব্যাটসম্যান রানের খাতাই খুলতে পারেননি। সর্বোচ্চ ১৫ করা ইমনই কেবল দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছেছেন। বাকিদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান আবদুল কাইয়ুমের, ৭!

দিনের অন্য ম্যাচে বড় স্কোর না হলেও জমজমাট এক ম্যাচই হয়েছে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স ও ব্রাদার্স ইউনিয়নের মধ্যে। ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের (ডিপিএল) সেই ম্যাচে ব্রাদার্সকে ৯ রানে হারিয়েছে গাজী।

কাল সাভারের বিকেএসপিতে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে এদিন পুরো ৫০ ওভার খেলতে পারেনি গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স। সাজেদুল ইসলামের বোলিং তোপে ইনিংসের ২ বল বাকি থাকতেই অলআউট হয়ে যায় দলটি। তবে মেহেদী হাসানের ৪৮, লোয়ার-মিডল অর্ডারে কামরান গোলামের ৮১ ও শামসুর ইসলামের ২২ রানের ইনিংস দলকে ২০৬ রানের সংগ্রহ এনে দেয়।

ব্রাদার্স ইউনিয়নের পক্ষে সাজেদুল ইসলাম নেন চার উইকেট। এ ছাড়া মেহেদী হাসান ও অধিনায়ক মোহাম্মদ শরীফ দুটি করে এবং শরীফউল্লাহ ও বিশ্বনাথ হালদার একটি করে উইকেট নেন।

২০৭ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে মিজানুর রহমান, জুনায়েদ সিদ্দিকী ও ফজলে মাহমুদ রাব্বির ব্যাটে ভর করে দারুণ শুরু করেছিল ব্রাদার্স ইউনিয়ন। ১ উইকেটে ১৩৬ রান থেকে ১৬০ রানের মধ্যেই পাঁচ উইকেটের পতন ঘটে। এই ধাক্কা সামলাতে পারেননি শেষ দিকের ব্যাটসম্যানরা। ফলে ধীরে ধীরে জয় থেকে দূরে যেতে থাকে ব্রাদার্স ইউনিয়ন।

শেষ দুই ওভারে ব্রাদাসের দরকার ছিল ১১ রান। হাতে দুই উইকেট। কিন্তু পাঁচ বলে দুই রান তুলতেই দুই উইকেট আউট হয়ে যায়। ফলে ৯ রানের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স। গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের পক্ষে নাসুম আহমেদ একাই নেন ৫ উইকেট। এ ছাড়া সনজিত সাহা তিনটি এবং রাব্বি ও কামরান একটি করে উইকেট নেন।

দিনের তৃতীয় ম্যাচে দুদলের ইনিংস মিলিয়ে রান উঠল মোট ৬৪৯। প্রথম দল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব করে ৩২৪ রান। দুই বল হাতে রেখে তাদের সেই রান টপকে যায় সাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব। দুদলের সাড়ে ছয় শ রানের ম্যাচে নায়ক আফিফ হোসেন। তার ৮৬ বলে ৯৭ রানের ইনিংসে ভর করেই মোহামেডানকে হারায় সাইনপুকুর।

প্রথম ব্যাট করতে নেমে শুরুটা দুর্দান্ত হয় মোহামেডানের। তাদের প্রথম চারজন ব্যাটসম্যানই হাফসেঞ্চুরি করেন। সর্বোচ্চ ৮৪ রান করেন লিটন দাস। পরে ৫০ রান করে করেন ইরফান সুক্কুর ও অভিষেক মিশ্রা।

তবে প্রথম তিনজনের চেয়ে বেশি মারমুখী ছিলেন রকিবুল হাসান। ৪৯ বলে এগারোটি চার ও এক ছক্কায় ৭৪ রান করেন তিনি। ২২ বলে ৪৫ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলেন সোহাগ গাজী। অবশ্য শেষ পাঁচ ব্যাটসম্যান দুই অঙ্ক ছুঁতে না পারায় সাড়ে তিন শ হয়নি মোহামেডানের ইনিংস। তিন বল বাকি থাকতে তারা অলআউট হয় ৩২৪ রানে। সাইনপুকুরের হয়ে দেলোয়ার হোসেন পাঁচটি ?ও সোহরাওয়ার্দী শুভ দুটি উইকেট নেন।

বিশাল টার্গেট তাড়া করতে নেমে শুরুটা মনের মতো হয়নি সাইনপুকুরের। ৩২ রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর ১১৭ রানের মধ্যেই পাঁচ উইকেট নেই। প্রথম চার ব্যাটসম্যানের মধ্যে কেবল রান পান উন্মুক্ত চাদ। ৪৯ রান করে আউট হন তিনি।

একপাশ আগলে রেখে ব্যাট চালিয়ে যান আফিফ। তাকে ভালো সঙ্গ দেন অমিত হাসান ৪৩, সোহরাওয়ার্দী শুভ ৩৪ ও বল হাতে সফল দেলোয়ার হোসেন ৩৪। তবে ৮৬ বলে চারটি চার ও পাঁচ ছক্কায় ৯৭ রান করে কাজের কাজটা করে দেন আফিফই। তিন রানের আক্ষেপ নিয়ে ফিরলেও দলের জয়ে সেটা আর বড় হয়ে ওঠেনি। দুই বল বাকি থাকতে দুই উইকেট হাতে রেখে জয় পেয়ে যায় সাইনপুকুর।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

গাজী প্রুপ-ব্রাদার্স

গাজী গ্রুপ : ৪৯.৪ ওভার ২০৬ (মাইশুকুর ১, মেহেদী ৪৮, ইমরুল ০, রনি ৮, তৌহিদ ৩, শামসুর ১২, কামরান ৮১, শামসুল ২২, নাসুম ৫, কামরুল রাব্বি ১১, সঞ্জিত ২*; মেহেদী ২/২৬, শরীফ ২/৪৭, শরিফউল্লাহ ১/২, বিশ্বনাথ ১/৩২, সাজেদুল ৪/৫৪, নাঈম জুনিয়র ০/৩৫, ফজলে রাব্বি ০/৪)।

ব্রাদার্স : ৪৮.৫ ওভার ১৯৭ (মিজানুর ২৫, জুনায়েদ ৭২, ফজলে রাব্বি ৩১, দেবব্রত ০, ইয়াসির ৩০, শরিফউল্লাহ ৩, সাজেদুল ১৩, শরীফ ৮, বিশ্বনাথ ১, নাঈম জুনিয়র ৫*, মেহেদী ০; সঞ্জিত ৩/৪৫, মেহেদী ০/২০, নাসুম ৫/৪৯, শামসুর ০/১৭, কামরুল রাব্বি ১/৩১, তৌহিদ ০/৮, কামরান ১/২৯)।

ফল : গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স ৯ রানে জয়ী

ম্যাচসেরা : নাসুম আহমেদ

প্রাইম ব্যাংক-বিকেএসপি

প্রাইম ব্যাংক : ৫০ ওভার ২২২/৯ (এনামুল ২৩,

সালমান ০, ইশ্বরণ ৯২, আল আমিন ১৭, আরিফুল ০,

অলক ১, নাহিদুল ৫০, নাঈম ১৫, মনির ৩*, রাজ্জাক ১৫*;

তানজিম ০/৫৩, সুমন ২/৪১, নওশাদ ২/৩৭,

মুরাদ ২/৩৫, আমিনুল ০/৩১, শামিম ০/২২)।

বিকেএসপি : ২২ ওভার ৫০ (প্রান্তিক ২, ফাহাদ ৫, আমিনুল ০, আকবর ২, শামিম ২, কাইয়ুম ৭, ইমন ১৫, তানজিম ৪, নওশাদ ২*, সুমন ০, মুরাদ ০; আল আমিন

হোসেন ৫/২০, আরিফুল ০/৪, মনির ১/১৫,

নাহিদুল ০/২, নাঈম ২/৬, রাজ্জাক ১/০)।

ফল : প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব ১৭২ রানে জয়ী

ম্যাচসেরা : আল আমিন হোসেন

মোহামেডান-শাইনপুকুর

মোহামেডান : ৪৯.৩ ওভার ৩২৪ (লিটন ৮৪, ইরফান ৫০, অভিষেক ৫০, রকিবুল ৭৪, সোহাগ ৪৫, ভাটিয়া ১০, আলাউদ্দিন ৯, নাদিফ ০, নিহাদ ১, সাকলাইন ১,

শাহাদাত ০; শরিফুল ১/৬৮, দেলোয়ার ৫/৪৬, টিপু ১/৪২, শুভাগত ০/৪৩, শুভ ২.৭২, সাব্বির ০/৫১)

শাইনপুকুর : ৪৯.৪ ওভারে ৩২৫/৮ (সাদমান ২১,

সাব্বির ১৭, চাদ ৪৯, হৃদয় ৯, আফিফ ৯৭, শুভাগত ৫, আমিত ৪৩, শুভ ৩৪*, দেলোয়ার ৩৪, টিপু ১*;

শাহাদাত ১/৭৫, সোহাগ ২/৪০, আলাউদ্দিন ১/৬৫,

সাকলাইন ০/২২, নিহাদ ০/৪২, ভাটিয়া ২/৮০)

ফল : শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব ২ উইকেটে জয়ী

ম্যাচসেরা : দেলোয়ার হোসেন

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close