মুহাজিরুল ইসলাম রাহাত, সিলেট থেকে

  ১৭ জানুয়ারি, ২০১৯

সিলেটে প্রথম হারের স্বাদ পেল ঢাকা

ঢাকা পর্বের সবগুলো ম্যাচ জিতেছে সাকিবের ঢাকা ডায়নামাইটস। পয়েন্ট টেবিলেও তাদের অবস্থান শীর্ষে। কিন্তু সাকিবদের জন্য সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম সৌভাগ্যের হলো না। গতকাল দিনের প্রথম ম্যাচে আগের চার ম্যাচে জয়ের স্বাদ পাওয়া ঢাকা ডায়নামাইটস ২০ রানে হেরেছে রাজশাহী কিংসের কাছে।

প্রথমে টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নামে রাজশাহী কিংস। মার্শাল আইয়ুব আর শাহরিয়ার নাফীস ছাড়া আর কেউ দাঁড়াতেই পারেননি ক্রিজে। ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় স্কোর বোর্ডে মাত্র ১৩৬ রান যোগ করতে পেরেছিল কিংসরা। তবে বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে জয় পেতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি তাদের। ঢাকাকে মাত্র ১১৬ রানে থামিয়ে ২০ রানের সহজ জয় তুলে নিল রাজশাহী কিংস।

১৩৭ রানের মামুলি টার্গেট তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারেই ১১ রান করে তুলে বড় জয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন ঢাকার দুই ওপেনার হযরতউল্লাহ জাজাই এবং সুনিল নারাইন। নিজেদের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে দ্রুতই ম্যাচ শেষ করে ফেলবেন এ দুজনÑ এমনটাই আশা ছিল সমর্থকদের।

কিন্তু কে জানত এমন হারের স্বাদ পেতে হবে তাদের। দ্বিতীয় ওভারে নিজের হাতে বল তুলে নেন রাজশাহীর দলপতি মিরাজ। প্রথম বলেই ব্রেক ত্রু। সাজঘরে ফেরালেন সুনীল নারাইনকে। পরের ওভারেই আঘাত হানেন ইসুর উদানা, ফিরিয়ে দেন ফর্মে থাকা জাজাইকে। নারাইন ৬ এবং জাজাই ফেরেন ১ রানে। চতুর্থ ওভারে আক্রমণে আসেন রাজশাহীর জয়ের আরেক নায়ক আরাফাত সানি। প্রথম বলেই ফিরিয়ে দেন ভয়ংকর আন্দ্রে রাসেলকে। ক্যারিবিয়ান এ অলরাউন্ডারের ব্যাট থেকে আসে ১১ রান। চতুর্থ উইকেটে ২৬ রানের জুটি গড়েন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান এবং রনি তালুকদার।

মনে হচ্ছিল এ দুজন মিলে দলকে জয়ের কাছে টেনে নেবেন। ঠিক তখনি বল হাতে আবার জ্বলে ওঠেন আরাফাত সানি। এবার শিকার অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। অফ স্টাম্পের বাইরের বলে সøগ করতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে ক্রিশ্চিয়ান জঙ্কারের তালুবান্দি হয়ে সাকিব ফেরেন ১৩ রানে। পরের ওভারে রনি তালুকদারের উইকেটসহ মেইডেন তুলে নেন সানি। চার ওভার শেষে সানির বোলিং ফিগার দাঁড়ায় ৪-১-৮-৩।

তখনো জয়ের আশা ছাড়েননি ঢাকা। ক্রিজে তখন ক্যারিবিয়ান দানব কিয়েরন পোলার্ড। এবার তাকে ঘিরেই জয়ের স্বপ্ন দেখছিলেন সমর্থকরা। মোহাম্মদ নাঈম শেখকে নিয়ে তিনি ষষ্ঠ উইকেটে যোগ করেন ৩১ রান। সে জুটি ভেঙে রাজশাহীর জয়ের আশা বাড়িয়ে দেন অধিনায়ক মিরাজ। নাইম ফেরেন ব্যক্তিগত ১৭ রানে। পরের ওভারেই অসাধারণ এক ক্যাচ নিয়ে ঢাকার জয়ের স্বপ্নভঙ্গ করেন রায়ান টেন ডেসকাটে এবং সৌম্য সরকার। ১৯ বলে ১৩ রান করে সাজঘরে ফেরেন পোলার্ড। তখনই মূলত জয়ের আভাস পেতে থাকে রাজশাহী।

তবে শেষবেলায় ম্যাচে কিছুটা লড়াইয়ের আভাস দেন উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহান। তার ২ চার ও ১ ছয়ের মারে ১৪ বলে ২১ রানের ইনিংসটি স্রেফ পরাজয়ের ব্যবধানই কমিয়েছে ঢাকার পক্ষে। শেষতক নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১১৬ রান করতে সক্ষম হয় ঢাকা। বল হাতে রাজশাহীর পক্ষে মাত্র ৮ রান খরচায় ৩ উইকেট নেন আরাফাত সানি। এ ছাড়া অধিনায়ক মিরাজ ১৮ রানে নেন ২টি উইকেট। ১টি করে উইকেট দখল করেন কামরুল ইসলাম রাব্বি, ইসুরু উদানা এবং মোস্তাফিজুর রহমান।

এর আগে ঢাকা ডায়নামাইটসের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে শেষ পর্যন্ত ৬ উইকেট হারিয়ে ১৩৬ রানেই থামে মিরাজদের ইনিংস। ব্যাট করতে নেমে শুরুতই ধাক্কা খায় রাজশাহী কিংস। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে ১১ বল খেলে মাত্র ১ রান করে ফেরেন অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ।

দ্বিতীয় উইকেটে অবশ্য এই ধাক্কা সামলে উঠেছিলেন শাহরিয়ার নাফীস আর মার্শাল আইয়ুব। তবে ২৭ বলে ২৫ রান করে নাফীস ভুল করে বসেন। সুনিল নারাইনকে তুলে মারতে গিয়ে লং অনে ক্যাচ হন এই ওপেনার। ওই ওভারেই এক বল বিরতি দিয়ে ভয়ংকর হয়ে ওঠা মার্শাল আইয়ুবকেও ফিরিয়ে দেন নারাইন। মার্শাল ৩১ বলে ৩ বাউন্ডারি আর ২ ছক্কায় করেন ৪৫ রান। চতুর্থ উইকেটে ৩৮ রানের আরেকটি জুটি গড়েন জাকির হাসান আর রায়ান টেন ডেসকাট। ১৮ বলে ১টি করে চার-ছক্কায় ২০ রান করে আল ইসলামের শিকার হন জাকির। এরপর দুই রানের ব্যবধানে ডেসকাটকেও ১৬ রানে ফিরিয়ে রাজশাহীকে বিপদে ফেলে দেন নারাইন।

ইনিংসের ১৯তম ওভারে সাকিব আল হাসানের ঘূর্ণিতে নুরুল হাসান সোহান দুর্দান্ত এক স্টাম্পিং করেন। সেকুগে প্রসন্ন সাজঘরের পথ ধরেন মাত্র ২ রানেই। শেষ পর্যন্ত আর বড় স্কোর গড়া সম্ভব হয়নি রাজশাহীর। ৮ বলে ৮ রানে অপরাজিত থাকেন জনকার। উদানা করেন ৪ বলে ৩ রান। ঢাকার পক্ষে বল হাতে সবচেয়ে সফল সুনিল নারাইন। ৪ ওভারে ১৯ রানে ৩টি উইকেট নেন ক্যারিবীয় এই স্পিনার। এ ছাড়া আন্দ্রে রাসেল, আলিস আল ইসলাম এবং সাকিব আল হাসান নেন ১টি করে উইকেট।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close