প্রিন্স রাসেল, চট্টগ্রাম থেকে

  ৩১ জানুয়ারি, ২০১৯

বৃত্ত ভেঙে প্লে-অফে ভাইকিংস

রবিন লিগ রাউন্ডের শেষ দিকে এসে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) যে এভাবে জমে উঠবে সেটা ছিল অধিকাংশ লোকের ভাবনারও বাইরে। যে ঢাকা ডায়নামাইটস ও চিটাগং ভাইকিংস হেসে খেলে সবার আগে প্লে-অফ পর্বে উঠে যাবে বলে ধরা হচ্ছিল সেই দুলই কি না টানা তিন ম্যাচ হেরে আধিপত্যের জায়গাটা নড়বড়ে করে ফেলেছিল। ভাইকিংসের ওপর চাপটা একটু বেশিই ছিল তারা শেষ তিনটি ম্যাচই হেরেছে ঘরের মাঠ জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে।

অবশেষে স্বস্তির একটা নিঃশ্বাস ফেলল মুশফিকুর রহিমের দল। নিজেদের মাঠে চতুর্থ ম্যাচে আর দর্শকদের হতাশ করেনি তারা। কাল মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ঢাকা ডায়নামাইটসকে ১১ রানে হারিয়ে তৃতীয় দল হিসেবে কোয়ালিফায়ার পর্বের টিকিট কেটেছে ভাইকিংস। শেষ ছয় ম্যাচের পাঁচটিতে হেরে আরো চাপে পড়ে গেল সাকিব আল হাসানের দল। তবে ঢাকায় রবিন লিগ রাউন্ডের বাকি দুই ম্যাচ জিতলে শীর্ষে থেকেও প্লে-অফে যাওয়ার সুযোগ আছে তাদের। একটিতেও জিতলেও এ যাত্রায় পরের রাউন্ডে উঠতে পারবে ১০ পয়েন্ট থাকা ঢাকা। রান রেটে যে সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থায় যে তারাই আছে! অন্যদিকে সপ্তম জয় নির্ভার হলো ভাইকিংস। ঘরের মাঠে একমাত্র ম্যাচটি জিতে মাঠ প্রদক্ষীণ করে ভাইকিংস দর্শকদের অভিবাদনের জবাব দিয়েছেন মুশফিকরা।

দুই দলের জন্যই ম্যাচটা হয়ে উঠেছিল হারের বৃত্ত ভাঙার। আসরের শুরুর দিকটায় দারুণ ফর্মে থাকা দল দুটোর লড়াইটাও প্রত্যাশা অনুযায়ী উত্তেজনার রেণু ছড়িয়েছে। ভাইকিংসের ইনিংসের শেষ ওভারে আন্দ্রে রাসেলের দুর্দান্ত এক হ্যাটট্রিক ম্যাচটাকে আরো প্রাণবন্ত করে তোলে। তাতেও অবশ্য মুশফিকদের বড় সংগ্রহ ঠেকাতে পারেনি ঢাকা। ক্যামেরন ডেলপোর্টের তা-ব ও মুশফিকের ঝড়ের ওপর দাঁড়িয়ে নির্ধারিত ওভারে ৫ উইকেটে ১৭৪ চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ তোলে স্বাগতিক শিবির। জবাব দিতে নেমে শুরুতেই ধসে পড়া ঢাকা ডায়নামাইটস ঠিকই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু জয়ে আর ফিরতে পারেনি। ভাইকিংসের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ৯ উইকেটে ১৬৩ রান তুলতে সক্ষম হয়েছে ঢাকা। চিটাগং ফিল্ডাররা গড়পড়তা ফিল্ডিং মিস না করলে হয়তো আরো আগেই থেমে যেতে পারত সাবেক চ্যাম্পিয়নদের রানের চাকা।

১৭৫ রানের কঠিন লক্ষ্যমাত্রায় ব্যাট করতে নেমে ২৩ রানের মধ্যে তিন উইকেট হারিয়ে বসে ঢাকা। একে একে সাজঘরে ফিরে যান সুনিল নারাইন, মিজানুর রহমান ও রনি তালুকদার। পরে নুরুল হাসানকে নিয়ে ইনিংস মেরামতের কাজ করেন সাকিব। দুজনের জুটি ছুঁয়েছে ৫০ রানের গ-ি। ২৩ বলে ৩৩ রানে নুরুলের বিদায়ে ভাঙে জুটি। ম্যাচটা ঝুঁকে পড়ে ভাইকিংসের দিকে। দলকে আরো কোণঠাসা করে দেন কাইরেন পোলার্ড গোল্ডেন এক ডাক মেরে। পয়েন্ট ঠেলে দিয়ে ফিল্ডারের সামনে বল দিয়েই এক দৌড়ে নন স্ট্রাইকিং প্রান্তে চলে আসেন পোলার্ড। অবধারিতভাবেই রান আউট হলেন তিনি। দুই ব্যাটসম্যান এক প্রান্তে মিলে যাওয়ায় অধিনায়ক সাকিবকে বিব্রতই মনে হলো। জাতীয় দলের সাবেক সতীর্থের ভুলের খেসারত দেওয়ার চেষ্টা করলেন রাসেল ২৩ বলে ৩৯ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে। সাকিবের সঙ্গে রাসেলের ষষ্ঠ উইকেট জুটিটা ফিকে হয়ে যাওয়ার জয়ের স্বপ্নটাকে পুনরুজ্জীবিত করে তোলে।

ফিল্ডারদের কারণে ম্যাচটা প্রায় হারতে বসেছিল ভাইকিংস। সাকিব ও রাসেলের তিনটি ক্যাচ ছেড়েছেন তারা। একবার তো বোল্ড হয়েও বেঁচে গিয়েছিলেন পোলার্ড। যদিও ‘নো’ বলের কারণে উইকেট বঞ্চিত হন ডেলপোর্ট। রিপ্লেতে দেখা যায় বল ডেলিভারি দেওয়ার সময় তার পায়ের খানিকটা অংশ বোলিংয়ের সীমারেখার ওপর ছিল। যদিও পার ভাইকিংস সমর্থকরা অবশ্য সেটাকে ‘নো’ বলের স্বীকৃতি দিতে চাইবেন না। ঢাকার জয়ের একমাত্র আশা হয়ে থাকলেন সাকিব। তুলে নিয়েছেন হাফসেঞ্চুরি; করেছেন ৪২ বলে ৫৩ রান। কিন্তু বৃথাই গেছে ইনিংসটা। সাকিব ব্যক্তিগত অর্ধশতক তুলে নিলেও শেষ ৩ ওভারে ৩১ রানের কঠিন সমীকরণ মেলাতে পারেননি।

ঢাকার টপ অর্ডার যেখানে ব্যর্থ সেখানে নৈপুণ্য দেখিয়েছে চিটাগংয়ের ওপরের সারির ব্যাটসম্যানরা। উদ্বোধনী জুটিতে ৪২ রানের যে সূচনা এনে দিয়েছেন মোহাম্মদ শাহজাদ ও ক্যামেরন ডেলপোর্ট সেটাকে কাজে লাগিয়েছে ভাইকিংস। ১৫ বলে ২১ রান করে আউট হন শাহজাদ। ২০ বলে ১৯ রানে আউট হয়েছেন ইয়াসির। পরে তৃতীয় উইকেটে ৭৯ রানের জুটিতে চলল মুশফিক ও ডেলপোর্ট তা-ব। ইনিংসের শেষ ওভারে রাসেলের হ্যাটট্রিক করার পথে দুজনকেই সাজঘরে পাঠিয়েছেন। বিপিএলের চলমান আসরে এটা তৃতীয় হ্যাটট্রিক। ততক্ষণে লড়াইয়ের জন্য শক্তিশালী সংগ্রহ পেয়ে গেছে ভাইকিংস। ৫৭ বলে ৭১ রান করেছেন ডেলপোর্ট। ২৪ বলে ৪৩ রানের ঝড় তোলেন মুশফিক।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close