ক্রীড়া ডেস্ক
‘এটাই আমাদের স্টাইল’
‘অধিক কিছু জিজ্ঞেস করবেন না আর’ সংবাদ সম্মেলনে এই বাক্য দিয়ে সাংবাদিকদের বুঝিয়ে দিলেন কতটুকু শোকের মধ্যে আছেন বেলজিয়াম কোচ রবার্তো মার্টিনেজ। কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলের বিপক্ষে জিতে নিজেকে দাবি করেছিলেন, বিশ্বের সবচেয়ে গর্বিত মানুষ হিসেবে। গর্ব করার মতোই কাজ করেছিলেন ইডেন হ্যাজার্ড, কেভিন ডি ব্রুইনরা। কিন্তু সেন্ট পিটার্সবার্গের সেমিফাইনালটা দুঃস্বপ্ন হয়েই থাকল মার্টিনেজের জন্য। শেষ পর্যন্ত ফরাসি দুর্গ ভেদ করে দলকে তুলতে পারলেন লুঝনিকির ফাইনালে।
বেলজিয়াম শেষ পরাজয় দেখেছিল দুই বছর আগে। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে সাবেক চ্যাম্পিয়ন স্পেনের বিপক্ষে হারের পর টানা ২৩ ম্যাচ অপরাজিত ছিল দলটি। অবশেষে কালো ঘোড়াদের থামতে হলো সম্রাট নেপোলিয়ানের সেনাবাহিনীর কাছে। একেই হয়তো বলে ‘তীরে এসে তরী ডোবা।’ বিশ্বকাপে গত ৫ ম্যাচের প্রত্যেকটিতে দারুণ জয় পেয়েছে বেলজিয়াম। শেষ ষোলোতে জাপানের বিপক্ষে লিখেছিল অসাধারণ কামব্যাকের গল্প। কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলের মতো পরাশক্তিকে হারিয়ে দীর্ঘ ৩২ বছর শেষ চারে উঠেছিল বেলজিয়ামের সোনালি প্রজন্ম। কিন্তু সোনালি প্রজন্মের দল কখনো বিশ্বকাপ জিততে পারেনি। পরশু সেই অলিখিত বিশ্বাসকে আরেকবার প্রমাণ করে দিল রেড ডেভিলরা।
পরশু মাঠে নামার আগে বেলজিয়ামকে চোখ রাঙাচ্ছিল ইতিহাস। বিশ্বকাপে ফ্রান্সের বিপক্ষে কখনো জয় পায়নি বেলজিয়াম। আর বিদেশি কোচের অধীনে কখনো ফাইনালে উঠেনি কোনো দল। শেষ পর্যন্ত ইতিহাসের পরিসংখ্যানের জুজু কাটানে পারেনি বেলজিয়াম। কিন্তু সামর্থ্যরে বিচারে প্রতিপক্ষের চেয়ে কোনো অংশেই পিছিয়ে ছিল না মার্টিনেজের দল। ম্যাচেও তারা প্রমাণ করেছে সে কথা। পুরো ম্যাচে আধিপত্য নিয়ে খেলার পরও হার বরণ করে নিতে হলো বেলজিয়ামকে। এমন পরাজয়ে স্বাভাবিকভাবে শোকাহত তো হবেনই বেলজিয়ামের স্প্যানিশ কোচ মার্টিনেজ।
শোকাবহের ভেতরই তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘এটা খুব ক্লোজ ম্যাচ ছিল, খুব টাইট ম্যাচ ছিল। ম্যাচে তেমন একটা বড় মুহূর্ত ছিল না। কিন্তু জয় এবং পরাজয়ের মধ্যে পরিস্থিতি বদলে দিয়েছে একটি মৃত বল।’
প্রতিপক্ষের ভূমিকা নিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘আমরা তাদের প্রতি-আক্রমণগুলো রুখে দিয়েছি। বল আমাদের দখলে ছিল। তবে ফ্রান্সের রক্ষণভাগকে কৃতিত্ব দিতে হবে। এবং আমরা তাদের গোলপোস্টের সম্মুখে জাদু দেখাতে পারিনি। এমন সময়ে আবেগ সংযত রাখা সত্যি কঠিন। আপনি হতাশ হবেন কারণ আপনি সেমিফাইনালে হেরে গেছেন।’
পরশু পরাজয়ের আবেগটা ছুঁয়ে গেছে বেলজিয়ামের প্রতিটি খেলোয়াড়কে। হারলেও প্রতিপক্ষ যে তাদের চেয়ে ভালো ছিল না তা জানিয়ে দিলনে অধিনায়ক হ্যাজার্ড, ‘ফ্রান্সের সঙ্গে জয় পাওয়ার চেয়ে আমি বেলজিয়ামের সঙ্গে হেরে যেতে রাজি আছি। আমরা খুব সুন্দরভাবে খেলেছি। এবং এটাই আমাদের স্টাইল। এই ম্যাচে আমাদের আরো অধিক কিছু প্রাপ্য ছিল।’ আর বেলজিয়াম গোলরক্ষক থিবু কোর্তোয়া বলেন, ‘আমি মনে করি, আমরা এমন একটা দলের বিপক্ষে হেরেছি যা আমাদের চেয়ে ভালো ছিল না।’
"