ক্রীড়া প্রতিবেদক
রাজ্জাক-সাদমান-মজিদের দিন
বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগের (বিসিএল) আগের রাউন্ডে বল হাতে দ্যুতি ছড়িয়েছেন আবদুর রাজ্জাক। আসরের ষষ্ঠ ও শেষ রাউন্ডেও ছন্দটা ধরে রাখলেন বাঁ-হাতি স্পিনার। কাল খুলনায় তার দুর্দান্ত বোলিং দৃৃঢ়তায় প্রথম দুই সেশনে উত্তরাঞ্চলকে গুটিয়ে দিয়েছে দক্ষিণাঞ্চল। উত্তরাঞ্চলকে ১৮৭ রানে গুটিয়ে দেওয়ার পর ১ উইকেটে ১১৫ রানে প্রথম দিনের খেলা শেষ করেছে উত্তরাঞ্চল।
বল হাতে কালকের দিনের নায়ক রাজ্জাক। ব্যাট হাতে অবশ্য দিনটা রাঙিয়েছেন দুইজন। সামদান ইসলাম এবং আবদুল মজিদ দুইজনই তুলে নিয়েছেন সেঞ্চুরি। এ যুগলের শতকের ওপর দাঁড়িয়ে পূর্বাঞ্চলের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে দলীয় সংগ্রহ ৪০০ ছাড়িয়েছে মধ্যাঞ্চল। দিন শেষে ৪ উইকেটে ৪০৬ রান করেছে মধ্যাঞ্চল।
বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের অনেক রেকর্ড রাজ্জাকের দখলে আছে। কাল আরেকটা রেকর্ডের মালিক বনে গেলেন এনামুল হক জুনিয়রকে পেছনে ফেলে। বাংলাদেশে ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশিবার ৫ উইকেট শিকারের অনন্য কীর্তি গড়েছেন বাঁ-হাতি স্পিনার। ৫৩ রানের বিনিময়ে উত্তরাঞ্চলের ৫ উইকেট তুলে নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের সেরা বোলার রাজ্জাক। এনিয়ে ৩৩ বার ৫ উইকেট শিকার করছেন তিনি।
শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের শুরু থেকেই ধুঁকতে থাকে উত্তরাঞ্চল। চার বছর পর বিসিএলে খেলতে নেমে নিজের দ্বিতীয় ওভারেই ছোবল দেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। সাজঘরে ফেরান জুনায়েদ সিদ্দিককে।
শুরুতে এলোমেলো বোলিং করা কামরুল ইসলাম রাব্বির জায়গায় বোলিংয়ে এসে নিজের দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট পান সাকলাইন সজীব। বাঁ-হাতি এই স্পিনারের লাফিয়ে উঠা বলে পুল করতে গিয়ে রাব্বির হাতে ধরা পড়েন মিজানুর।
১৯তম ওভারে আক্রমণে আসেন রাজ্জাক। জহুরুল ইসলামকে বোল্ড করে উইকেট মেডেন দিয়ে শুরু করেন তিনি। পরের ওভারে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন ধীমান ঘোষকে। দুই বাঁ-হাতি স্পিনার রাজ্জাক ও সাকলাইনের দারুণ বোলিংয়ে ৭৬ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে উত্তরাঞ্চল। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি তারা। শেষ জুটিতে কিছুটা যা প্রতিরোধ গড়ে তোলে উত্তরাঞ্চল। সোহরাওয়ার্দি শুভ ও শফিউল ইসলাম মিলে করেন ৪২ রান। পরে শফিউলকে ফিরিয়ে রেকর্ডবনে যান রাজ্জাক।
উত্তরাঞ্চলকে দ্রুত গুটিয়ে দেওয়ার পর শুরুটা অবশ্য ভালো হয়নি দক্ষিণাঞ্চলের। শুরুতেই সাজঘরে ফিরে যান ওপেনার সৌম্য সরকার। তাকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন শফিউল ইসলাম। পরে দলকে এগিয়ে নেন এনামুল হক ও ইমরুল কায়েস। ৩টি চার ও দুটি ছক্কায় ৫২ রানের ইনিংস খেলে বিদায় নেন এনামুল। ৭টি চার ও এক ছক্কায় ৫১ রানে ফেরেন ইমরুল।
রাজশাহীতে প্রথম দিন শেষে সুবিধাজনক অবস্থায় আছে মধ্যাঞ্চল। স্ট্রোকের ফুলঝুরিতে ১৮২ বলে ১৫৯ রানে অবসর নিয়েছেন মজিদ। দেড় ডজন চারের পাশে ইনিংসে মেরেছেন আধ ডজন ছক্কা। ১১ চার ও ৩ ছক্কায় সাদমান করেছেন ১১২। দক্ষিণাঞ্চলের রান উৎসবের শুরু সাইফ হাসানের ব্যাটে। ৫ চারে ২১ রান করে আউট হন এই ওপেনার। সাদমান ৭ রানে বাইরে চলে যান চোট নিয়ে। মজিদ ততক্ষণে শটের পসরা সাজাতে শুরু করেছেন। ৯ চারে ৫০ করে ফেলেন ৫১ বলেই। ১১৪ বলে মজিদ স্পর্শ করেন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সপ্তম সেঞ্চুরি।
সাদমান শুরু করেছিলেন বরাবরের মতোই ধীরে সুস্থে। ১০০ বলে স্পর্শ করেন ৫০। মজিদের বিদায়ের পর তার ব্যাটেও ওঠে ঝড়। পরের ৫০ করেন ৩৮ বলেই। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সাদমানের এটি পঞ্চম শতক। বিসিএলে আগের ম্যাচে খেলেছিলেন ৯৩ রানের ইনিংস, তার আগের ম্যাচে করেছিলেন সেঞ্চুরি। কাল ১১২ রানে সাদমান সোহাগ গাজীর বলে বোল্ড হন। তবে ৪৯ বলে ৫০ রানে অজেয় থেকে দিন শেষ করেছেন শুভাগত হোম।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
মধ্যাঞ্চল-পূর্বাঞ্চল
মধ্যাঞ্চল ১ম ইনিংস : ৮৯ ওভার, ৪০৬/৪ (সাদমান ১১২, মজিদ ১৫৯ (আহত অবসর), শুভাগত ৫০*; জায়েদ ১/৩৬, সোহাগ ৩/১৪০)।
উত্তরাঞ্চল-দক্ষিণাঞ্চল
উত্তরাঞ্চল ১ম ইনিংস : ৫৮.৩ ওভার, ১৮৭ (মিজানুর ২২, শুভ ৫৯*; মাশরাফি ১/৪৯, রাব্বি ১/৪৩, সাকলাইন ২/২০, রাজ্জাক ৫/৫৩)
দক্ষিণাঞ্চল ১ম ইনিংস: ২৯ ওভার, ১১৫/১ (এনামুল ৫২*, ইমরুল ৫১*; শফিউল ১/২৮)।
"