ক্রীড়া ডেস্ক
ইংল্যান্ডের সেমিফাইনাল দুঃখ
ইংল্যান্ডের আক্ষেপের নাম হতে পারে ‘অপেক্ষা।’ দীর্ঘ ২৮ বছর পর অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে সেমিফাইনালে উঠেছিল থ্রি-লায়নসরা। কিন্তু এবারও ‘অর্ধশতাব্দী’র অপেক্ষার বৃত্তটা ভাঙতে পারল না ইংলিশরা। ১৯৬৬ সালে ঘরের বিশ্বকাপে শেষবারের মতো ফাইনালে উঠা দলটি এবার খুব কাছাকাছি গিয়েও ব্যর্থ হলো লুঝনিকির কাক্সিক্ষত ফাইনাল উঠতে। অথচ রাশিয়া বিশ্বকাপের শেষ চারে উঠেই ফাইনালে উঠার আনন্দ উদ্যাপন করেছিল ব্রিটেনবাসী। কিন্তু দেশের বার, রেস্তোরাঁ ও রাস্তায় আনন্দের বন্যা বইয়ে দেয়া অভিজাত ইংলিশদের মনে আজ যেন কষ্টের কালো ছায়া। তাদের এই আনন্দ মাটি করে দিয়েছে ফুটবলের নতুন পরাশক্তি ক্রোয়েশিয়া।
ইংল্যান্ডকে ফাইনালে তুলতে পারলেই কিংবদন্তি কোচ আলফ রামসের পাশে নাম লেখাতে পারতেন তরুণ ইংলিশ কোচ গ্যারেথ সাউথগেট। কিন্তু তা আর হলো কই। ফুটবল আবেগী ইংলিশদের কষ্টটা লাঘব করতে পারলেন না ৪৭ বছর বয়সী কোচ। এ যেন স্বপ্নের মধ্যে জল ঢেলে দেওয়া। তবে রাশিয়া বিশ্বকাপে ফেভারিট তকমা না থাকা সত্ত্বেও ইংলিশদের শেষ চারে তোলার পেছনে মূল কারিগর তো সাউথগেটই।
ম্যাচ শেষে মুষড়ে পড়া হ্যারি কেন, ডেলে আলি, জর্ডান পিকফোর্ডদের বুকে জড়িয়ে সান্ত¦না দিয়েছেন। কিন্তু ব্যর্থতার কষ্টটাও যে নিজেকেও বহু দিন বয়ে বেড়াতে হবে তা তো জানাই আছে সাউথগেটের। ম্যাচ পরাজয় তো ছিলই, তার সঙ্গে যে বিসর্জন দিতে হলো ফাইনালে যাওয়ার টিকিটটা! এই যন্ত্রণার কথা ম্যাচ শেষে বলেছেন সাউথগেট। আবেগমথিত কণ্ঠে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমরা সবাই একসঙ্গে পরাজয়ের কষ্টটা অনুভব করছি। বাস্তবিকভাবে আমাদের এত দূর আসার কথা ছিল না কিন্তু ভালো খেলে আমরা এখানে এসেছি। এই মুহূর্তে আমাদের ড্রেসিং রুমে পিনপতন নীরবতা ছাড়া কিছুই নেই।’
হারলেও শিষ্যদের প্রশংসা করেছেন সাউথগেট। আসলেই তো দীর্ঘদিন পর গর্ব করার মতো খেলেছিল ইংলিশরা। সাউথগেট আরো বলেন, ‘আমি উল্লেখযোগ্যভাবে আমার খেলোয়াড়দের নিয়ে প্রশংসা করি। আমরা যা কিছু করেছি তার জন্য অত্যন্ত গর্ব করি। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমাদের খেলোয়াড়রা এখন অনেক পরিণত হয়েছে।’
সবকিছু বাদ দিয়ে সেমিফাইনালটা সোনার হরিণ হয়ে থাকল ইংল্যান্ডের জন্য। ইউরো ও বিশ্বকাপ মিলিয়ে পাঁচবার শেষ চার থেকে বিদায় নিতে হয়েছে ফুটবলের জনকদের। কিন্ত পরশু ফাইনালের পথে এক দিয়েই রেখেছিল সাউথগেটের শিষ্যরা। ম্যাচের ৫ মিনিটের মাথায় দুর্দান্ত এক ফ্রি-কিক থেকে ইংল্যান্ডকে এগিয়ে দেন ট্রিপিয়ার। কিন্তু ক্রোয়েশিয়ানদের অতিমানবীয় পারফরম্যান্সের কাছে নতি স্বীকার করতে হলো কেন-আলিদের। আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতা কেনকেও থেমে থাকতে হলো ৬ গোল নিয়ে। কেনকে ফাইনালে উঠতে না পারার কষ্টটা ভুলতে হবে গোল্ডেন বুটের পুরস্কার নিয়ে। আপাতত এই গোলদাতাদের তালিকায় এই টটেনহাম ফরওয়ার্ডের ধারে কাছে নেই কেউ।
ফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হলেও এখনই ঘরে ফিরে যাচ্ছে না ইংলিশরা। ১৪ জুলাই সেন্ট পিটার্সবার্গে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে তারা মুখোমুখি হবে বেলজিয়ামের বিপক্ষে। এই সেন্ট পিটার্সবার্গেই ফ্রান্সের বিপক্ষে হেরে ফাইনালের স্বপ্ন বিসর্জন দিতে হয়েছে বেলজিয়ামকে।
"