উপল বড়ুয়া
তারকাঠাসা ফেভারিট ইংল্যান্ড
আর মাত্র ৬ দিন পর শুরু হবে ২০তম ফুটবল বিশ্বকাপ। তার আগে জেনে নেয়া যাক ফুটবলের জন্মটা কোথায় হয়েছিল। অনেকে মনে করেন, ফুটবল খেলার জন্ম প্রাচীন চীনে। আবার কারো মতে জাপানিরাই প্রথম ফুটবল খেলা শুরু করেন। কেউ দ্বিমত পোষণ করে বলেন, ফুটবলের আদি দেশ গ্রেট ব্রিটেন। মুনি যখন অনেক তখন মতভেদও থাকবে অজস্র। তবে আধুনিক ফুটবলের জনক যে যুক্তরাজ্য তা নিয়ে কারো কোনো সন্দেহ নেই।
ফুটবলের জনকরা কিন্তু প্রথম বিশ্বকাপটা খেলেনি। ফিফার আমন্ত্রণ পাওয়া সত্ত্বেও ১৯৩০ বিশ্বকাপের আসরে অংশগ্রহণ করেনি ত্রি লায়নসরা। জাত্যাভিমানী ব্রিটিশরা পরের দুই বিশ্বকাপেও ছিল দর্শক হয়ে। এরপর তো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে দুইটি আসর আয়োজন করতে পারেনি ফিফা। ইংল্যান্ড প্রথম বিশ্বকাপ খেলে ১৯৫০ ব্রাজিল বিশ্বকাপে। আধুনিক ফুটবলের জনকরা কিন্তু সেবার তেমন কোনো সুবিধা করতে পারেনি। বাদ পড়ে গ্রুপ পর্ব থেকে।
ব্রিটিশরা এরপর টানা আরো তিন বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেছে। কিন্তু তন্মধ্যে বড় সাফল্য বলতে ছিল দুইবার কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা। নিজেদের ফুটবল ইতিহাসে যুক্তরাজ্য শ্রেষ্ঠ সাফল্যটা পায় ১৯৬৬ বিশ্বকাপে। সেবার নিজ দেশেই ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থে’র আয়োজন করেছিল দেশটি। গ্রুপ পর্ব থেকেই দুর্দান্ত খেলতে থাকা ব্রিটিশরা প্রথমবারের মতো উঠে যায় ফাইনালে। নিজেদের ইতিহাসের অন্যতম রূপকথাটি লেখার জন্য তারা তখন নিঃশ্বাস দূরত্বে। ফাইনালে পশ্চিম জার্মানির মতো পরাশক্তিকে ৪-২ গোলে হারিয়ে প্রথমবার ও একমাত্র বিশ্বকাপ ঘরে তুলে ব্রিটিশরা।
চ্যাম্পিয়ন দলটি ১৯৭০ মেক্সিকো বিশ্বকাপে যায় ফেভারিট হিসেবে। কিন্তু সেবার তাদের দৌড়টা শেষ করতে হয় শেষ আটে থাকতেই। তারপরই শুরু হয় ব্রিটিশ ফুটবলের অবনমন। ইউরোপের বাছাই পর্ব পার হতে না পারায় টানা দুই বিশ্বকাপে দর্শক হয়ে থাকতে হয় তাদের। ১৯৮২ বিশ্বকাপে ফিরলেও তেমন একটা সুবিধা করতে পারেনি দেশটি। শেষ সেমিফাইনালটাও তারা খেলেছে ১৯৯০ বিশ্বকাপে।
প্রতিটি বিশ্বকাপে অন্যতম ফেভারিট হিসেবে অংশগ্রহণ করে ইংল্যান্ড। কিন্তু বড় মঞ্চে এসেই খেই হারিয়ে ফেলে ত্রি-লায়নসরা। ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপেও শিরোপার অন্যতম দাবিদার ছিল ব্রিটিশরা। কিন্তু অত্যধিক চাপে স্টিভেন জেরার্ড-ওয়েইন রুনির মতো তারকাসমৃদ্ধ দেশটি বিদায় নেয় প্রথম রাউন্ড থেকে। এবার নিজেদের ১৫তম বিশ্বকাপ খেলতে রাশিয়া যাচ্ছে ব্রিটিশরা। এবারও বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিট দল তারা। তরুণ তারকা খেলোয়াড়দের নিয়ে গঠিত দেশটি স্বপ্ন দেখছে দ্বিতীয় বিশ্বকাপ ঘরে তোলার।
ম্প্রতি প্রকাশিত ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ১২তম স্থানে আছে যুক্তরাজ্য। এবং আসন্ন বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড খেলবে গ্যারেথ সাউথগেটের অধীনে। ইতোমধ্যে বিশ্বকাপে জন্য একটি ভারসাম্যপূর্ণ দল ঘোষণা করেছেন এই ৪৭ বছর বয়সী কোচ। চূড়ান্ত দলে আছেন হ্যারি কেন, রহিম স্টার্লিং, মার্কাশ রাশফোর্ড, ডেল আলির মতো তারকা খেলোয়াড়রা। বিশ্বকাপে দলটির প্রধান অস্ত্র হয়ে উঠতে পারেন হ্যারি কেন। সদ্যবিদায়ী মৌসুমে চোটের পরও ৩০ গোল করেছেন এই টটেনহাম ফরওয়ার্ড। তাছাড়া মাঠে ইংল্যান্ডকে নেতৃত্বের ভারটাও থাকবে তার ওপর। কেন ছাড়াও ম্যাচের আলোটা কেড়ে নিতে পারেন জেমি ভার্ডি ও জেস লিঙ্গার্ডের মতো খেলোয়াড়রা।
রাশিয়ায় ব্রিটিশ খেলোয়াড়দের কেবল প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নয়, লড়তে হবে রাশিয়ান দর্শকদের বিপক্ষেও। কারণ বিশ্বকাপের আগেই কূটনৈতিক অবস্থার অবনতি হয়েছে দুই দেশের মধ্যে। রাশিয়া ইতোমধ্যে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে। তবে বিশ্বকাপে এর কোনো প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন দুই দেশের কূটনীতিকরা।
রাশিয়া যাওয়ার আগে নিজেদের প্রস্তুতিটা ভালো করে সেরে নিয়েছে সাউথগেটের শিষ্যরা। গত প্রীতি ম্যাচে নাইজেরিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়েছে ইংল্যান্ড। তার আগে চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইতালির বিপক্ষে ড্র করেছিল ১-১ গোলে। আজ বিশ্বকাপের আগে কোস্টারিকার বিপক্ষে শেষ প্রীতি ম্যাচ খেলবে ব্রিটিশরা।
আসন্ন বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড ‘জি’ গ্রুপে প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছে বেলজিয়াম, পানামা ও তিউনিশিয়াকে। ১৮ জুন ভলগ্রোগ্রাড অ্যারেনায় তিউনিশিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করবে সাউথগেটের দল। কেন স্টার্লিংরা ১৯৬৬ বিশ্বকাপের পুনর্মঞ্চায়ন করতে পারেন কিনা তাই এখন দেখার বিষয়।
তথ্য সূত্র : উকিপিডিয়া, ফিফাডটকম
"