ক্রীড়া প্রতিবেদক
সুপার সিক্সে খেলাঘর-গাজী
কাগজে-কলমে শক্তিশালী দল প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব। দুই বছর আগেও তাদের হাতে ছিল ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের শিরোপা। কিন্তু শিরোপা উদ্ধারের অভিযান তাদের থেমে গেল রবিন রাউন্ডে। কাল শেষ বলে চার হাঁকিয়ে প্রাইম ব্যাংককে হারিয়ে প্রথমবারের মতো ঢাকা লিগের সুপার সিক্সে উঠল খেলাঘর খেলাঘর সমাজ কল্যাণ সমিতি। উত্তেজনার রেণু ছড়ানো ম্যাচে খেলাঘরকে জিতিয়েছেন মাসুম খান। ২৬২ রানের লক্ষ্যটা ২ উইকেট হাতে রেখে নাটকীয় জয় তুলে নেয় খেলাঘর। সুপার সিক্সে খেলাঘরের সঙ্গী হয়েছে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স। একাদশ রাউন্ডের অন্য ম্যাচে প্রাইম দোলেশ্বরকে ১৮৬ রানে গুটিয়ে দেওয়ার পর ৬৭ বল ও ৪ উইকেট বাকি থাকতে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা।
কাল বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ২১ রানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে প্রাইম ব্যাংক। সেখান থেকে দলকে লড়াইয়ের পুঁজি এনে দেওয়ায় সবচেয়ে বড় অবদান আল আমিন জুনিয়রের। মিডল অর্ডার এই ব্যাটসম্যান ৯৬ বলে ১০ চার ও তিন ছক্কায় করেন ৯৪ রান। শেষের দিকে সাজ্জাদুল হক, মনির হোসেন খান ও শরিফুল ইসলামদের ছোট ছোট অবদানে আড়াইশ পার হয় প্রাইম ব্যাংকের সংগ্রহ। ৫৮ রানে ৪ উইকেট নেন খেলাঘরের পেসার মোহাম্মদ সাদ্দাম। বাঁ-হাতি স্পিনার তানভীর ইসলাম ৩ উইকেট নেন ২৮ রানে।
রান তাড়ায় ২৩ রানের মধ্যে দুই ওপেনারকে হারিয়ে শুরুটা ভালো হয়নি খেলাঘরের। দুই ফিফটিতে দলকে লড়াইয়ে ফেরান অমিত মজুমদার (৭১) ও অশোক মেনারিয়া। শেষটায় ঝড় তুলে অসাধারণ এক জয় এনে দেন মাসুম। ২৩ বলে তিনি অপরাজিত থাকেন ৩৬ রানে।
দেলোয়ার হোসেনের করা শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১২ রান। শেষ ৪ বলে ১১। দুটি বাউন্ডারি আর দুটি ডাবলসে কঠিন সমীকরণ মেলান মাসুম। ১১ ম্যাচে সপ্তম জয়ে তিন নম্বরে উঠে এল খেলাঘর। সমান ম্যাচে ষষ্ঠ পরাজয়ের স্বাদ পেল প্রাইম ব্যাংক।
এদিকে আগের ম্যাচের দুঃস্বপ্ন ভুলে ঘুরে দাঁড়িয়েছে আবাহনী। নাজমুল হোসেন শান্তর ক্যারিয়ার সেরা ব্যাটিংয়ে রানের পাহাড় গড়ে জিতল সহজেই। ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিতেও শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাবকে জেতাতে পারলেন না ফারদিন হাসান। দশম রাউন্ডের ম্যাচে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স বিপক্ষে ফতুল্লায় মাত্র ১১৩ রনে অলআউট হয় আবাহনী। সেই ম্যাচ ৮ উইকেট হারা দলটি এবার জিতল তিনশ ছাড়ানো ইনিংস গড়ে। ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের একাদশ রাউন্ডের ম্যাচে ৫৬ রানে জিতেছে আবাহনী। ৩৩৬ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়ায় শাইনপুকুর ৩ উইকেটে করে ২৭৯ রান।
খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে রোববার টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে এনামুল হককে হারায় আবাহনী। দ্বিতীয় উইকেটে সাইফ হাসানের সঙ্গে ১৮৫ রানের জুটিতে দলকে বড় সংগ্রহের ভিত গড়ে দেন শান্ত। মাত্র ৬ রানের জন্য সেঞ্চুরি পাননি সাইফ। ১১৪ বলে খেলা সাইফের ৯৪ রানের ইনিংসটি গড়া ৭টি চার ও ৪টি ছক্কায়।
শান্তর সঙ্গে ৭৫ রানের জুটি গড়ে ফিরে যান নাসির হোসেন। অধিনায়ক ২৪ বলে খেলেন ৪৫ রানের ইনিংস। ম্যাচ সেরা শান্ত শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ১৫০ রানে। ৪৭ বলে পৌঁছান ফিফটিতে। তিন অঙ্কে যান ৯৮ বলে। তার ১২০ বলের ইনিংস গড়া নয়টি করে ছক্কা-চারে। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে শান্ত পেলেন চতুর্থ সেঞ্চুরি। দুই ম্যাচ আগে অগ্রণী ব্যাংকের বিপক্ষে খেলেছিলেন অপরাজিত ১৩৩ রানের ইনিংস। সেটাই ছিল লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে তার সেরা।
রান তাড়ায় সাদমান ইসলামের সঙ্গে ১২৫ রানের উদ্বোধনী জুটিতে দলকে ভালো শুরু এনে দেন ফারদিন। তৌহিদ হৃদয়ের সঙ্গে উপহার দেন আরেকটি শতরানের জুটি। লিগে নিজের পঞ্চম ম্যাচে প্রথম সেঞ্চুরি পেয়ে গেলেন ফারদিন। তিন অঙ্কে যাওয়ার পরপরই চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি। তরুণ উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান ১১৮ বলে ৯ চার ও দুই ছক্কায় করেন ১০৪ রান। ঝড় তোলা হৃদয়কে (৭২ বলে ৮৩) ফেরান মাশরাফি বিন মুর্তজা। অভিজ্ঞ এই পেসার পরে ফেরান আফিফ হোসেনকে। ৩৫ রানে ২ উইকেট নিয়ে আবাহনীর সেরা বোলার মাশরাফি। নাসির ১ উইকেট নেন ৩৪ রানে। ১১ ম্যাচে ৮ জয়ে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে সবার ওপরে রয়েছে আবাহনী। সমান ম্যাচে ষষ্ঠ পরাজয়ের স্বাদ পেল শাইনপুকুর।
"