উপল বড়ুয়া

  ১১ জুন, ২০১৮

ইব্রাকে ছাড়াই সুইডেনের স্বপ্নযাত্রা

সুইডেন বিশ্বকাপের অন্যতম পরিচিত মুখগুলোর মধ্যে একটি। বিশ্বকাপের দ্বিতীয় আসর থেকে নিয়মিতভাবে অংশগ্রহণ করে আসছে সুইডিশরা। এবার রাশিয়ায় নিজেদের ১২তম বিশ্বকাপ খেলবে তারা। বিশ্বকাপে ব্রাজিল-জার্মানির মতো শিরোপা জিততে না পারলেও সাফল্যের ঝুড়িটা কম সমৃদ্ধ নয় স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশটির। শ্রেষ্ঠত্বের আসরে সুইডিশরা পরিচিত তাদের পরিচ্ছন্ন ফুটবলের জন্য। তাছাড়া বর্তমান ফুটবল শক্তির বিচারেও দেশটি পেয়েছে পরাশক্তির খেতাব।

সুইডিশরা রাশিয়া বিশ্বকাপের টিকেট পেয়েছে প্লে-অফের ম্যাচে চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইতালিকে হারিয়ে। আর তাতে দীর্ঘ ৬০ বছর পর বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে উঠতে ব্যর্থ হয়েছে আজ্জুরিরা। ইতালিয়ানদের চোখে সুইডিশরা এখন জাতীয় শত্রু।

সুইডেন বিশ্বকাপে এসেছে ইউরোপের কঠিন বাছাই পর্ব পার হয়ে। গ্রুপে তারা পেয়েছিল সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নস ফ্রান্স, তিনবারের রানার্সআপ নেদারল্যান্ডস, বুলগেরিয়া, লুক্সেমবার্গ ও বেলারুশকে। গ্রুপটিকে ‘ডেথ গ্রুপ’ও বলা হচ্ছিল। সেই বাধাটি তারা পার হয়েছে নির্ভীক চিত্তে।

১৯৩০ বিশ্বকাপে সুইডেন ফিফার আমন্ত্রণ পেলেও আয়োজক দেশ উরুগুয়েতে খেলতে যায়নি। তবে ১৯৩৪ ইতালি বিশ্বকাপে এসেই তারা তাক লাগিয়ে দেয় বিশ্বকে। অভিষেক ম্যাচেই গত আসরের রানার্সআপ দল আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে দেয় ৩-২ গোলে। সেবার নীল-হলুদরা জার্মানির বিপক্ষে হেরে যাওয়ায় ঘরে ফিরে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে।

পরের আসরে সুইডেন নিজেদের ক্ষমতাটা আবার দেখিয়ে দেয় বিশ্বকে। একধাপ এগিয়ে তারা উঠে যায় সেমিফাইনালে। ১৯৩৮ বিশ্বকাপে সুইডেন পায় নিজেদের বিশ্বকাপ ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জয়। শেষ আটে তারা ৮-০ গোলে হারায় কিউবাকে। তবে হাঙ্গেরির বিপক্ষে ফাইনালে উঠার লড়াইয়ে পেরে উঠেনি দেশটি। ৫-১ গোলে হেরে সুইডেন বিশ্বকাপ অভিযান শেষ করে চতুর্থ হয়ে।

কিন্তু দমবার পাত্র নয় সুইডিশরা। ১৯৫০ বিশ্বকাপে এসে এবার আরেকধাপ এগিয়ে তৃতীয় হয়ে আসর শেষ করে দেশটি। কিন্তু ক্রমান্বয়ে উন্নতি করতে থাকা সুইডিশদের হঠাৎ ছন্দপতন ঘটে। বাছাই পর্ব পার হতে না পারায় ১৯৫৪ বিশ্বকাপে দর্শক হয়ে থাকতে হয় তাদের।

১৯৫৮ বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ হওয়ার গৌরব অর্জন করে সুইডেন। বারবার ব্যর্থ হওয়ার বদলা নিতে উঠে পড়ে লাগে দেশটি। গত দুইবারের ব্যর্থতা ঘুচিয়ে প্রথমবারের মতো উঠে যায় ফাইনালে। কিন্তু ঘরের মাঠে খুব কাছাকাছি যাওয়ার পরও শিরোপা বঞ্চিত থাকতে হয় নীল-হলুদদের। ফাইনালে তারা ব্রাজিলের বিপক্ষে হেরে যায় ৫-২ গোলে। এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে সুইডেনের এটিই সবচেয়ে বড় সাফল্য।

নিজেদের ইতিহাসে বড় সাফল্য পাওয়ার পরপরই কালো অধ্যায় শুরু হয় সুইডেনের ফুটবলে। বাছাই পর্ব পার হতে না পারায় টানা দুই বিশ্বকাপে দর্শক হয়ে থাকতে হয় তাদের। ১৯৭০ বিশ্বকাপে ফিরলেও বাদ পড়ে গ্রুপ পর্ব থেকে। এরপর ১৯৭৪ ও ১৯৮২ বিশ্বকাপ খেলেছে দেশটি। কিন্তু বলার মতো তেমন কোন গল্প তৈরি করতে পারেনি এক সময়ের সমীহ জাগানিয়া দলটি।

শরীরে জং ধরা দলটি আরেকবার গা ঝাড়া দিয়ে উঠে ১৯৯৪ বিশ্বকাপে। সুইডিশরা পেয়ে যায় থমাস ব্রোলিন, মার্টিন ডাহলিন, কেনেথ অ্যান্ডারসনদের নিয়ে গড়া তাদের ইতিহাসের সেরা দলটি। এই প্রতিভাবান ফুটবলারদের ওপর ভর করে সুইডেন আরেকবার উঠে যায় শেষ চারে। কিন্তু সেমিতে তাদের হতাশ হতে হয় সেবারের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলের বিপক্ষে।

গত ২০০২ ও ২০০৬ বিশ্বকাপে বেশ ভালো শুরুর পরও দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে বাদ পড়তে হয়েছে সুইডেনকে। এরপর থেকে টানা দুই বিশ্বকাপে নেই তারা। সেই অপেক্ষাটা ঘুচিয়ে এবার নতুন দিনের স্বপ্ন দেখছে দেশটি। বিশ্বকাপের আগে প্রস্তুতিটাও সেরে নিয়েছে সুইডেন। নিজেদের শেষ তিন ম্যাচে তারা পেয়েছে একটি জয় ও দুই ড্র।

সদ্য প্রকাশিত ফিফা র‌্যাংঙ্কিংয়ে একধাপ পিছিয়েছে সুইডেন। বর্তমানে তাদের অবস্থান ২৪তম অথচ গতবছর মার্চ পর্যন্ত তাদের অবস্থান ছিল নিজেদের সর্বনিম্ন ৪৫ নাম্বারে। রাশিয়া বিশ্বকাপে সুইডেন খেলবে স্বদেশি কোচ জেন অ্যান্ডারসনের অধীনে।

অ্যান্ডারসনের দলে এবার জায়গা হয়নি সুইডেনের সর্বকালের সেরা তারকা জøাতান ইব্রাহিমোভিচের। ২০১৬ ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের পর জাতীয় দল থেকে অবসর নিয়েছিলেন ইব্রা। তাকে ছাড়ায় ইউরোপের বাছাই পর্ব পার করেছে অ্যান্ডারসনের দল। পরবর্তীতে জাতীয় দলে ফিরে বিশ্বকাপে খেলার ইচ্ছেটা জানিয়েছিলেন দুর্দান্ত ফর্মে থাকা এই এলএ গ্যালাক্সি ফরওয়ার্ড। কিন্তু সেই আশাটা পূরণ হচ্ছে না তার। সুইডিশ ফুটবল ফেডারেশন সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ইব্রাকে ছাড়াই বিশ্বকাপ খেলবে সুইডেন। ইব্রা থাকলে আসরটা আরো রঙিন হতে পারতো, তা সহজেই অনুমেয়।

ইব্রার পরিবর্তে কোচ আস্থা রাখছেন মার্কাস বার্গের উপর। ৫৫ ম্যাচে ১৮ গোল করা এই ৩১ বছর বয়সী ফরওয়ার্ডই এখন দলটির প্রধান অস্ত্র। তাছাড়া মিডফিল্ডে সেবাস্তিয়ান লারসন ও ভিক্টর ক্লায়েসনের মতো ফুটবলার আছে দলটিতে।

আসন্ন বিশ্বকাপে সুইডেন ‘এফ’ গ্রুপে প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছে গত আসরের চ্যাম্পিয়ন জার্মানি, মেক্সিকো ও দক্ষিণ কোরিয়াকে। বাছাইপর্বের মতো আরেকটি ‘ডেথ গ্রুপে’ পড়েছে তারা। দেখার বিষয়, বিশ্বকাপে নিজেদের হারানো ঐতিহ্যটা ফিরিয়ে আনতে পারে কিনা সুইডিশরা। ১৮ জুন দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করবে অ্যান্ডারসনের দল।

তথ্য সূত্র : উইকিপিডিয়া, ফিফাডটকম

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist