উপল বড়ুয়া

  ০৩ জুন, ২০১৮

তিউনিশিয়ার শেষ ষোলোর স্বপ্ন

আফ্রিকার উত্তর উপকূলে ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত দেশ তিউনিশিয়া। দেশটির মধ্য দিয়ে চলে গেছে অ্যাটলাস পর্বতমালা। এছাড়া দেশটির ৪৫% পড়েছে বিখ্যাত সাহারা মরুভূমিতে। তিউনিশিয়ার নামকরণ করা হয়েছে ‘তিউনিস’ থেকে। আর ‘তিউনিস’ নামটি এসেছে বার্বার জাতির ভাষা থেকে। যার অর্থ ‘শৈলন্ত্যরীপ’ বা ‘রাত কাটানোর স্থান।’

এক সময় তিউনিশিয়া ছিল ফ্রান্সের উপনিবেশ। স্বাধীনতা-উত্তর তিউনিশিয়ানরা ফুটবল খেলাটা পেয়েছে ফরাসিদের কাছ থেকে। এরপর ধীরে ধীরে অন্যান্য আফ্রিকান অঞ্চলের মতো দেশটিতেও ফুটবলের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। বর্তমানে দেশটি আফ্রিকার অন্যতম ফুটবল পরাশক্তিও।

এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো রাশিয়া বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করবে তিউনিশিয়া। উত্তর আফ্রিকার দেশটি প্রথম পাঁচ বিশ্বকাপ পর্যন্ত ছিল ফ্রান্সের অংশ। ১৯৫৬ সালে স্বাধীনতার পর থেকে দেশটি ফিফার সদস্যপদ গ্রহণ করে। এবং ১৯৬২ থেকে বিশ্বকাপ খেলার জন্য আফ্রিকা অঞ্চল থেকে বাছাইপর্বে অংশগ্রহণ করে।

দ্য ঈগলস অব কার্থেজরা প্রথম বিশ্বকাপ মূলমঞ্চের টিকিট পায় ১৯৭৮ সালে। তবে স্বপ্নের বিশ্বকাপে বেশি দূর এগোতে পারেনি তারা। তিউনিশিয়ার সোনালি প্রজন্মের দলটি ঘরে ফিরে গ্রুপ পর্ব থেকে। কিন্তু নিজেদের প্রথম ম্যাচেই উড়ন্ত সূচনা করে দেশটি। পিছিয়ে পড়েও শক্তিশালী মেক্সিকোকে হারায় ৩-১ গোলে। পরের ম্যাচে তারা গোলশূন্য ড্র করে গত আসরের চ্যাম্পিয়ন পশ্চিম জার্মানির বিপক্ষে। গ্রুপের তৃতীয় ম্যাচে পোল্যান্ডের বিপক্ষে ০-১ গোলে হেরে যাওয়ায় শেষ ষোলোতে পা রাখতে ব্যর্থ হয় তিউনিশিয়া।

তিউনিশিয়ার আগে বিশ্বকাপে অনেক আফ্রিকান দেশ অংশগ্রহণ করেছিল। কিন্তু মূলমঞ্চে আফ্রিকা থেকে প্রথম জয় পাওয়ার ইতিহাসটা তাদের দখলে। স্বপ্নের বিশ্বকাপ অভিযান শেষের পর তিউনিশিয়ার সোনালি প্রজন্মের ফুটবলাররা একে একে বিদায় নিতে থাকে। এরপরই শুরু হয় দ্য ঈগলস অব কার্থেজদের অবনমন। পরের চার বিশ্বকাপে তাদের খেলা দেখতে হয়েছে দর্শক হিসেবে।

তিউনিশিয়ানদের অপেক্ষার পালাটা ঘুচে ১৯৯৮ ফ্রান্স বিশ্বকাপে। ফিরলেও টানা তিন বিশ্বকাপে একবারের জন্য প্রথম রাউন্ডের বাধা পার হতে পারেনি দেশটি। গত ব্রাজিল বিশ্বকাপেও বাছাই পর্বের দেয়াল পার হতে না পারায় তাদের খেলা দেখতে হয়েছে টিভির সামনে বসে। তবে এবার নতুনভাবে স্বপ্ন দেখছে দেশটি। প্রথমবারের মতো দ্বিতীয় রাউন্ডে যেতে মরিয়া হয়েই মাঠে নামবে তিউনিশিয়ানরা। বাছাই পর্বে দুর্দান্ত খেলে তিউনিশিয়ানরা সেই আশাটা দেখছে এবার।

বর্তমানে ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে দেশটি আছে ১৪ নাম্বারে। এটি র‌্যাঙ্কিংয়ে তাদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ নাম্বারও। তবে ২০১০ দক্ষিণ আফ্রিকার বিশ্বকাপের পর নিজেদের সর্বনি¤œ ৬৫ নাম্বারেও চলে গিয়েছিল।

আসন্ন বিশ্বকাপের জন্য দেশটি এখনো ২৩ সদস্যের চূড়ান্ত দল ঘোষণা করেনি। বিশ্বকাপে বড় কোনো সাফল্য নেই। বিশ্বকাপে তাদের বাজিরদরও ৫০০/১। তবে নিজেদের দিনে যেকোনো পরাশক্তিকে পরাজিত করার সামর্থ্য আছে দেশটির।

রাশিয়া বিশ্বকাপে তিউনিশিয়া খেলবে স্বদেশি কোচ নাবিল মালৌলের অধীনে। মালৌল নিজেও জাতীয় দলের জার্সিতে খেলেছেন এক সময়। সাবেক এই মিডফিল্ডার দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই সফলতা পাচ্ছে দেশটি। বিশ্বকাপে দলটির প্রধান অস্ত্র হতে পারেন মার্শেই মিডফিল্ডার সাইফ-এডিনে খাউই। মূলত দলের আরেক তারকা খেলোয়াড় ইউসুফ মাসাকনির চোটের কারণে সাফল্যের জন্য ভরসা রাখতে হবে সাইফের ওপর। এছাড়া তারকা হয়ে উঠতে পারেন ফরাসি ক্লাব রেঁনে মিডফিল্ডার ওয়াহবি খাজরি। গত মৌসুমে রেঁনের হয়ে তিনি ২৪ ম্যাচে করেছিলেন ৯ গোল।

আসন্ন বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে প্রস্তুতি ম্যাচগুলোতে নিজেদের ভালোভাবে ঝালিয়ে নিয়েছে তিউনিশিয়া। কোস্টারিকাকে ১-০ গোলে হারানোর পর পর্তুগাল ও তুরস্কের বিপক্ষে তারা ড্র করেছে ২-২ গোলে। উত্তর আফ্রিকার দেশটি শেষ প্রীতি ম্যাচিটি খেলবে স্পেনের বিপক্ষে।

রাশিয়া বিশ্বকাপে তিউনিশিয়া ‘জি’ গ্রুপে প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছে বেলজিয়াম, ইংল্যান্ড ও পানামাকে। ১৮ জুন ভলগ্রোগ্রাদে ১৯৬৬ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই বিশ্বকাপ মিশন শুরু করবে দেশটি। দেখার বিষয়, নিজেদের পঞ্চম বিশ্বকাপে ইতিহাস সৃষ্টি করে প্রথম রাউন্ডের বাধা পার হতে পারে কিনা তিউনিশিয়ানরা।

তথ্য সূত্র : উইকিপিডিয়া, ফিফাডটকম

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist