ক্রীড়া প্রতিবেদক

  ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৮

বিতর্কের আড়ালে আছে প্রাপ্তিও

জিম্বাবুয়ের সঙ্গে টেস্ট সিরিজে ড্র করেছিল বাংলাদেশ। সীমিত ওভারে দুটিতেই জিতেছে টাইগাররা। জিম্বাবুয়ে দেশ ছাড়ার আগেই পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে চলে এসেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্যারিবীয়দের দুইটি সিরিজে হারিয়েছে টাইগাররা। টেস্টে ধবলধোলাই করার পর ওয়ানডে সিরিজে জয়। ইতিহাস গড়ার হাতছানি ছিল বাংলাদেশের প্রথমবারের মতো পূর্ণাঙ্গ সিরিজে ত্রিমুকুট জয়ের। কীর্তিটা গড়তে পারেননি সাকিবরা। আশা জাগিয়েও টি-টোয়েন্টি সিরিজে ২-১ ব্যবধানে হেরে গেছেন তারা।

মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে এটাই ছিল প্রান্তসীমায় আসা বছরে বাংলাদেশ দলের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ। পরশু সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে ৫০ রানে জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কুড়ি ওভারের ক্রিকেট বলে টাইগারদের হারের ব্যবধানটা বিশালই বলতে হবে। ‘অলিখিত ফাইনালে’ জয়-পরাজয় ছাপিয়ে পাদপ্রদীপে উঠে এলো আম্পায়ারিং বিতর্ক। পরশু মিরপুরে তৃতীয় তথা শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে কী নাটকটাই না হলো ‘নো’ বল নিয়ে।

নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্রে বাংলাদেশি আম্পায়ার তানভীর আহমেদ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং ইনিংসে চতুর্থ ওভারে ওশান টমাসের বলে দুটি ‘নো’ বল ডাকেন তিনি। তন্মধ্যে একটিতে ক্যাচ তুলে আউটও হয়েছিলেন লিটন দাশ। ক্ষুব্ধ, হতাশ ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক কার্লোস ব্র্যাথওয়েট রিভিউ চেয়েও পাননি। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় দুবারই টমাসের পায়ের গোড়ালি দাগের মধ্যে ছিল। ওই ওভারের আগে ও পরে আরো দুটি বিতর্কিত সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন আম্পায়ার তানভীর। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচেও এভিন লুইসকে এলবি আউট দিয়েছিলেন তিনি। পরে টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় লুইসের ব্যাট ছুঁয়ে বল প্যাডে লেগেছিল।

সিলেটের সেই হাস্যকর ভুলটা আরেকবার সামনে চলে আসল পরশুর ম্যাচের কারণে। এদিন প্রতিবাদী হয়ে উঠেছিল গোটা ক্যারিবীয় শিবির। তাদের নেতৃত্বে থাকলেন ব্র্যাথওয়েট। ৮ মিনিট খেলা বন্ধও ছিল। মাঠে নেমে এসেছিলেন তৃতীয় ও চতুর্থ আম্পায়ার। ম্যাচ রেফারিও এলেন। ২২ গজে আসার অপেক্ষায় থাকা বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও এলেন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সেই আলোচনায় যোগ দিলেন। নাটক শেষে ফ্রিহিট দিয়ে পুনরায় বল মাঠে গড়ায়। টমাসের ‘নো’ বল বহাল থাকে।

এই বিরতির আগে ১৯০ রানের জবাবটা দারুণভাবেই দিচ্ছিল বাংলাদেশ। ওই বিরতিটাই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে শেষ পর্যন্ত। খেলা শুরু হলেও টাইগাররা ছন্দটা ধরে রাখতে পারেনি। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট খুইয়েছে টাইগাররা। ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে স্টিভ রোডস জানিয়েছেন অপ্রত্যাশিত ওই বিরতিই ম্যাচের গতির পাল্টে দিয়েছে। তবে হারের জন্য আম্পায়ারদের কাঁধে দোষ চাপাননি ইংলিশ কোচ। আম্পায়ারদের দোষারোপ করেননি ম্যাচ শেষে সাংবাদিক বৈঠকে আসা ক্যারিবীয় অধিনায়ক ব্র্যাথওয়েট।

কিন্তু তার বলা কথায় মিশে থাকল ক্ষোভ, হতাশা, আক্ষেপ। ব্র্যাথওয়েট বলেছেন, ‘এই সিরিজে ৫০-৫০ কোনো সিদ্ধান্তই ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে আসেনি। আমি এটা ম্যাচ রেফারিকেও জানিয়েছি। যখন আমরা প্রাপ্যটা পাব তখন তো আমরা এটা জানাতেই পারি। আমি এটা বলছি না যে আম্পায়াররা পক্ষপাতিত্বের জন্য প্রতারণা করতে মাঠে নামেন। অধিনায়ক হিসেবে আমি চেষ্টা করেছিলাম ছেলেদের শান্ত রাখতে। কারণ এই দলটা খুব তরুণ। আমি তাদের এমন পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিতে পারিনি। আমরা দেশের জন্য খেলি, আবেগ ছুঁয়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক।

যার দিকে অভিযোগের আঙুল সেই তানভীর নিজের ক্যারিয়ারের তো বটেই, ক্ষতি করেছেন দেশের ক্রিকেটেরও। অতীতেও সাকিব এবং তামিমের সঙ্গে বাকবিত-ায় জড়িয়েছিলেন তিনি। যিনি ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো আম্পায়ার হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছিলেন। পুরস্কার হিসেবে গত নভেম্বরেই ২০১৮-১৯ মৌসুমের জন্য আইসিসির প্যানেলে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। কিন্তু পরশুর ম্যাচে তার বাজে আম্পায়ারিং বিস্মিত করেছে সবাইকে। যাকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে সেই তানভীর বুঝতে পেরেছেন নিজের ভুল। তিনি বলেছেন, ‘নো বলের ক্ষেত্রে দাগ ও পা অনেক কাছাকাছির বিষয় থাকে। আর দ্রুত লাফ দিলে অনেক সময় বুঝতে একটু সমস্যা হয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমি নতুন। আমি ভুল করেছি। তবে খেয়াল করে দেখবেন পেছনে আমার কোনো বাজে ইতিহাস নেই। একটা ভুল হয়েছে। ইনশাআল্লাহ ভালোভাবে ফিরে আসব। প্রতিটি মানুষেরই ভালো দিন, খারাপ দিন যায়। গতকাল (শনিবার) আমার খারাপ দিন গেছে।’

সিরিজের শেষটা বিতর্কে ঠাসা হলেও এখান থেকে বাংলাদেশ দলের বেশকিছু প্রাপ্তিও আছে। দ্বিতীয় ম্যাচে টাইগাররা পেয়েছে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ দ্বিতীয় সংগ্রহ। ওই ম্যাচে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ৫ উইকেটে পেয়েছেন সাকিব। বল হাতে তিনি আলো ছড়িয়েছেন তিনি। সিরিজজুড়ে অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। পুরস্কার হিসেবে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি র‌্যাঙ্কিংয়ের সেরা চারে উঠে এসেছেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার জেপি ডুমিনিকে পেছনে ফেলেছেন মাহমুদউল্লাহ। যদিও সাকিব তালিকায় আছেন সেরা দ্বিতীয় অলরাউন্ডার হিসেবে।

সাকিব আরো বড় পুরস্কার পেয়েছেন সিরিজ সেরা হয়ে। টেস্টের পর টি-টোয়েন্টি সিরিজের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারে তিন ফরমেট মিলিয়ে এ নিয়ে ১৩ বার সিরিজ সেরা হয়েছেন সাকিব। তার চেয়ে বেশি সিরিজ সেরা আছেন মাত্র দুজন। শচীন টেন্ডুলকার (১৯) এবং জ্যাক ক্যালিস (১৪)। পরশু সাকিব ছুঁয়ে ফেলেছেন সমান ১৩ বার সিরিজ সেরা হওয়া বিরাট কোহলি এবং সনাৎ জয়সুরিয়াকে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close