ক্রীড়া প্রতিবেদক
বদলেছে দল বদলায়নি ভাগ্য
দেশে ফিরল বাংলাদেশ
ওয়ানডে ক্রিকেট মানচিত্রে বড় নাম বাংলাদেশ। কিন্তু টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে টাইগাররা নিজেদের হারিয়ে খুঁজেছে এতদিন। সদ্য সমাপ্ত নিহাদাস ট্রফিতে ওয়ানডের মতো উঠতি পরাশক্তিরূপে আবির্ভূত হয়েছে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। কলম্বোয় তিন জাতির সিরিজে বাংলাদেশ যেভাবে খেলেছে তা যে কোনো প্রতিপক্ষ দলের উদ্বেগের বিষয়। তবে কুড়ি ওভারের মাঠের খেলায় টাইগাররা বদলে গেলেও ভাগ্যের লিখন আর খ-াতে পারেননি সাকিব-তামিম-মাহমুদউল্লাহরা। রবিরাতে আরো একটি ফাইনালে হেরে গেছেন তারা।
শেষ ২ ওভারে ৩৪ রানের বড় সম্ভল ছিল বাংলাদেশের সামনে। আগের ওভারে এক রানের বিনিময়ে এক উইকেট তুলে নিয়ে টাইগারদের হাতের মুঠোয় শিরোপা এনে ফেলেছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। রুবেল হোসেনের পরের ওভারে সর্বনাশ, দিলেন ২২। শেষ ওভারে কার্তিকদের লড়াই করে পেওে ওঠেননি সৌম্য সরকার। শেষ বলের ছক্কায় স্বপ্নের সমাধী। আরো একবার তীরে এসে তরী ডোবা। এনিয়ে পাঁচটি ফাইনালে শিরোপার খুব কাছে গিয়ে শূন্য হাতে ফিরে এল বাংলাদেশ। তবে কলম্বোর হারটা ছাড়িয়ে গেছে অতীতের সব দুঃস্বপ্নের ফাইনালকে।
অবশ্য হারলেও বাংলাদেশ দলটার পিঠ চাপড়ে দিতে হচ্ছে। ১৬৬ রানের পুঁজি নিয়েও ভারতের সঙ্গে সাকিববাহিনী যেভাবে লড়াইটা করেছেন সেটা এক কথায় দুর্দান্ত। রোহিত-রায়না-কার্তিকদের চোখ, মুখ আর নাকের পানি এক করে ছেড়েছেন। এই ফরমেটে এই বাংলাদেশকে যে খাটো করে দেখা যাবে না সেটা ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মাও। ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তিনি স্যালুট জানিয়েছেন বাংলাদেশকে। বলেছেন, ‘ওরা ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলে, এটা সব সময়ই ভালো। কখনো কখনো এতে হিতে বিপরীত হয় বটে, যখন সবকিছু আপনার পক্ষে থাকে না। কিন্তু এটাই ওদের ক্রিকেটের ধরন। তারা অবশ্যই দারুণ ভালো একটা দল। গত তিন বছরে আমার দেখেছি ওরা কতটা বদলে গেছে। ওদের বেশ কজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার আছে, যারা উঠতি ক্রিকেটারদের পথ দেখাচ্ছে।’
নিদাহাস ট্রফির আগে টি-টোয়েন্টিতে কখনো দুশো রান করতে পারেনি বাংলাদেশ। গত মাসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সর্বোচ্চ ১৯৩ রান তুলেছিল টাইগাররা। সেই দলটাই সদ্য শেষ হওয়া টুর্নামেন্টে লঙ্কানদের ছুড়ে দেওয়া ২১৪ রানের পাহাড় টপকে গড়েছে ইতিহাস। বিদেশের মাটিতে প্রথমবারের মতো উঠেছে ফাইনালে। পুরো আসরেই চাপের মুখে কখনোই ভেঙে পড়েনি দল। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট যে অধিকাংশ ‘ওয়ানম্যান শো’ নির্ভর হয়ে ওঠে সেটা নিদাহাস ট্রফিতে দেখিয়েছে বাংলাদেশ। মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, সাব্বিরদের প্রতি ম্যাচেই কেউ না কেউ বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছেন ধ্বংসস্তুূপের ওপর। পথ দেখিয়েছেন বাংলাদেশকে। কিন্তু শিরোপা জিততে যে ভাগ্যটাও দরকার সেটা আরো একবার দেখল বিশ্ব ক্রিকেট। বাংলাদেশের পারফরম্যান্স বদলালেও ভাগ্যটা আর বদলাল না। আরো একবার স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় নিথর হয়ে গেছেন সাকিব-তামিমরা।
স্বপ্নভঙ্গের সেই বেদনাকে সঙ্গী করে কাল দেশে ফিরেছে বাংলাদেশ দল। তবে বিমানে চড়ার আগে হোটেলে গিয়ে দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাইলেন ভারত ইনিংসের উনিশতম ওভারে ২২ রান দেওয়া রুবেল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তিনি বলেছেন, ‘ম্যাচ শেষ হওয়ার পর থেকেই খুব খারাপ লাগছে। সত্যি বলতে আমি কখনোই ভাবিনি আমার কারণে বাংলাদেশ দল জয়ের এত কাছে এসেও ম্যাচ থেকে এভাবে ছিটকে যাবে। সবার কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন সবাই।’
কাল বিধ্বস্ত শরীর নিয়ে ঢাকা বিমানবন্দরে পা রেখেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। আগের সবকটা ফাইনাল ভুলে গেলেও পরশুর ম্যাচটা অনেকদিন মনে রাখবেন টাইগার সমর্থকরা। মুশফিকুর রহমান তো বলেই দিলেন কষ্টটা বুকের কোণে রেখে দেবেন। প্রতিপক্ষ ভারত বলেই হয়তো এই দুঃস্বপ্নটা ভুলতে পারবে না বাংলাদেশ। কাঁপাকাঁপা কণ্ঠে মুশফিক বলেছেন, ‘আমাদের সুযোগ ছিল, এই সুযোগটা আমরা হাতছাড়া করেছি। ভারতকে হারানোর সুযোগ বারবার আসে না। শেষ দুটি সুযোগ হারালাম। ইনশা আল্লাহ, কষ্টটা মনে রাখব। এখান থেকে আমরা যেন আরও সামনে এগিয়ে যেতে পারি।’
"