উপল বড়ুয়া
পর্তুগালের স্বপ্নসারথি রোনালদো
বিশ্বকাপ মানে বিশ্বসেরা ফুটবল তারকাদের আসর। নির্বাচিত ৩২ দল থেকে সেরা খেলোয়াড়রা খেলতে আসে এই টুর্নামেন্টে। এবার রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলবে মোট ৭৩৬ জন ফুটবলার। এর মধ্যে শ্রেষ্ঠ ও আলোচিত খেলোয়াড় আছেন অনেকজন। কিন্তু তারকা খ্যাতিতে সবার ওপরে আছেন পর্তুগাল উইঙ্গার ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরাদের একজন এই ফুটবলার এরই মধ্যে উঠে গেছেন কিংবদন্তিদের কাতারে।
ক্লাবের হয়ে লিগ শিরোপা, চ্যাম্পিয়নস লিগসহ কত শিরোপা জিতেছেন। তাছাড়া ব্যক্তিগতভাবে হয়েছেন পাঁচবার বর্ষসেরা ফুটবলার। আর্জেন্টাইন ফরওয়ার্ড লিওনেল মেসি ছাড়া আর কেউ তার পাশে নেই। কিন্তু একটা স্বপ্ন অধরা রয়ে গেছে সিআর সেভেনের। পর্তুগালের হয়ে একবারও বিশ্বকাপ জেতা হয়নি তার। তবে গত ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে সেই আক্ষেপ কিছুটা গুছিয়েছেন এই রিয়াল মাদ্রিদ উইঙ্গার। এমনিতে নিজেকে কিংবদন্তিদের কাতারে নিয়ে গেছেন, বিশ্বকাপটা নিজের করে নিতে পারলে পেলে-ম্যারাডোনাদের পাশে স্থান পাবেন রোনালদো।
পর্তুগাল বিশ্বকাপ জিতেনি ঠিক তবে জন্ম দিয়েছে ইউসেবিও, লুইস ফিগো, রোনালদোদের মতো ফুটবল কিংবদন্তিদের। পর্তুগাল বিশ্বসেরাদের টুর্নামেন্টে প্রথম প্রবেশ করে ১৯৬৬ ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে। প্রথমবার এসেই দ্য নেভিগেটর্সরা তাক লাগিয়ে দেয় বিশ্বকে। গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে হাঙ্গেরির বিপক্ষে হারলেও ইউসেবিওর একক নৈপুণ্যে বুলগেরিয়া ও গত আসর চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলকে হারিয়ে তারা উঠে যায় কোয়ার্টার ফাইনালে। এরপর শেষ আটে হারিয়ে দেয় দক্ষিণ কোরিয়াকে। ফাইনালে উঠার লড়াইয়ে পর্তুগাল মুখোমুখি হয় আয়োজক দেশ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। কিন্তু স্বাগতিকদের বিপক্ষে আর পেরে উঠেনি ইউসেবিওরা। হেরে যায় ২-১ গোলে।
কিন্তু এরপরই দুর্যোগ নেমে আসে পর্তুগালের ফুটবলে। ইউসেবিওর বিদায়ের পর টানা চার বিশ্বকাপে দর্শক হয়ে থাকতে হয় পর্তুগিজদের। ১৯৮৬ বিশ্বকাপে ফিরে এলেও ঘরে ফিরে প্রথম রাউন্ড থেকে। এরপর ইউরোপের বাছাই পর্ব পার হতে না পারায় আরো তিন বিশ্বকাপে দর্শকের ভূমিকায় থাকতে হয় দেশটির।
আসা-যাওয়ার মাঝে পর্তুগাল তৃতীয় বিশ্বকাপ খেলে ২০০২ সালে। সেবারও তাদের ঘরে ফিরতে হয় গ্রুপ পর্ব থেকে। ২০০৬ জার্মানি বিশ্বকাপে নিজেদের সোনালি অতীতটা আরেকবার মনে করিয়ে দেয় দেশটি। লুইস ফিগো, ডেকো ও রোনালদোদের নিয়ে গড়া দলটি দ্বিতীবারের মতো উঠে যায় সেমিফাইনালে। কিন্তু শেষ চারে তাদের কপাল পুড়ে ফ্রান্সের বিপক্ষে। এরপর থেকেই দলটি টানা তৃতীয় ও নিজেদের সপ্তমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলবে রাশিয়ায়।
জার্মানি বিশ্বকাপে ফ্রান্সের বিপক্ষে হারটা রোনালদো-ন্যানিরা নিয়েছে গত ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে। আয়োজক দেশ ফ্রান্সকে ১-০ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো ইউরোপ শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা ঘরে তুলেছে তারা। নিজেদের ফুটবল ইতিহাসে এটিই তাদের বড় সাফল্য। এবার ইউরোপ চ্যাম্পিয়নরা তার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে প্রস্তুত রাশিয়াতেও।
আসন্ন বিশ্বকাপে পর্তুগাল খেলবে স্বদেশি কোচ ফার্নান্দো সান্তোসের অধীনে। এক সময় জাতীয় দলের এই ফুটবলার সামলেছেন দলের রক্ষণভাগ। তার অধীনেই ইউরোপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে পর্তুগাল। এবার দলকে বিশ্বশ্রেষ্ঠ খেতাব এনে দেওয়াকে পাখির চোখ করেছেন তিনি। ফেভারিট হিসেবেই রাশিয়া যাবে সান্তোসের দল।
ফিফা র্যাঙ্কিংয়েও ভালো অবস্থানে আছে পর্তুগাল। সদ্য প্রকাশিত ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে আগের ৪ নাম্বার অবস্থানটা ধরে রেখেছে দ্য নেভিগেটর্সরা। গত এপ্রিলেই নিজেদের সর্বোচ্চ ৩ নাম্বারে উঠে এসেছিল তারা।
বিশ্বকাপে দলটির স্পটলাইটটা থাকবে রিয়াল উইঙ্গার রোনালদোর ওপর। কেবল পর্তুগালের নয়, রোনালদো এই মুহূর্তে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ফুটবলারও। গত মাসেই রিয়াল মাদ্রিদের জার্সিতে চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা জিতেছেন তিনি। ১৫ গোল করে হয়েছেন সর্বোচ্চ গোলদাতাও। চলতি বছরের ব্যালন ডি’অর পুরস্কারেরও অন্যতম দাবিদার এই ৩৩ বছর বয়সী উইঙ্গার। আসন্ন বিশ্বকাপে দলের আর্মব্যান্ডও থাকবে রোনালদোর হাতে। এরই মধ্যে একটি মাইলফলকও ছুঁয়ে ফেলেছেন তিনি। পর্তুগালের জার্সিতে খেলে ফেলেছেন সর্বোচ্চ ১৫০ ম্যাচ। ৮১ গোল করে দলের সর্বোচ্চ গোলদাতাও তিনি। রোনালদোর এটি চতুর্থ বিশ্বকাপ।
পর্তুগালের অধিকাংশ ফুটবলার খেলেন ইউরোপের শীর্ষ লিগগুলোতে। প্রাণভোমরা রোনালদো ছাড়াও ম্যাচের স্পটলাইটটা কেড়ে নিতে চাইবেন বার্নাডো সিলভা, পেপে, ব্রুনো ফার্নান্দেসের মতো তারকারা।
এরই মধ্যে বিশ্বকাপের প্রস্তুতিটাও ভালোভাবে ঝালিয়ে নিয়েছে পর্তুগাল। শেষ প্রীতি ম্যাচে সান্তোসের দল আলজেরিয়ার বিপক্ষে পেয়েছে ৩-০ গোলের দাপুটে জয়। রাশিয়া বিশ্বকাপে পর্তুগাল ১৫ জুন প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হবে সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন স্পেনের বিপক্ষে। দুই দলের লড়াইটা আইবেরিয়ান ডার্বি নামেও পরিচিত। ‘বি’ গ্রুপে পর্তুগিজদের অন্য দুই প্রতিপক্ষ হচ্ছে মরক্কো ও ইরান।
তথ্য সূত্র : উইকিপিডিয়া, ফিফাডটকম
"