উপল বড়ুয়া

  ১৩ মে, ২০১৮

নাইজেরিয়ার বিশ্বকাপ অভিযান

২০১১ সালের ঘটনা। বাফুফের আমন্ত্রণে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলুড়ে দুইটি দেশ এসেছিল বাংলাদেশে। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে আয়োজিত এক প্রীতি ম্যাচে আর্জেন্টিনা বনাম নাইজেরিয়া ম্যাচটি দেখার জন্য উপচে পড়েছিল দর্শকদের ভিড়। লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ম্যাচটিতে ১-০ গোলে হেরেছিল নাইজেরিয়া।

বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার সবচেয়ে প্রিয় ও পরিচিত প্রতিপক্ষ হচ্ছে নাইজেরিয়া। বিশ্বকাপ মঞ্চে এই দুই দলের দেখা হওয়াটা যেন নির্ধারিত ব্যাপার। এর বাইরের সাক্ষাৎটাও বেশ রোমাঞ্চকর। গত বছর দুই দলের শেষ প্রীতি ম্যাচটিতে সুপার ঈগলরা আর্জেন্টিনাকে হারিয়েছে ৪-২ গোলে। প্রথম দ্বৈরথটা শুরু হয়েছিল ১৯৯৪ বিশ্বকাপে। সেবার ডিয়েগো ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনাকে ১-০ গোলে হারিয়েছিল আফ্রিকান দেশটি। এবারও ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে ‘ডি’ গ্রুপে আরেকবার দেখা হচ্ছে দুই দলের।

১৯৩০ সালে নাইজেরিয়া অনানুষ্ঠানিক ফুটবল খেলা শুরু করে ব্রিটিশ শাসিত অন্যান্য আফ্রিকান দেশগুলোর বিপক্ষে। তখন দেশটি ব্রিটিশদের কলোনি ছিল। নাইজেরিয়া ফুটবলে বড় সফলতা লাভ করে ১৯৭৩ সালে। সে বছর আয়োজিত দ্বিতীয় অল আফ্রিকা গেমসে স্বর্ণপদক জিতে সুপার ঈগলরা। পরবর্তীতে ব্রিটিশদের স্বাধীনতা লাভের পর দেশের ফুটবলের উন্নতির লক্ষ্যে গঠিত হয় নাইজেরিয়া ফুটবল ফেডারেশন।

আন্তর্জাতিকভাবে নাইজেরিয়া প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সিয়েরা লিওনের বিপক্ষে। ম্যাচটিতে তারা হারে ০-২ গোলে। দলটির সবচেয়ে বড় জয় আসে আফ্রিকার আরেক দেশে ডাহোমেয়ের বিপক্ষে। ১৯৫৯ সালের ম্যাচটিতে তারা জয়লাভ করে ১০-১ গোলে। সবচেয়ে লজ্জাজনক হারটি তাদের উপহার দিয়েছে গোল্ড কোস্ট অ্যান্ড ব্রিটিশ টগোল্যান্ড। ১৯৫৫ সালে ০-৭ গোলে হারতে হয়েছে সুপার ঈগলদের। কিন্তু সেই হারের পর থেকেই ফিনিক্স পাখির মতো জেগে উঠে তারা আফ্রিকার সেরা ফুটবল দেশে পরিণত হয়।

নাইজেরিয়া প্রথম বিশ্বকাপের টিকিট পায় ১৯৯৪। প্রথম বিশ্বকাপে এসেই সুপার ঈগলরা চমকে দেয় বিশ্বকে। গ্রুপ পর্বে শক্তিশালী আর্জেন্টিনা ও গ্রিসকে হারিয়ে উঠে দ্বিতীয় রাউন্ডে। তবে তাদের কোয়ার্টার ফাইনালের স্বপ্ন শেষ করে দেয় সেবারের রানার্স আপ দল ইতালি। রবার্তো ব্যাজ্জিও শেষ মুহূর্তের গোলে কপাল পুড়লেও নাইজেরিয়া তাদের ফুটবল শক্তির জানানটা খুব ভালো করেই দিয়েছিল বিশ্বকে।

১৯৯৮ ফ্রান্স বিশ্বকাপে অপরিবর্তিত দল নিয়ে খেলতে আসে নাইজেরিয়া। সঙ্গে আরেকবার টেনে নিয়ে আসে প্রথম বিশ্বকাপের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স। এবারও তারা বুলগেরিয়া ও প্যারাগুয়েকে হারিয়ে নিশ্চিত করে শেষ ষোলো। কিন্তু তাদের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠার অভিযান থামায় ডেনমার্ক।

আফ্রিকার অঞ্চল থেকে টানা তৃতীয়বার বাছাইপর্ব পার হয়ে ২০০২ জাপান-কোরিয়া বিশ্বকাপ খেলতে আসে নাইজেরিয়া। গ্রুপ পর্বে তারা পায় ফুটবলের তিন পরাশক্তি ইংল্যান্ড, সুইডেন ও আর্জেন্টিনাকে। এবার প্রথম হারের প্রতিশোধটা নিয়ে নেয় আর্জেন্টিনা। গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতার গোলে সুপার ঈগলরা প্রথমবারের মতো প্রথম রাউন্ড থেকেই ছিটকে পড়ে।

২০০৬ জার্মানি বিশ্বকাপটা তাদের খেলা হয়নি বাছাইপর্ব উতরাতে না পারায়। সেবার তাদের পয়েন্ট ব্যবধানে পিছিয়ে থাকায় কপাল পুড়ে অ্যাঙ্গোলার হাতে। অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে নাইজেরিয়া চতুর্থবারের মতো খেলতে আসে ২০১০ দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে। নিজেদের মহাদেশে বিশ্বকাপ অনুুষ্ঠিত হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই ফেবারিট ছিল গ্রিন ঈগলরা। কিন্তু গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচেই আরেকবার তাদের কপাল পুড়ে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনার বিপক্ষে। অনেকটা স্বাগতিক হওয়ার পরও দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠতে ব্যর্থ হয় নাইজেরিয়া।

বিশ্বকাপ ব্যর্থতার পর আরেকটি দুর্যোগ নেমে আসে নাইজেরিয়ার ফুটবলের ওপর। বিশ্বকাপে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্টের অনধিকার হস্তক্ষেপের জন্য দলটির সব ধরনের আন্তর্জাতিক ম্যাচের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে ফিফা। পরে আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে রক্ষা পায় সুপার ঈগলরা।

আগের ব্যর্থতা ভুলে নতুন রূপে ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপ খেলতে আসে নাইজেরিয়া। গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে ইরানের বিপক্ষে ড্র ও দ্বিতীয় ম্যাচে বসনিয়া-হার্জেগোবিনার বিপক্ষে জিতে দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখে দলটি। তৃতীয় ম্যাচে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ২-৩ গোলে হারলেও তৃতীয়বারের মতো শেষ ষোলোতে উঠে সুপার ঈগলরা। তবে এবারও ফ্রান্সের বিপক্ষে হেরে যাওয়ায় অধরা থেকে যায় কোয়ার্টার ফাইনাল।

১৯৯৪ সালে ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে পাঁচে থাকা নাইজেরিয়া বর্তমানে আছে ৪৭ নম্বরে। ১৯৯৯ সালে দলটি ৮২ নম্বরেও নেমে গিয়েছিল। ২১তম রাশিয়া বিশ্বকাপে সুপার ঈগলরা খেলবে কোচ গেরমৎ রোহর অধীনে। আর্মব্যান্ড থাকবে জন ওবি মাইকেলের হাতে। নাইজেরিয়া জাতীয় দলের জার্সি গায়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছেন ভিনসেন্ট এনিয়েমা ও জোসেফ ইয়োবো। দুইজনই খেলেছেন ১০১টি ম্যাচ। ৩৭ গোল নিয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতাদের শীর্ষে আছেন রাশিদি ইয়াকিনি।

রাশিয়া বিশ্বকাপে ‘ডি’ গ্রুপে নাইজেরিয়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে আর্জেন্টিনা, আইসল্যান্ড ও ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে। ১৬ জুন কালিনিনগ্রাদে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই শুরু হবে তাদের বিশ্বকাপ অভিযান। এবারের বিশ্বকাপে নাইজেরিয়া মূলস্তম্ভ হয়ে উঠতে পারেন ভিক্তর মোজেস। সাবেক চেলসি ও লিভারপুলের এই উইঙ্গার বর্তমানে ধারে খেলছেন ওয়েস্ট হামে।

সূত্র : উইকিপিডিয়া, ফিফা ডটকম

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist