ক্রীড়া ডেস্ক
সতর্ক ফ্রান্স আত্মবিশ্বাসী ক্রোটরা
দুই বছর আগে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের তীরে এসে তরি ডুবেছিল ফ্রান্সের। সেন্ট ডেনিসের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে অতিরিক্ত সময়ের গোলে পর্তুগালের কাছে হেরে যায় স্বাগতিক শিবির। অতি মাত্রার আত্মতুষ্টিতে ভোগার কারণেই নাকি ২০১৬ ইউরো বিশ্বকাপের ফাইনালে হেরেছিল ফরাসিরা।
দুই বছরের ব্যবধানে আরো একটি ফাইনালে ওঠেছে ফ্রান্স। এবারের মঞ্চটা আরো বড়। বিশ্বকাপের ফাইনাল। মহাগুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে আর ভুলটা করতে চায় না সাবেক চ্যাম্পিয়নরা। এ জন্য মানসিকতাতেও বদল এনেছে ফ্রান্স। দলটির আক্রমণভাগের সারথি অলিভার জিরার্ড এমনটিই জানালেন।
আগামীকাল রাশিয়া বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার মুখোমুখি হবে ফ্রান্স। ওই ম্যাচের শুরুর একাদশে থাকার কথা জিরার্ডের। মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে এই লড়াইয়ে নামার আগে সতীর্থদের সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘এবারের প্রেক্ষাপটটা ভিন্ন। আমরা ইউরোর সেমিফাইনালে জার্মানিকে হারিয়ে একটু বেশিই খুশি হয়েছিলাম। ফাইনালে আমরা জিতে যাব এমনটাও ধরে নিয়েছিলাম। কিন্তু এবার সেই ভুলের পুনরাবৃত্তি করতে চাই না আমরা। আমাদের মানসিকতায় বদল এসেছে।’
নক আউট পর্বে তিনটি জায়ান্ট দলকে বিদায় করে এসেছে ফ্রান্স। আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে ও বেলজিয়ামকে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে দিয়েছে ফরাসিরা। এবার দুই দশক আগের সোনালি অতীত ফেরাতে মরিয়া হয়ে ওঠেছে ফ্রান্স। যেকোনো মূল্যে এই সুযোগটা কাজে লাগাতে চান জিরার্ড। বলেছেন, ‘এটা অন্যরকম একটা অনুভূতি। আমরা জানি এখনো আমাদের একটা ম্যাচ জিততে হবে। সে লক্ষ্যে আমরা পুরোপুরি ফাইনালের দিকে মনোনিবেশ করছি এবং আমাদের মধ্যে একাগ্রতা কাজ করছে। এখানে আসতে আমাদের অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। এবার আমরা সুযোগটা নষ্ট করতে চাই না।’ আগামী রোববার রাতের ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষের ম্যাচে এগিয়ে রাখা হচ্ছে ফ্রান্সকে। কিন্তু নিজেদের ফেভারিট ভাবতে নারাজ জিরার্ড। বলেছেন, ‘ফাইনালে দুই দলই একই সময় খেলবে। সুযোগ আছে দুই দলেরই। তাই ফ্রান্সকে ফেভারিট বলাটা ভুল হবে। ক্রোয়েশিয়া মানসিকভাবে খুবই শক্তিশালী দল। সেরা দল হিসেবেই ফাইনালে ওঠেছে তারা।’
এই বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত পাঁচ ম্যাচ খেললেও একটিতেই গোলের দেখা পাননি জিরার্ড। ফাইনালে গোল পাওয়ার জন্য আশাবাদী হয়ে ওঠেছেন তিনি। তবে ফ্রান্স চ্যাম্পিয়ন হলে গোল না পেলেও খুশি থাকবেন এই ফরওয়ার্ড। বলেছেন, ‘আমি দলের জন্য চেষ্টা করছি। গোল না পেলেও তিনটিতে অবদান রেখেছি। চেষ্টা করব ফাইনালে গোল করার। কিন্তু যদি আমরা চ্যাম্পিয়ন হই তাহলে না পেলেও আমি খুশি থাকব।’
ফরাসিদের সেই সুযোগটা দিতে চাইবে না ক্রোয়েশিয়া। প্রথমবারের মতো স্বপ্নের ফাইনালে ওঠা দলটি শিরোপা ছাড়া ফিরতে চায় না দেশে। ক্রোটরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য কতটা মরিয়া সেটা বলে দিচ্ছে নকআউট পর্বের ম্যাচগুলোতে তাদের হার না মানার মানসিকতা। শেষ তিনটি ম্যাচেই ১২০ মিনিট খেলেছে ক্রোয়েশিয়া। নকআউটের প্রথম দুই ম্যাচ তো টাইব্রেকারে জিতেছে তারা। অদম্য এই মানসিকতাই তাদের এখন স্বপ্ন দেখাচ্ছে।
ক্রোয়েশিয়ার জনসংখ্যা মাত্র ৪১ লাখ। আগামীকাল তারা জিতলে বিশ্বকাপের ইতিহাসে দ্বিতীয় সবচেয়ে কম জনসংখ্যার দেশ হিসেবে চ্যাম্পিয়ন হবে তারা। ক্রোটদের স্বপ্নপূরণ হবে কি না সেটা বলে দেবে সময়। আপাতত এই পর্যন্ত আসার মন্ত্রটা জানালেন ক্রোয়েশিয়া কোচ জøাতকো দালিচ। বলেছেন, ‘এই বিশ্বকাপে তারকানির্ভর দলগুলো তাদের বড় নামের খেলোয়াড়দের ওপর নির্ভর করেছে এবং তারা এখন দর্শক। এখনো টিকে আছে জমাট-ঐক্যবদ্ধ দল, যারা লড়াই করছে। গত এক দশকে এটাই আমাদের সমস্যা ছিল। আমাদের ব্যক্তিগত নৈপুণ্যনির্ভল খেলোয়াড় ছিল কিন্তু কোনো ঐক্য ছিল না। এ কারণেই আমাকে ওই ঐক্য তৈরি করতে হয়েছে।’
দলীয় ঐক্যের দরকার আছে। তবে পুরো দলকে মাঠে এক সুতোয় গেঁথে রাখার কাজটা করেছেন অধিনায়ক লুকা মডরিচ। ক্রোয়েশিয়াকে প্রথমবারের মতো ফাইনালে তুলতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। ক্রোট দলপতি করেছেন দুই গোল, সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন আরো তিনটি। দাপুটে এই পারফরম্যান্সই তাকে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের দৌড়ে এগিয়ে রেখেছে তাকে।
কিন্তু সেরার স্বীকৃতি নয়, মডরিচের ভাবনায় শুধুই ফাইনাল, তার দৃষ্টিসীমায় স্বপ্নের সোনালি ট্রফি। ক্রোট অধিনায়ক বলেছেন, ‘আমি গোল্ডেন বল নিয়ে ভাবছি না। আমাদের ভাবনায় এখন শুধুই ফাইনাল। সতীর্থদের নিয়ে কীভাবে আমরা শিরোপা জিততে পারব এটা নিয়েই ভাবছি।’
"