গাজী মো. রাসেল

  ০৬ জুন, ২০১৮

ম্যারাডোনার বিশ্বজয়

বিশ্বকাপের ত্রয়োদশ আসরটি ফুটবল শৈলী, বির্তক সবকিছুর জন্যই চিরস্মরণীয় হয়ে আছে ফুটবলপ্রেমীদের মনে। বহুল আলোচিত বিশ্বকাপটা বসেছিল উত্তর আমেরিকার দেশ মেক্সিকোতে। অথচ বিশ্বমঞ্চ বসার কথা ছিল দক্ষিণ আমেরিকায়। আরেকটু ছোট করে বললে কলম্বিয়াতে। কিন্তু দেশটির সরকার বিশ্বকাপের খরচ বহন করা নিয়ে অপারগতা প্রকাশ করে। রীতিমতো বিপাকে পড়ে যায় ফিফা। তাদের উদ্ধার করে মেক্সিকো। এবং মেক্সিকানরাই প্রথম যে দুবার বিশ্বকাপ আয়োজন করেছিল।

কিন্তু মেক্সিানরা আগ্রহ দেখালেও বিশ্বকাপ আয়োজনে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাদের প্রকৃতি। প্রলয়ঙ্কারী ভূমিকম্প বয়ে যায় দেশটির ওপর দিয়ে। তাতে ব্যাপকভাইে ক্ষয়গ্রস্ত হয় উত্তর আমেরিকার দেশটি। এখানেও বিশ্বমঞ্চ আয়োজন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছিল। কিন্তু সেই দুর্যোগে স্টেডিয়ামগুলোতে বড় ধরণের কোনো ক্ষতি না হাওয়ায় শেষ অবধি সমস্যা হয়নি। অল্প-কদিনের সংস্কারেই খেলা আয়োজনের জন্য ফিট হয়ে ওঠে বিশ্বকাপের ভেন্যুগুলো।

আগের আসরের মতো এবারের বিশ্বকাপেও ২৪টি দল অংশ নেয়। নতুন দল হিসেবে বিশ্বকাপে অংশ নেয় ইরাক, কানাডা ও ডেনমার্ক। বেশ লম্বা বিরতি দিয়ে বিশ্বকাপে প্রত্যাবর্তন ঘটে পর্তুগাল, দক্ষিণ কোরিয়া, উরুগুয়ে এবং হাঙ্গেরির মত দলগুলো। যুদ্ধের কারণে ইরাক ও ইরানকে অবশ্য বাছাইপর্বের ম্যাচগুলো খেলতে হয়েছিল দেশের বাইরে। মেক্সিকোর বিশ্বকাপে শেষ অবধি যারা টিকিট পেয়েছিল তা হলো- মেক্সিকো (স্বাগতিক), ইতালি (চ্যাম্পিয়ন), আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, উরুগুয়ে, প্যারাগুয়ে, কানাডা, ইরাক, দক্ষিণ কোরিয়া, আলজেরিয়া, মরক্কো, বেলজিয়াম, বুলগেরিয়া, ডেনমার্ক, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, হাঙ্গেরি, উত্তর আয়ারল্যান্ড, পোল্যান্ড, মর্তুগাল, স্কটল্যান্ড, সোভিয়েত ইউনিয়ন, স্পেন ও পশ্চিম জার্মানি।

২৪টি দলকে ছয় ভাগে সমানভাবে বিভক্ত করা হয় প্রথম রাউন্ডের জন্য। তবে এবারের আসরটা করা হয় নতুন ফরমেটে। দ্বিতীয় রাউন্ড শুরু হয় নক আউট পর্ব দিয়ে। প্রতিটি গ্রুপ থেকে সেরা দুই দল পরবর্তী রাউন্ডের টিকিট পায় এবং ছয় গ্রুপের তৃতীয় সেরা চারটি দল জায়গা করে নেয় শেষ ষোলোতে।

ছিয়াশির বিশ্বকাপের শুরুটাই ছিল চমকে ঠাসা। চমকের নাম ডেনমার্ক। অভিষেকেই বিশ্বকাপ কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন ডেনিশরা। পশ্চিম জার্মানি, উরুগুয়ে ও স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে নক আউট পর্বে জায়গা করে নিয়েছিল তারা। কিন্তু ডেনিশদের স্বপ্নযাত্রা থেমে গিয়েছিল শেষ ষোলোতেই।

ডেনমার্ক রূপকথা বাদ দিলে বিশ্বকাপটা ছিল শুধুই ডিয়েগো ম্যারাডোনার। শতাব্দীর সেরা গোল এবং বিতর্কিত গোলের জন্য বিখ্যাত হয়ে উঠেছিল মেক্সিকো বিশ্বকাপ। মেক্সিকোর আসরে নায়ক এবং খলনায়ক দুটোই দুই চরিত্রেই হাজির হয়েছিল আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি। আর্জেন্টিনা পুরো দলই ছিল ম্যারাডোনা নির্ভর। যদিও গ্রুপপর্বে অনেকটা নিষ্প্রভ ছিলেন তিনি। সেটাই বোধহয় ঝড়ের পূর্বাভাস হয়ে থাকল।

অবশ্য দলীয় পারফরম্যান্সে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে নক আউট পর্বে উঠেছিল আর্জেন্টিনা। গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে ম্যারাডোনার গোলে ইতালির সঙ্গে ড্র করে ল্যাটিন দলটি। পরে নক আউট পর্বে মহাদেশীয় প্রতিবেশী উরুগুয়েকে ১-০ গোলে কোয়ার্টার ফাইনালে নাম লেখায় আর্জেন্টিনা। সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হয় আর্জেন্টিনা। শেষ আটের সেই মাচটাই ইতিহাসের অন্যতম সেরা ম্যাচগুলোর একটি হয়ে থাকবে।

ম্যাচের ৫১ ও ৫৫ মিনিটে দুটি গোল করেছিলেন। দুটো গোলই ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিয়েছে। তবে একটা ইতিবাচক এবং আরেকটা নেতিবাচক অর্থে। প্রথম গোলটি নাকি ফকল্যান্ড যুদ্ধের প্রতিশোধ হিসেবেই দেখেন ফুটবলপ্রেমীরা। যেভাবেই হোক ইংল্যান্ডের সাথে ম্যাচটি জিততে মরিয়া আর্জেন্টিনা অধিনায়ক ম্যারাডোনা রেফারিকে ফাঁকি দিয়ে হাত দিয়ে গোল করে বসেন। যদিও পরে ম্যারাডোনা এটাকে ‘ঈশ্বরের হাত’ বলে দাবি করেন। তার এই গোল নিয়ে বিতর্কটা সম্ভবত আজীবন থাকবে ফুটবলে।

বহুল সমালোচিত গোলটার চার মিনিট পরই ফুটবল দুনিয়া দেখল বিশ্বকাপের ইতিহাসের সেরা গোলটা। ‘শতাব্দীর সেরা’ গোলটা করার পথে ম্যারাডোনা ইংল্যান্ডের মিডফিল্ডার, রক্ষণভাগকে যেভাবে ঘোল খাইয়েচেন সেটার বিশেষণ হতে পারে এক কথায় অবিশ্বাস্য। সেরা আটের ব্রাজিল-ফ্রান্সের ম্যাচটাও তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখিয়েছিল।

ফাইনালে ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা মুখোমুখি হয় পশ্চিম জার্মানি। ম্যাচের শুরুতেই দুই গোল করে এগিয়ে যায় আবিসেলেস্তারা। জার্মানির রুমিনিগে ও ভোয়েলারের গোলে সমতায় ফেরে পশ্চিম জার্মানি। ম্যাচের ৮৪ মিনিটে বুড়িচেগার জয়সূচক গোলের স্বপ্নের বিশ্বকাপ জিতে নেয় আর্জেন্টিনা। ৩-২ গোলে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয় জার্মানদের। ১৯৭৮ সালের পর এক আসর বিরতি দিয়ে আবারো বিশ্ব ফুটবলের ঝান্ডাটা নিজেদের হাতে তুলে নেয় আর্জেন্টিনা। ম্যারাডোনার বিশ্বকাপ উঁচিয়ে ধরার ছবিটি আজ-ও স্মরনীয় হয়ে আছে কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে। ম্যারাডোনা জয় করে নিয়েছেন ফুটবলপ্রেমীদেরও মনও।

তথ্য সূত্র : ফিফাডটকম, উইকিপিডিয়া

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist