গাজী মো. রাসেল
নতুন ট্রফিতে পুরনো চ্যাম্পিয়ন
তিনবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় জুলে রিমে ট্রফি তথা বিশ্বকাপের আজীবনের স্বত্ব পেয়ে গেছে ব্রাজিল। যদিও ট্রফিটা সুরক্ষিত রাখতে পারেনি সেলেকাওরা। ট্রফিটা থাকলেও ১৯৭৪ বিশ্বকাপের জন্য ঠিকই নতুন করে ট্রফি বানাতে হতো ফিফাকে। অবশেষে তৈরি করা হয় চোখে প্রশান্তি এনে দেওয়া নতুন সোনালি ট্রফি। ১৮ ক্যারেট স্বর্ণ দিয়ে তৈরিকৃত সেই ট্রফিটার জন্য চার বছর পরপ এখনো লড়াই করে যাচ্ছে সারা বিশ্ব।
বিশ্বকাপ এসেছে নতুনরূপে। দুজন মানুষ হাত দিয়ে উঁচিয়ে ধরে রেখেছে সোনালি বিশ্বকে। সুদৃশ্য এই ট্রফিটার নকশা তৈরি করেছিলেন ইতালিয়ান কারিগর সেলভিও গাজ্জানিগা। নতুন এই ট্রফি দিয়েই শুরু ১৯৭৪ বিশ্বকাপ। বিশ্বমঞ্চের দশম আসর বসে পশ্চিম জার্মানিতে। যারা গত বছর ধরে বিশ্বকাপের স্বাগতিক হওয়ার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিল। অবশেষে নিজেদের উঠোনে বিশ্বমঞ্চ সাজানোর সুযোগ পায় তারা। জমজমাট আসরটার সবচেয়ে বড় চমক পূর্ব জার্মানির অংশগ্রহণ ও নেদারল্যান্ডসের ফাইনালে ওঠাটা।
স্বপ্নের টুর্নামেন্টের জনপ্রিয়তা ক্রমেই বেড়ে চলেছিল। দশম বিশ্বকাপে ৯৮টি দেশ অংশগ্রহনের আগ্রহ দেখায়। ফুটবল যে কতটা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রূপ নিয়েছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু বাছাইপর্বে দলের সংখ্যা বাড়লেও মূলপর্বের টিকিট ছিল সেই ১৬টাই। তন্মধ্যে আবার স্বাগতিক ও ডিফেন্ডি চ্যাম্পিয়নদের সরাসরি বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ তো থাকছেই।
বাছাইপর্বে অনেক অঘটনই দেখা গেল। মূলপর্বে জায়গা পায়নি ইংল্যান্ড, মেক্সিকো, স্পেন, পর্তুগাল, বেলজিয়াম, চেকোসেøাভাকিয়া, হাঙ্গেরি, রোমানিয়ার মতো দলগুরো। চমক হয়ে থাকল বিশ্বমঞ্চে পূর্ব জার্মানির অভিষেক। ওটাই তাদের প্রথম এবং শেষ আসর হয়ে থাকল। নাটকীয় বাছাইপর্বের গ-ি পেরিয়ে যায় জাইরি (বর্তমানে কঙ্গো), হাইতি, অস্ট্রেলিয়ার মতো দলগুলোর। আসরে অংশ নেওয়া দলগুলো হচ্ছেÑ পশ্চিম জার্মানি (স্বাগতিক), ব্রাজিল (চ্যাম্পিয়ন), আর্জেন্টিনা, চিলি, উরুগুয়ে, হাইতি, জাইরি, অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, পূর্ব জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, সুইডেন, যুগোসøাভিয়া।
এই ষোলোটি দলকে চার গ্রুপে ভাগ করা হয়। তারপর সেরা আট দলকে দুই ভাগে বিভক্ত করে রবিন লিগ পদ্ধতিতে খেলা হয়। প্রতিটি জয়ের জন্য দুই পয়েন্ট ও ড্রয়ের জন্য এক পয়েন্ট নির্ধারণ করা হয়। গোলের উপরও নেট পয়েন্টেরও ব্যবস্থা রাখা হয়, যা আগের নয় বিশ্বকাপের আসরে ছিল না।
গ্রুপ পর্বেই স্বাগতিক পশ্চিম জার্মানিকে ১-০ গোলে হারিয়ে দেয় প্রতিবেশি পূর্ব জার্মানি। যদিও প্রথম হারটা তাতিয়ে দেয় পশ্চিম জার্মানিকে। শুরুতে অঘটনের শিকার হওয়া স্বাগতিকরা শেষ অবধি জিতে নিয়েছে শিরোপা। চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল ছিটকে গেছে দ্বিতীয় রাউন্ডেই। তৃতীয়স্থান নির্ধারণী ম্যাচেও পোল্যান্ডের কাছে ১-০ গোলে হেরে যায় সেলেকাওরা। আগের আসরের চ্যাম্পিয়নরা হয় চতুর্থ সেরা দল।
বিশ্বকাপের দশম আসরে ফুটবল বিশ্ব দেখেছিল এক নতুন ফুটবল। যা ‘টোটাল ফুটবল’ নামে পরিচিত। ডাচ্দের অসাধারণ ফুটবল শৈলী মুগ্ধ করেছিল বিশ্বকে। কমলা শিবিরের ছিল না নির্দিষ্ট কোনো ডিফেন্ডার বা স্ট্রাইকার। ১১ জনের খেলায় কেউ হঠাৎ করেই রক্ষণভাগ থেকে উঠে গোল করেছেন। কিংবা আক্রমণভাগ থেকে নেমে অনেকে আবার হয়ে উঠেছিলেন বিপদসীমার কা-ারী। দ্বিতীয় রাউন্ডে দুর্দান্ত নেদারল্যান্ডস তিন ম্যাচ জিতে উঠে যায় ফাইনালে।
স্বপ্নের শিরোপা লড়াইয়ে প্রতিপক্ষ হিসেবে আধুনিক ফুটবলের জনকরা পায় স্বাগতিক পশ্চিম জার্মানিকে। ম্যাচের শুরুতে গোল করে এগিয়েও গিয়েছিল ডাচ্ শিবির। কিন্তু ডাচ্ কিংবদন্তি নিসকিন্সের গোলটা বৃথা গেছে। ডাচ্রা হয়তো ভুলে গিয়েছিল আগের বিশ্বকাপের চিরায়িত হয়ে ওঠা নিয়মটা। ফাইনালে আগে গোল করা দলটিই রানার্স-আপ হয় এবং বার্লিনের ফাইনালে হলোও তাই। ব্রিথনের ও জার্ড মুলারের গোলে প্রথমার্ধে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে যায় পশ্চিম জার্মানি। ম্যাচের বাকি সময় গোলখরায় কাটলে জয়ের জন্য এই ফলটাই যথেষ্ঠ হয়ে যায় জার্মানদের জন্য। দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয় তারা।
জার্মানির এই স্বপ্নযাত্রার প্রধান সারথি ছিলেন জার্ড মুলার। তিন বিশ্বকাপে ১৪টি গোল করে তিনি ছাড়িয়ে গেছেন পর্তুগিজ কিংবদন্তি ফন্টেনারকে (১৩ গোল)। তবে ওই আসরে সর্বোচ্চ সাত গোল করে গোল্ডেন বুট জিতেছিলেন গ্রেগ্রোজ লাটো।
তথ্য সূত্র : ফিফাডটকম, উইকিপিডিয়া
"