উপল বড়ুয়া

  ১৯ অক্টোবর, ২০১৮

ডাচ ফুটবলের নবজাগরণ

উত্তেজনা, নাটকীয়তা ও রোমাঞ্চ ও বৈচিত্র্যের জন্য রাশিয়া বিশ্বকাপ স্মরণীয় হয়ে থাকবে অনেকদিন। ২১তম আসর শুরু হওয়ার আগে থেকে ঘটতে থাকে একেকটি স্মরণে রাখার মতো ঘটনা। ল্যাটিন আমেরিকার বাছাইপর্ব উৎরাতে না পারায় ডুবতে বসেছিল আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ স্বপ্ন। শেষ পর্যন্ত লা আলবিসেলেস্তেরা পার হয়েছে লিওনেল মেসি ভেলায়। তবে আপ্রাণ চেষ্টা সত্ত্বেও দীর্ঘ ৬০ বছর দর্শক হয়ে থাকতে হয়েছে চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইতালিকে। আজ্জুরিদের মতো একই ভাগ্য বরণ করতে হয়েছিল ইউরোপের আরেক ফুটবল পরাশক্তি নেদারল্যান্ডসকে।

অথচ একটা সময় ফুটবল বিশ্বে ছড়ি ঘুরিয়েছে ডাচরা। যুগে যুগে কমলা জার্সি পরে ফুটবল বিশ্ব শাসন করেছেন কিংবদন্তি ইয়োহান ক্রুইফ, ডেনিস বার্গক্যাম্প, রুদ খুলিত, মার্কো ভন বাস্তেন, প্যাট্রিক ক্লুইভার্ট, ক্লারেন্স সিডর্ফ, এডগার ডেভিস, রুদ ফন নিস্তলরয়, পাইয়েত কাইজার, ডার্ক কুইত, রবিন ফন পার্সি, ওয়েসলি স্নাইডারের মতো তারকারা। কিন্তু ডাচদের দুর্ভাগ্যই বলতে হবে। বিশ্ব ফুটবলের চোকার বা অভাগা দলটির নাম যে নেদারল্যান্ডস। তিনবার বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেও শিরোপাটা উঁচিয়ে ধরতে পারেনি তারা। তার মধ্যে ১৯৭৪ ও ১৯৭৮ সালে টানা দুইবার ফাইনাল খেলেছে হল্যান্ড। এই তো ২০১০ দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপেও আরিয়েন রোবেন, স্নেইডাররা ইতিহাস সৃষ্টি করতে চলেছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে কমলা জার্সিদের সব স্বপ্ন ধুলিসাৎ করে দেন স্প্যানিশ তারকা আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার গোল।

একসময় ডাচ ফুটবলে আয়াক্স, পিএসভি আইন্দোফেনের মতো ক্লাবগুলো জন্ম দিয়েছিল কিংবদন্তি ফুটবলারদের। তার মধ্যে আয়াক্স ক্লাব ফুটবল শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট মাথায় তুলেছে পাঁচবার। শুধু তাই নয়, টোটাল ফুটবলের জনক বলা হয় নেদারল্যান্ডসকে। ১৯৭৪ সালে ক্রুইফের হাত ধরে ফুটবল বিশ্ব এক নতুন কৌশলের সঙ্গে পরিচয় হয়। টোটাল ফুটবল দিয়ে ফাইনালে উঠে ডাচরা। পরবর্তীতে ক্রুইফ স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনা ডাগ আউটে দাঁড়িয়ে টোটাল ফুটবলের প্রতিফলন ঘটান। আজকের বার্সেলোনার এত সমৃদ্ধির পেছনেও ছিল ডাচ ফুটবলের অবদান। ক্রুইফের মানস শিষ্য পেপ গার্দিওলা পরবর্তীতে সেই কৌশল অবলম্বন করেই একের পর এক শিরোপা জিতেছেন।

বিশ্ব ফুটবলে ডাচদের বড় সাফল্য বলতে ১৯৮৮ সালে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ জয়। বলতে গেলে, ডাচদের স্বর্ণ যুগ শেষ হয়ে গেছে তারপর থেকে। প্রতিভার ছড়াছড়ি থাকলেও গত বিশ্বকাপে দর্শক হয়ে থাকতে হয়েছে তাদের। ২০১১ সালে ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থানে থাকা দলটি ধারাবাহিক ব্যর্থতায় নেমে গেছে ১৭ নাম্বারে। তাও কিছুটা ভালো। গত বছর তো নিজেদের সবচেয়ে খারাপ অবস্থান ৩৬ নাম্বারেও নেমে গিয়েছিল তারা। তবে সেই কঙ্কালসার দেহে কিছুটা মাংস যোগ হচ্ছে। নব জাগরণ ঘটছে ডাচ ফুটবলে।

এই তো গত রোববার, নেদারল্যান্ডস ঘরের মাঠে বিধ্বস্ত করেছে চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জার্মানিকে। কেবল তাই নয়, দুই সপ্তাহ আগে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে ডাচ ক্লাব আয়াক্স রুখে দিয়েছিল জার্মান ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখকে। ডাচদের মূলত নতুনভাবে পুনরায় সংগঠিত করছেন স্বদেশি কোচ রোনাল্ড কোম্যান। কোম্যান নিজেও ছিলেন অসাধারণ ফুটবলার। খেলোয়াড়ি জীবনের অভিজ্ঞতাটা ঢেলে দিচ্ছেন শিষ্যদের কানে। বর্তমানে ডাচদের সবচেয়ে বড় তারকা আরিয়েন রোবেন। বাভারিয়ারন মিডফিল্ডার আগামী বিশ্বকাপে থাকবেন কিনা তা অনিশ্চিত। তবে ভার্জিল ফন ডাইক, মেমফিস ডিপে, রায়ান বাবেল, জিওর্জিনো উইজনালদাম, জাস্টিন ক্লুইভার্ট, ডিলে ব্লাইন্ডদের কাঁধে আস্থাটা রাখতে পারবেন ডাচরা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close