গাজী মো. রাসেল

  ০৪ জুন, ২০১৮

আজ্জুরিদের বিশ্বজয়

জনপ্রিয়তার বিচারে ১৯৮২ ইতালি বিশ্বকাপকে বলা হয় ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ।’ ল্যাটিন আমেরিকা ঘুরে বিশ্বমঞ্চ ফিরে আসে ইউরোপে। দ্বাদশ বিশ্বকাপ আয়োজনের শুরুটাই হয়েছিল বিস্ময় দিয়ে। ১৩ জুন বার্সেলোনায় ৪০ মিনিটের জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশ্বকাপে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল স্পেন।

বিশ্বকাপের পরিধি বাড়তে শুরু করে এই টুর্নামেন্ট দিয়েই। দ্বাদশ বিশ্বকাপে অংশ নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করতে ১০৬টি দেশ। কিন্তু ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ও স্বাগতিকদের বাদ দিয়ে মূল পর্বের জন্য ১৪টি দলের নাম চূড়ান্ত করাটা কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠেছিল। অবশেষে বিশ্বকাপে দল বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় ফুটবলের অভিভাবক সংস্থা ফিফা।

তবে বিশ্বকাপের টিকিট বাড়লেও বাছাই প্রতিযোগিতার উত্তেজনা ছিল তুঙ্গে। পরাশক্তি দলগুলোও বাছাই পর্বে উতরাতে কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল। আগের দুই আসরের রানার্সআপ নেদারল্যান্ডস, মেক্সিকো ও উরুগুয়ের মতো তো বাছাই পর্বেই বাদ পড়েছে। চমক হয়ে এলো কুয়েত, হন্ডুরাস, নিউজিল্যান্ড, আলজেরিয়া ও ক্যামেরুনের বিশ্বকাপের মূল পর্বে নাম লেখানোটা।

স্পেন বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া দলগুলো হলো স্পেন (স্বাগতিক), আর্জেন্টিনা (চ্যাম্পিয়ন), ব্রাজিল, চিলি, পেরু, এল সালভাদর, হন্ডুরাস, কুয়েত, আলজেরিয়া, ক্যামেরুন, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, বেজিয়াম, চেকোস্লোভাকিয়া, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, হাঙ্গেরি, ইতালি, উত্তর আয়ারল্যান্ড, পোল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, সোভিয়েত ইউনিয়ন, পশ্চিম জার্মানি, যুগোস্লাভিয়া। দলের সংখ্যা বাড়ায় টুর্নামেন্টের ফরমেটেও আসে পরিবর্তন। ২৪টি দলকে সমান ছয় গ্রুপে বিভক্ত করা হয়। প্রতিটি জয়ে দুই পয়েন্ট এবং ড্র হলে এক পয়েন্ট নির্ধারণ করা হয়। গ্রুপের সেরা দুই দল টিকিট পায় পরের রাউন্ডের। দ্বিতীয় রাউন্ডের ১২টি দলকে পুনরায় তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়। এই রাউন্ডের গ্রুপ সেরা চারটি দল টিকিট পায় সেমিফাইনালের।

স্পেন বিশ্বকাপের শুরুটাই হয়েছিল বড় একটা অঘটন দিয়ে। পশ্চিম জার্মানিকে ২-১ গোলে হারিয়ে দেয় অভিষিক্ত আলজেরিয়া। যদিও প্রথম ম্যাচে হারা জার্মানরা উঠেছিল ফাইনালে। কিন্তু চমক উপহার দিলেও কঠিন সমীকরণটা শেষ অবধি মেলাতে পারেনি আফ্রিকান দলটি। ছিটকে যায় গ্রুপ পর্বেই। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে জার্মানি-অস্ট্রিয়া মুখোমুখি হয়।

জার্মানরা ৩ গোলে জিতলে অবশ্য আশা থাকত আলজেরিয়ার। কিন্তু জার্মানি জিতল ১-০ গোলে। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জার্মানি-অস্ট্রিয়া চলে যায় পরের রাউন্ডে। কিন্তু এই ম্যাচটা বেশ বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল। কারণ অস্ট্রিয়ার স্বপ্ন বাঁচাতে জার্মানির ফুটবলাররা অনেক সুযোগ ইচ্ছাকৃত ভাবেই হাতছাড়া করেছিল। পাতানো সেই ম্যাচটাকে ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নেয় ‘ডিসগ্রেস অব গিজন’ নামে।

গত আসরে চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা এবং ল্যাটিন জায়ান্ট ব্রাজিল ১৯৭৮ সালে মতো একই গ্রুপে পড়ে। আরেক প্রতিপক্ষ ইতালি ক্লাসের ফাস্টবয় হয়ে সেমিফাইনালে চলে যায়। দ্বিতীয় পর্বেই বিশ্বকাপ মিশন শেষ হয় আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের। দ্বিতীয় রাউন্ডে ব্রাজিল বাদ পরলেও তাদের দলটাকে ব্রাজিলের স্বপ্নের দল হিসেবে মনে করে অনেকে। ব্রাজিল দলে সেবার ছিল সক্রেটিস ও জিকোর মতো তারকা খেলোয়াড়। জিকোকে তো বলা হতো ‘সাদা পেলে’।

সেমিফাইনালে প্রথম ম্যাচে পোল্যান্ডকে সহজে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে আজ্জুরিরা। তবে শেষ চারের অপর ম্যাচটি ইতিহাসে সেরা ম্যাচগুলোতে স্থান পায়। দারুণ ফর্মে থাকা ফ্রান্সের তখন ফাইনালের উষ্ণ বাতাস গায়ে লাগতে শুরু করেছিল। তাতেই হয়তো আর ফাইনাল খেলা হলো না মিশেল প্লাতিনির দলের।

ম্যাচের শুরুতে জার্মানির বিপক্ষে গোল হজম করে বসে ফ্রান্স। ২৬ মিনিটে প্লাতিনির গোলে সমতায় ফিরে ফরাসিরা। নির্ধারিত ৯০ মিনিটে ম্যাচের ফল অমীমাংসিত থাকে। খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। অতিরিক্ত সময়ে আরো নাটকীয়তা। দুই দলের মোট ৪ গোল করলে অতিরিক্ত সময়েও ম্যাচ অমীমাংসিত থাকে। পরে ফাইনালের টিকিট নির্ধারণের জন্য আশ্রয় নেয়া হয় টাইব্রেকারের। ভাগ্য নির্ধারণীর স্পট কিকের লড়াইয়ে ৪-৫ গোলে জিতে যায় পশ্চিম জার্মানি। নাটকীয় ম্যাচ হেরে যাওয়া ফ্রান্স শেষ অবধি বিশ্বকাপের চর্তুথ সেরা দল হয়।

মাদ্রিদের সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর ফাইনালে পাওলো রসি, মার্কো তারদেল্লির ইতালির সামনে দাঁড়াতেই জার্মানি। ৩-১ গোলে জিতে বিশ্বকাপ জিতে নেয় ইতালি। আজ্জুরিরা তৃতীয়বার তাদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে।

তথ্য সূত্র : ফিফাডটকম

বিশ্বকাপ ফ্যাক্টস

১৯৮২ বিশ্বকাপ আসরে ১৪ দল থেকে বাড়িয়ে ২৪টি দল করা হয়।

এই আসরে এশিয়া থেকে একমাত্র কুয়েত বিশ্বকাপে অংশ নেয়।

আগের রানার্সআপ নেদারল্যান্ডস মূল পর্বে

অংশ নিতে পারেনি।

ইতালির পাওলো রসি সর্বোচ্চ ৬ গোল করে গোল্ডেন বুট জিতে নেয়।

আলজেরিয়া, ক্যামেরুন, নিউজিল্যান্ড ও হুন্ডরাসের বিশ্বকাপে অভিষেক হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist