ক্রীড়া ডেস্ক
ক্ষোভের বিস্ফোরণ বিদায়ে
সব বাকযুদ্ধের ইতি টানলেন মেসুত ওজিল। তাও আবার বিস্ফোরক এক ঘোষণায়। জল অনেকদূর গড়ানোর পর অবশেষে জার্মানি জাতীয় দলকে বিদায় বলে দিলেন এই তারকা মিডফিল্ডার।
ওজিল বিতর্কে এসেছিলেন রাশিয়া বিশ্বকাপ শুরুর আগেই। বিতর্কের সূত্রপাত তুরস্ক প্রেসিডেন্ট তায়েপ এরদোয়ানের সঙ্গে ওজিলের বৈঠক পর্ব দিয়ে। যেখানে তুরস্কের রাষ্ট্রপ্রধানকে একটা জার্সি উপহার দেন আর্সেনাল মিডফিল্ডার। সেই মুহূর্তের ছবিটা আবার ফ্রেমবন্দি করার পর তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছেন ওজিল।
যা রীতিমতো ছড়িয়ে পড়েছে সবখানে। ওজিলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে খেলার চেয়ে রাজনৈতিক প্রচারণার কাজে বেশি মনোনিবেশ করে ফেলেছেন। কিন্তু জাতীয় দলের প্রতি তার নিবেদন নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে তাতে রীতিমতো ক্ষুব্ধ ও হতাশ হয়েছেন ওজিল। যেটার শেষ পরিণিতিটা হলো বিস্ময়কর। বর্ণবাদ ও অসম্মানের অভিযোগ এনে পরশু আচমকা জার্মানিকে গুডবাই জানিয়ে দিয়েছেন ওজিল।
শুধু ওজিল একা জনন, ইকেই গান্ডোগানও তুরস্ক প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছিলেন। তাতে বেশ চটেছিলেন জার্মানির রাজনীতিবিদ ও ফুটবলবোদ্ধারা। তাদের সমালোচনার মুখে পড়েন আর্সেনাল মিডফিল্ডার ওজিল। ছেলের এই অপমানের পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন মুস্তাফা। ছেলে ওজিলকে জার্মানি দল ছাড়ার উপদেশ দিয়েছিলেন তিনি। বাবার উপদেশ ও জাতীয় দলের ওপর ক্ষোভ এই দুইটি চূড়ান্ত সমন্বয় ঘটালেন ওজিল। টুইটারে অবসরের ঘোষণা দিয়ে বসলেন ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপজয়ী ফুটবলার।
টুইটারে দুই পৃষ্ঠার অবসরপত্রে অনেক অভিযোগও তুলেছেন ওজিল। তিনি লিখেছেন, ‘আমার কাজ ফুটবল খেলা। কোনো রাজনীতিকের প্রচারণা চালানো নয়। জার্মানি ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন থেকে আমাকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে অনেকেই আমাকে জার্মানি জার্সিতে দেখতে চায় না। তখন নিজেকে অবাঞ্ছিত মনে হয়। মনে হয় ২০০৯ সালে অভিষেকের পর আমার যা অর্জন সব মিথ্যে।’
দলে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে জার্মানি ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রেইনহার্ড গ্রিনডেল বৈষম্যমূলক কথা বলেছেন। তাতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওজিল বলেছেন, ‘গ্রিনডেল ও তার সমর্থকদের চোখে জিতলে আমি জার্মানি। আর যখন হেরে যাই তখন আমি অভিবাসী। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতির কাছ থেকে এমন আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়। আমি তার আচরণে হতাশ কিন্তু আবাক হইনি। গ্রিনডেল আমার মূলদেশ তুরস্ককে অসম্মান করে আমাকে নিয়ে রাজনৈতিক কুৎসা রটিয়েছেন। অনেক হয়েছে আর না।’
ওজিলের অবসরে ঘোষণা দেওয়ার পর খোঁচা মারতে ভুলেননি জার্মানি ক্লাব বায়ার্ন মিইনিখের প্রেসিডেন্ট উলি হোইনেস। বলেছেন, ‘ওজিল তার সেরা খেলাটা ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপে খেলে ফেলেছেন। এই বিশ্বকাপে তিনি খুব বাজে পারফরম্যান্স করেছেন। আর এখন সে এরদোয়ানের সঙ্গে তোলা ওই ছবিটিকে ঢাল হিসেবে দাঁড় করাচ্ছেন। যাতে বিশ্বকাপে সে তার পারফরম্যান্স আড়াল করতে পারেন।’
২০০৯ সালে জার্মানি ফুটবল দলে অভিষেক হয় ওজিলের। জার্মানদের হয়ে ৯ বছরের ক্যারিয়ারে ৯২টি ম্যাচ খেলেছেন এই প্লে-মেকার। সতীর্থদের দিয়ে গোল করানোর পাশাপাশি নিজে করেছেন ২৩টি। জার্মানির হয়ে তার সবচেয়ে বড় অর্জন চার বছর আগে স্বপ্নের বিশ্বকাপ জেতাটা।
"