ক্রীড়া প্রতিবেদক
পূর্বাঞ্চলের ইনিংস হার
দুর্দান্ত শুরুর পরও ইনিংস হার এড়াতে পারল না পূর্বাঞ্চল। কাল ইয়াসিন আরাফাত ও শরিফুল ইসলামের আগুন বোলিং তোপে উত্তরাঞ্চলের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করল পূর্বাঞ্চল। বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগের পঞ্চম রাউন্ডে উত্তরাঞ্চল জিতল ইনিংস ও ২৮ রানে। দারুণ এই জয়ে ৫৮ পয়েন্ট নিয়ে লিগের শীর্ষস্থান আরও দৃঢ় করেছে তারা। ৪০ পয়েন্ট নিয়ে আপাতত দুই নম্বরে রয়েছে পূর্বাঞ্চল।
আগের দিন শতরানের উদ্বোধনী জুটি পাওয়া পূর্বাঞ্চল বৃহস্পতিবার হারায় ২০ উইকেট। প্রতিপক্ষের দারুণ বোলিং আর ব্যাটসম্যানদের বাজে শটের যোগফলে তৃতীয় দিন দুইবার অলআউট হয় দলটি। ইয়াসিন, শরিফুলের বাউন্স আর সুইংয়ের জবাব খুঁজে পাননি ব্যাটসম্যানরা। টিকে থাকার মানসিকতা নিয়ে ব্যাট করেননি তাদের প্রায় কেউই।
মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিনা উইকেটে ১১০ রান নিয়ে খেলা শুরু করে পূর্বাঞ্চল। কিন্তু আগের দিনের দাপুটে ব্যাটিংয়ের কিছুই দেখা যায়নি এদিন। ব্যাটসম্যানরা ব্যস্ত ছিলেন যাওয়া আর আসায়। ৪৯ রান নিয়ে দিন শুরু করা তাসামুল দ্রুত পেয়ে যান ফিফটি। ৭ চারে ৫৬ রান করা এই ডানহাতি ব্যাটসম্যানকে বোল্ড করে ১২২ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন শফিউল ইসলাম।
আগের দিনের আরেক অপরাজিত ব্যাটসম্যান লিটন ও অধিনায়ক মুমিনুল ইসলাম দলকে নিয়ে যান ১ উইকেটে ১৫৪ রানের দৃঢ় অবস্থানে। সেখান থেকে মাত্র ৬৩ রানে শেষ ৯ উইকেট হারিয়ে ফলোঅনে পড়ে পূর্বাঞ্চল। আগের দিন ২ ওভারে ২১ রান দেওয়া ইয়াসিন দারুণ এক স্পেলে লিটন ও মুমিনুলের সঙ্গে আফিফ হোসেন ও অলক কাপালীকে ফিরিয়ে ম্যাচ নিজেদের দিকে নিয়ে আসেন।
আগের দিন ফিফটি পাওয়া লিটন ৬৯ রান করে ধরা পড়েন ফরহাদ হোসেনের হাতে। এলবিডব্লিউ হয়ে যান ২১ রান করা মুমিনুল। দুই অঙ্কে যেতে পারেননি আফিফ ও কাপালী। ইয়াসিনের ছোবলে দিক হারানো পূর্বাঞ্চলকে দ্রুত গুটিয়ে দেন শরিফুল। ১৬ বছর বয়সী বাঁ-হাতি পেসার তিন বলের মধ্যে তুলে নেন মোহাম্মদ আশরাফুল ও জাকের আলীর উইকেট। পরে বিদায় করেন সোহাগ গাজী ও আবু জায়েদকে।
৪১৫ রানের জবাব দিতে নেমে ২১৭ রানে গুটিয়ে যায় পূর্বাঞ্চলের ইনিংস। তাদের পতন হওয়া উইকেটের ৪টি উইকেট নেন শরিফুল। তরুণ বাঁ-হাতি পেসারের এটাই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ইনিংসে সেরা বোলিং। ইয়াসিন ৪ উইকেট নেন ৩৯ রানে।
প্রথম ইনিংসের ভুল থেকে শিখেনি পূর্বাঞ্চল। পরপর দুই বলে লিটন ও মুমিনুলকে ফিরিয়ে শুরুতেই তাদের চাপে ফেলেন শফিউল। এরপর আঘাত হানেন প্রথম ইনিংসের দুই নায়ক ইয়াসিন ও শরিফুল। ৯১ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ভীষণ বিপদে পড়ে পূর্বাঞ্চল। পাল্টা আক্রমণে দ্রুত রান তুলেন সোহাগ গাজী। ওয়ানডে ঘরানার ব্যাটিংয়ে ৩৭ বলে তুলে নেন ফিফটি। তাইজুলকে ছক্কা হাঁকিয়ে পঞ্চাশ স্পর্শ করার পরের বলে বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে হয়ে যান স্টাম্পড।
সোহাগের বিদায়ে ভাঙে ৬৯ রানের জুটি। এরপর বেশিদূর এগোয়নি পূর্বাঞ্চলের ইনিংস। ১৯৮ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করা দলটি গুটিয়ে যায় ১৭০ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে তিনটি করে উইকেট নেন তিন পেসার ইয়াসিন, শরিফুল ও শফিউল। দুই ইনিংস মিলিয়ে ৫৫ রানে ৭ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন ইয়াসিন। শরিফুল ৭ উইকেট নেন ৫৪ রানে।
এদিকে লিগের অন্য ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছেন দক্ষিণাঞ্চল ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ মিঠুন। কিন্তু বঞ্চিত হয়েছেন তুষার ইমরান। এই দুজনের দারুণ ব্যাটিংয়ে শুরুর চাপ কাটিয়ে এগিয়েছে দক্ষিণাঞ্চল। প্রথম ইনিংসের ঘাটতি পুষিয়ে নিয়েছে বড় লিড। তবে সেই রানকে আবার নাগালের বাইরে যেতে দেয়নি মধ্যাঞ্চল। বিসিএলের পঞ্চম রাউন্ডে তাই রাজশাহীতে জমে উঠেছে লড়াই। ৬ উইকেটে ৩৪৮ রান করে বৃহস্পতিবার তৃতীয় দিন শেষ করেছে দক্ষিণাঞ্চল। প্রথম ইনিংসে মধ্যাঞ্চল এগিয়ে ছিল ১১১ রানে। ৪ উইকেট হাতে নিয়ে দক্ষিণাঞ্চল এগিয়ে এখন ২৩৭ রানে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
দক্ষিণাঞ্চল-মধ্যাঞ্চল
দক্ষিণাঞ্চল প্রথম ইনিংস : ১৯১
মধ্যাঞ্চল প্রথম ইনিংস : ৩০২
দক্ষিণাঞ্চল দ্বিতীয় ইনিংস : ৮৩ ওভার, ৩৪৮/৬ (আগের দিন ৫০/১) (এনামুল ৪৫, ইমরুল ৩০, তুষার ৮৮, মিঠুন ১১৮, নুরুল ১৪, জিয়াউর ১৭*, মোসাদ্দেক ২২*; মোশাররফ ৩/৮০, তানবীর ২/৬১)।
উত্তরাঞ্চল-পূর্বাঞ্চল
উত্তরাঞ্চল প্রথম ইনিংস : ৪১৫
পূর্বাঞ্চল প্রথম ইনিংস : (দ্বিতীয় দিন শেষে ১১০/০) ৬৩.২ ওভারে ২১৭ (তাসামুল ৫৬, লিটন ৬৯, মুমিনুল ২১, সাইফ ২০, সোহাগ ১৩; ইয়াসিন ৪/৩৯, শরিফুল ৪/৩৩)
পূর্বাঞ্চল দ্বিতীয় ইনিংস : ৩৮.১ ওভারে ১৭০ (তাসামুল ১৫, সাইফ ৩২, জাকের ১৬, সোহাগ ৫০; শফিউল ৩/২৮, তাইজুল ১/৬৫, শরিফুল ৩/২১, ইয়াসিন ৩/১৬)
ফল : উত্তরাঞ্চল ইনিংস ও ২৮ রানে জয়ী
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : ইয়াসিন আরাফাত
"