শরীফুল রুকন, চট্টগ্রাম
‘বিলাসিতা করার সুযোগ নেই’
একসময় বাংলাদেশের প্রবল প্রতিপক্ষ ছিল জিম্বাবুয়ে। কিন্তু দলটি শক্তির বিচারে পিছিয়ে গেছে অনেকটাই। গত পাঁচ বছরে ঘরে-বাইরে কোথাও জিম্বাবুয়ে হারাতে পারেনি বাংলাদেশকে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মাঠে নামলেই মাশরাফিরা জিতবেনÑ ভক্ত সমর্থকদের মধ্যে বিশ্বাস যেন এ রকমই। তবে এই ধারণাটা পুরোপুরি সঠিক নয় বলে মনে করছেন টাইগারদের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা।
আজ চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে জিম্বাবুুয়ের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। ওই ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে কাল মাশরাফি বলেছেন, ‘এটা ঠিক আগের জিম্বাবুয়ের সঙ্গে এখনকার জিম্বাবুয়ের পার্থক্য আছে। তবে তাদের কোনো জায়গাতেই ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। বিশেষ করে তাদের সব অভিজ্ঞ খেলোয়াড়রা এসেছে। আমরা জানি যে, তারা তাদের বেস্ট খেললে কঠিন হবে। এশিয়া কাপে আমরা যে মানসিকতা নিয়ে খেলেছে, জিম্বাবুয়ে সিরিজেও একই মানসিকতা নিয়ে কাজ করছি। যাতে ভুলটা না করি।’
শক্তির বিচারে জিম্বাবুয়ে সহজ প্রতিপক্ষ কিনা এমন প্রশ্নে বাংলাদেশ দলপতি বলেছেন, ‘প্রতিপক্ষ দল কেÑ সেটা চিন্তা করে খেলা কঠিন। মুশফিক ১৫০ করেছে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে, প্রায় ১০০ করেছে পাকিস্তানের সঙ্গে। তাহলে জিম্বাবুয়ের সঙ্গে তার তো ২০০ করার কথা। ক্রিকেট খেলা কিন্তু ওভাবে হয় না। একেবারে সাধারণ বলে আউট হতে পারেন, মুস্তাফিজ ভালো বোলার, তার তো পাঁচ-ছয়টা করে পাওয়ার কথা, পেয়েছে তো একটা। ক্রিকেট এভাবে হয় না। যেটা হয়, ফর্ম থাকলে চেষ্টা করতে হয় যাতে পেশাদারিত্বটা ধরে রাখা যায়। শরীরের একটা ব্যাপার থাকে, মানসিকতার একটা ব্যাপার থাকে। সমন্বয় না হলে পারফরম্যান্স করা কঠিন হয়ে যায়।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৩৯ রানের মধ্যে ছয় উইকেট হারিয়ে ভালোই চাপে পড়েছিল বাংলাদেশ। পরে ইমরুল কায়েস ও সাইফউদ্দিনের ব্যাটিং দৃঢ়তায় ২৭১ রানের শক্তিশালী সংগ্রহ পায় টাইগাররা। যেখানে
১৪৪ রানে আউট হন ইমরুল। সাইফুদ্দিন করেছেন ৫০ রান। যেটাকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন মাশরাফি, ‘সব সময় যদি আমরা মুশফিক আর রিয়াদে খেলা শেষ করি, বড় মঞ্চে গিয়ে যখন সেটা হবে না, তখন কিন্তু
দল বিপদে পড়বে। সুতরাং এটা এক দিক দিয়ে ভালো যে লেট মিডল অর্ডার ভালো করেছে ওরা রান পেয়েছে।’
আগের ম্যাচ নাজমুল হোসেন অপুর বোলিংয়ে খুশি হয়েছেন মাশরাফি। বলেছেন, ‘প্রথম ম্যাচে অপু খুব ভালো বোলিং করেছে, ভালো দুটি ব্রেক থ্রু এনেছে। সাইফুদ্দিনও খুব ভালো করেছে। এতে তার আত্মবিশ্বাস বাড়বে। এই ধারাবাহিকতা থাকলে দলের অনেক বড় একটা সমস্যার সমাধান হবে। দুটি জায়গায় আমরা অন্যান্য দল থেকে পিছিয়ে ছিলাম। একটা হলো পেস বোলিং অলরাউন্ডার, আরেকটা রিস্ট স্পিনার। সাইফুদ্দিন যদি এভাবে খেলতে পারে, আমরা একটা জায়গায় মেকআপ করতে পারব। এতে আমাদের দলের এক ধাপ উপরে যাওয়ার সুযোগ থাকবে।’
সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু ব্যর্থতার পরও এনামুল হক, লিটন দাসকে টানা সুযোগ দেওয়া হয়েছে। অধিনায়কের নিজেরও বড় ভূমিকা ছিল সেসব সিদ্ধান্তে। তবে অধিনায়কের চাওয়াই যে শেষ কথা নয়, সেটি মনে করিয়ে দেন মাশরাফি, ‘আবার সবার চিন্তা ভাবনাও গুরুত্বপূর্ণ। একা দায়িত্ব নিয়ে খেলানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। যে বলে সে আউট হয়েছে সেটাতে দোষ দেওয়ার কিছু নেই। আমরা নিকট অতীতে সব খেলোয়াড়কে এভাবে সমর্থন করেছি। আবার আমাদের বিলাসিতা করার সুযোগও নেই। তাকে পূর্ণ সমর্থন দিতেই হবে। যত দূর সম্ভব তাকে সহযোগিতা করতে হবে।’
এশিয়া কাপে চোট পেয়ে মাঠের বাইরে ছিটকে গেছেন সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল। দলের অভিজ্ঞ খেলোয়াড়রাও ভুগছেন ইনজুরিতে। চোটের অস্বস্তিতে ভুগছেন অধিনায়ক মাশরাফিও। এ প্রসঙ্গে তার ভাষ্য, ‘আমি তো একটা ফরম্যাটেই খেলি। আমি বিশ্রামে থাকতে পারতাম। তবে এই সিরিজের পর ৩-৪ সপ্তাহ খালি আছে। তবে গ্রোয়েন থেকে সেরে উঠতে আমার একটু সময়ের দরকার। চিকিৎসার দরকার। আমি সেটা ভাবছি। আর বিশ্রামের সময় স্ট্রেঙথের কাজ, ফিটনেস ট্রেনিং ইত্যাদি ঠিকমতো করতে পারলে আশা করি ঠিক হয়ে যাবে।’
"