ক্রীড়া প্রতিবেদক

  ২৭ নভেম্বর, ২০১৮

পারবেন তো তাইজুল?

অভিষেক টেস্টে বাজিমাত করেছেন নাঈম হাসান। সবচেয়ে কম বয়সী বোলার হিসেবে অভিষেকে পাঁচ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েছেন এই উঠতি তরুণ। ছয় উইকেট তুলে নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় ইনিংস প্রায় একাই ধসিয়ে দিয়েছেন নাঈম। তবে ক্যারিবীয়দের প্রথম ইনিংস গুঁড়িয়ে দিয়েছেন তাইজুল ইসলাম। টানা তিন ইনিংসে পাঁচ উইকেট শিকারের নজির গড়েছেন বাঁ-হাতি এই স্পিনার।

৩০ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে তার দিকেই তাকিয়ে থাকবে বাংলাদেশ। শুধু আগের ম্যাচের পার্শ্ব নায়কদের একজন বলে নয়। দুর্দান্ত এক রেকর্ডের হাতছানি তাইজুলের সামনে। বছরের সেরা উইকেট শিকারি হতে পারবেন কিনা, এই প্রশ্নের উত্তর দিতে তাইজুল সুযোগ পাচ্ছেন মাত্র একটি টেস্ট। তাইজুল পারবেন রেকর্ডটা গড়তে?

ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল এখনো চট্টগ্রামে। আজ ফেরার কথা তাদের। বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়েরা অবশ্য আগেই চলে এসেছেন ঢাকায়। কাল কোনো অনুশীলন ছিল না তাদের। চট্টগ্রাম টেস্ট পুরো পাঁচ দিন হলে তো কাল হতো শেষ দিন। বিচ্ছিন্নভাবে যে কয়েকজন মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে এলেন, তাইজুল তাদের একজন। বাড়ির ছাদে শীতের মিষ্টি রোদ গায়ে মেখে যেভাবে আড্ডা হয়, বিসিবি একাডেমি ভবনের সিঁড়িতে বসে সংবাদমাধ্যমের সামনে ঠিক সেভাবেই কথা বললেন বাঁ-হাতি স্পিনার।

কথা শেষে যখন চলে যাবেন, এক সাংবাদিক মনে করিয়ে দিলেন এ বছর টেস্টে সেরা বোলার হওয়ার সুযোগ আছে। তথ্যটা যে তার বেশ জানা, বললেন তাইজুল, ‘হুম, জানি। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা-শ্রীলঙ্কার তো এখনো টেস্ট আছে।’ এ বছর ছয় টেস্টে ৪০ উইকেট নেওয়া তাইজুলের সামনে বছরের শীর্ষ বোলার হওয়ার সুযোগ ভালোমতোই আছে। তাইজুলের লড়াইটা চলছে কাগিসো রাবাদা, জেমস অ্যান্ডারসন ও দিলরুয়ান পেরেরার সঙ্গে। ব্যবধানটা খুব বেশি নয়।

এর মধ্যে অ্যান্ডারসনের (৪৩) উইকেট সংখ্যা আর বাড়ছে না। এ বছর আর তার ম্যাচ নেই। ২০১৮ সালে ৪৬ উইকেট পাওয়া রাবাদা একটি টেস্ট খেলার সুযোগ পাবেন। বক্সিং ডেতে সেঞ্চুরিয়নে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট আছে দক্ষিণ আফ্রিকার। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কলম্বো টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিয়ে পেরেরার উইকেটও হয়ে গেছে ৪৬টি। আগামী ডিসেম্বরে নিউজিল্যান্ড সফরে পেরেরা পেতে পারেন আরো দুই টেস্ট খেলার সুযোগ।

সেখানে তাইজুল পাবেন আর এক টেস্ট। বছরের সেরা হতে তাইজুলকে দুর্দান্ত বোলিং করতে হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টে। গত তিন টেস্টে ২৫ উইকেট তাইজুলের। যে ছন্দে আছেন, তাতে শীর্ষ উইকেট শিকারি হওয়ার সম্ভাবনা অবশ্যই আছে। কিন্তু রাবাদা-পেরেরাদের সমান সুযোগ পান না বলে তার জন্য কাজটা হয়ে গেল বেশি কঠিন।

প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে তিনি টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েছেন একটু কমই। এ বছর তার ৪০ উইকেট এসেছে ছয় টেস্টে। যেখানে অ্যান্ডারসনের ৪৩ উইকেট এসেছে ১২ ম্যাচে। তাইজুল এ বছর যেখানে সাত টেস্ট খেলবেন, সেখানে পেরেরা খেলবেন ১১ টেস্ট, রাবাদা ১০টি। তাইজুলের আক্ষেপ। অবশ্য পরক্ষণেই বলেন, ‘এসব নিয়ে চিন্তা করছি না। ভালো বোলিং করলে কিছু একটা হয়ে যাবে।’ বছরের শীর্ষ উইকেট শিকারি হতে পারবেন কিনা, সেটি অনিশ্চিত থাকলেও বছরটা তার ক্যারিয়ারের সেরা, মানতে দ্বিধা নেই, ‘হুম, সে রকমই তো মনে হচ্ছে।’

তাইজুলের সামনে আরো একটি রেকর্ডের হাতছানি। ২২ টেস্টে পেয়েছেন ৯৪ উইকেট। মিরপুরে ছয় উইকেট পেলেই হয়ে যাবেন টেস্টে বাংলাদেশের দ্রুততম ১০০ উইকেট পাওয়া বোলার। এ কীর্তি নিয়েও ভাবছেন না তাইজুল, ‘এখন আমার মাথায় এত কিছু নেই। ভালো বোলিং করার চেষ্টা করে যাব। প্রথম থেকে যে চিন্তা সেটা কাজে লাগাব। আসলে ভালো বল করলে উইকেট পাওয়ার সুযোগটা বেশি থাকে।’

গত তিন টেস্টে সুযোগটা ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছেন তাইজুল। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুর্দান্ত করেছেন, অনেকে বলতে পারেন সাকিব আল হাসান ছিলেন না বলেই পুরো আলো নিজের দিকে কেড়ে নেতে সুবিধা হয়েছে তাইজুলের। সাকিব ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে খেলেছেন। সেখানেও দুর্দান্ত তাইজুলকে দেখা গেছে। অবশ্য সাকিবের সঙ্গে কিছুতেই তুলনায় যেতে চান না বাঁ-হাতি স্পিনার, ‘এশিয়ায় বলেন বা উপমহাদেশের বাইরে, সাকিব ভাইয়ের সঙ্গে কারো তুলনা করা যায় না। তারপরও সাকিব ভাই থাকার পরও যখন আমি উইকেট পাই, অনেক ভালো লাগে। সাকিব ভাইয়ের মতো হয়তো হতে পারব না, অন্তত কাছাকাছি যেতে পারব। সাকিব ভাই তো সাকিব ভাই-ই। সাকিব ভাইয়ের তুলনা হয় না।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close