ক্রীড়া ডেস্ক

  ১২ এপ্রিল, ২০১৮

রোম সাম্রাজ্যে বার্সার পতন

* দুই লেগ মিলিয়ে ৪-৪ ব্যবধানে সমতা হলেও অ্যাওয়ে গোলের সুবাদে ৩৪ বছর পর সেমিফাইনালে উঠল রোমা।

‘রোম যখন পুড়ছিল নিরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছিলেন।’ তবে এবার রোম জ্বলেনি। পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়েছে বার্সেলোনাকে। পরশু ঘরের মাঠ স্টাডিও অলিম্পিকোয় এএস রোমা পুনরায় স্মরণ করিয়ে দিল রোমানদের বীরত্বপূর্ণ ইতিহাসকে। ন্যু ক্যাম্পে প্রথম লেগে ৪-১ গোলে বিধ্বস্ত হয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বাদ পড়ার আশঙ্কায় ছিল রোমা। সেই দলটাই রূপকথার প্রত্যাবর্তন করল ঘরের মাঠে।

সেমিফাইনালে যাওয়ার জন্য ‘অলৌকিক’ কিছু ঘটাতে হতো তাদের। পরশু ঐতিহাসিক ও অবিশ্বাস্য সেই ম্যাচটাই খেললেন ইউসেবিও ডি ফ্রান্সিসকোর শিষ্যরা। উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে শেষ আটের ফিরতি লেগে বার্সেলোনাকে ৩-০ গোলে বিধ্বস্ত করে ইতিহাস গড়ল ইতালিয়ান ক্লাবটি। দুই লেগ মিলে ৪-৪ ব্যবধানে থাকলেও অ্যাওয়ে গোলের ওপর দাঁড়িয়ে ৩৪ বছর পর সেমিফাইনালে উঠল রোমা।

বার্সেলোনা হয়তো স্বপ্নেও ভাবেনি টুর্নামেন্ট থেকে এভাবে তাদের বিদায় নিতে হবে। এই নিয়ে টানা তিন মৌসুম শেষ আটে থেমে গেল কাতালানদের স্বপ্নযাত্রা। রোমার নিখুঁত এবং সুন্দর ফুটবল কৌশলের কাছে ¯্রফে অসহায় আত্মসমর্পণ হলো মেসি-ইনিয়েস্তাদের। রোম সা¤্রাজ্যে পতন হলো ফর্মে থাকা বার্সেলোনার।

ন্যু ক্যাম্পে নিজেদের ভুলের কারণে দুুই দুইটি আত্মঘাতী গোল হজম করতে হয়েছিল রোমাকে। সেটার মাশুল দিতে হয়েছিল ৪-১ গোলে বিধ্বস্ত হয়ে। পরশু প্রতিপক্ষ বার্সার জাল কাঁপিয়ে যেন শাপমোচন করলেন ড্যানিয়েল ডি রসি এবং কস্টাস মানোলাস। নিজেদের বিপদসীমা আগলে রাখার পাশাপাশি বার্সার রক্ষণদুর্গ গুঁড়িয়ে দিয়েছেন এ যুগল।

ন্যু ক্যাম্পে এডিন জেকোর অ্যাওয়ে গোলটাই রোমাকে তুলে দিয়েছে সেমিফাইনালে। পরশু ঘরের মাঠেও গোল করলেন বসনিয়ান সেনসেশন। ম্যাচের মাত্র ৬ মিনিটের স্টাডিও অলিম্পিকো কাঁপিয়ে দেন সেই তিনিই। ৫৮ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে গত ম্যাচের ভুলটা শোধরান ডি রসি। রোমার তখন পঞ্চমবারের মতো সেমিফাইনালে যাওয়ার স্বপ্ন উঁকি দিচ্ছে। সেমিফাইনাল থেকে তখনো এক গোল দূরে রোমা। ৮২ মিনিটে সেই দূরত্বটা ঘুচিয়ে ফেলে স্বাগতিকরা। কর্নার কিক থেকে মাথায় বল ছুঁয়ে কোনাকুনিভাবে বার্সার জালে বল জড়িয়ে দেন মানোলাস। তাতেই যেন প্রচ- একটা ঝাঁকুনি খেল ইতালিয়ান দুর্গ। উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়লেন সমর্থকরা। রোমার এই উল্লাসটা হতে পারত ২ মিনিট আগেই। কিন্তু স্টিফেন এল সারাওয়েকে দারুণ শটটা রুখে দেন বার্সা গোলরক্ষক মার্ক-টের স্টেগান।

পুরো মেসি নিজেদের হারিয়ে খোঁজা মেসি-ডেম্বেলে-সুয়ারেজদের ঘুম ভাঙল ম্যাচের শেষ দিকে। মুহুর্মুহু আক্রমণ শানান রোম দুর্গে। কিন্তু তাদের সব আক্রমণ নিষ্ফলা করে দেয় স্বাগতিকরা। তাতেই থ্রিলার প্রত্যাবর্তনটার সুন্দর একটা সমাপ্তি হলো রোমার।

চারবারের চ্যাম্পিয়ন ইতালি এবার রাশিয়া বিশ্বকাপে দর্শক। ঐতিহ্যবাহী সিরি’এ লিগও এখন আগের মতো জমজমাট নয়। অন্যদিকে স্প্যানিশ ক্লাবগুলোর হাতে ধরা দিচ্ছে একের পর এক সফলতা। খেলোয়াড়দের বড় অঙ্কও পরিশোধ করছে। ইতালিয়ান ক্লাবগুলো সেই তুলনায় পিছিয়েই পড়ছে দিন দিন। কিন্তু ইতালিয়ান ফুটবল বেঁচে আছে, বার্সাকে গুঁড়িয়ে অস্তিত্বের জানান দিয়েছে তারা।

পরশু রোমার উজ্জীবিত ফুটবল খেলার কারণটাও জানা গেছে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাবেক কোচ স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন আমন্ত্রিত হয়ে খেলা দেখতে এসেছিলেন অলিম্পিকো। সেই সঙ্গে ছিলেন রোমার আরেক কিংবদন্তি ফ্রান্সেসকো টট্টি। মাঠে নামার আগে রোমার খেলোয়াড়দের উজ্জীবনী মন্ত্রটা কানে কানে বলে দিয়েছিলেন এই দুই কিংবদন্তি।

চ্যাম্পিয়নস লিগ ইতিহাসে ফিরতি লেগে এমন অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনের ঘটনা তৃতীয়বার ঘটল। গত মৌসুমে এই বার্সেলোনাও ইতিহাস গড়েছিল। পিএসজির মাঠে ৪-০ গোলে পরাজয়ের পর ফিরতি লেগটা বার্সা জিতেছিল অলৌকিকভাবে ৬-১ গোলে। এক যুগেরও বেশি আগে স্প্যানিশ ক্লাব দিপার্তিভো লা করুণাও এমন ইতিহাস গড়েছিল ২০০৩-০৪ মৌসুমে। সেবার তাদের সেমিফাইনালে প্রতিপক্ষ ছিল ইতালিয়ান জায়ান্ট এসি মিলান। প্রথম লেগে মিলান জয় পেয়েছিল ৪-১ গোলে। কিন্তু দ্বিতীয় লেগে স্প্যানিশ দুর্গে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত হয়ে স্বপ্নযাত্রা থমকে গিয়েছিল সাতবারের ইউরোপ সেরা এসি মিলান।

এএসরোমা ৩

বার্সেলোনা ০

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist