ক্রীড়া ডেস্ক
ওল্ড ট্রাফোর্ডে সেভিয়ার উৎসব
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড সমর্থকরা এতক্ষণ হয়তো বেন ইয়েদকে শাপান্ত করেই যাচ্ছে। পরশু এই ফরাসি স্ট্রাইকারের জোড়া গোল স্তব্ধ করে দিয়েছে ওল্ড ট্রাফোর্ড স্টেডিয়াম। ইয়েদ নেমেছিলেন বদলি হিসেবে। ইউনাইটেডকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দিতে তার সময় লেগেছে চার মিনিট। ৭৪ মিনিটে দুর্দান্ত এক শটে নিজের প্রথম গোলের পর ৭৮ মিনিটে হেডে বোকা বানায় ডি গিয়াকে। ইউনাইটেড গোলরক্ষকের প্রাণান্ত চেষ্টার পরও হার এড়াতে পারেননি রেড ডেভিলরা। ঘরের মাঠে সেভিয়ার কাছে তারা হেরে গেছে ২-১ গোলে।
পরশু সেভিয়া পেয়েছে ঐতিহাসিক জয়। দীর্ঘ ৬০ বছর পর দ্বিতীয়বারে মতো চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ আট নিশ্চিত করল স্প্যানিশ ক্লাবটি। ১৯৫৭-৫৮ মৌসুমে প্রথমবারের মতো তারা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছিল। তখন চ্যাম্পিয়নস লিগের নাম ছিল ইউরোপীয়ান কাপ। পরশুর জয় সেভিয়া সমর্থকদের কাছে ছিল শিরোপা জয়ের সমান।
ঘরের মাঠ। গ্যালারিতে পরিচিত দর্শক। কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করার জন্য ইউনাইটেডের দরকার ছিল জয়। শেষ ষোলোর প্রথম লেগে সেভিয়ার মাঠে ০-০ গোলে ড্র করে আসার হোসে মরিনহোর শিষ্যরা মাঠে নেমেছিল জয়ের জন্য। কিন্তু সমর্থকদের সামনে উল্টো মাঠ ছাড়তে হলো পরাজয় নিয়ে। ম্যাচ শুরুর প্রথম ১৫ মিনিট পর্যন্ত মারউইন ফেলানি, আলেক্সিস সানচেজ, রোমেলু লুকাকোরা ভালোই আক্রমণ চালাচ্ছিল সেভিয়া রক্ষণভাগে। কিন্তু দিনটি ছিল সেভিয়ার। প্রথমার্ধ থেকেই ম্যাচ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় তারা। দ্বিতীয়ার্ধে তারা আরো শানিত হয়ে উঠে। ইউনাইটেড প্রতিপক্ষের গোলমুখে যেখানে শট নিয়েছে ১৭টি সেখানে সেভিয়া নিয়েছে ২১টি। দুই দলই বেশ কয়েকবার গোলরক্ষকদের পরীক্ষা নিলেও অধিকাংশ শট ছিল গোলপোস্টের বাইরে। কিন্তু সেভিয়ার বেন ইয়েদ ছিল এইদিন। জোড়া গোল কওে সেভিয়াকে এনে দিলেন ঐতিহাসিক জয়। গোল পেতে পারতেন আরো একটি। ৯০ মিনিটে গোলপোস্টে ডি গিয়াকে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি। হ্যাটট্রিক বঞ্চিত হওয়া নিয়ে কোনো আফসোস নেই তার। দলের ঐতিহাসিক জয়ে অবদান রাখতে পেরেই খুশি সেভিয়া স্ট্রাইকার। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের এই মৌসুমে বেন ইয়েদের গোলসংখ্যা দাঁড়াল আটে। ১২ গোল নিয়ে সামনে আছে রিয়াল মাদ্রিদ তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।
ইউনাইটেড কোচ হোসে মরিনহোর হয়তো এইদিন অন্যচিন্তা ছিল। ফরাসি মিডফিল্ডার পল পগবা ছিলেন না মূল একাদশে। ৬১ মিনিটে বেলজিয়ান মিডফিল্ডার ফেলাইনিকে তুলে কোচ মাঠে নামান পগবাকে। কিন্তু ভালো খেললেও ফলাফল গড়ে দিতে পারেননি ইউনাইটেড খেলোয়াড়রা। ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে সেভিয়ার রক্ষণভাগকে চাপে ফেলে মরিনহোর দল। ৮৪ মিনিটে লুকাকুর দুর্দান্ত শটে দুই গোলের ব্যবধান কমায় ইউনাইটেড। এরপর ধারাবাহিক আক্রমণের অভাবে পরাজয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে তারা।
ইউনাইটেডের হারের রাতে জয় পেয়েছে ইতালিয়ান জায়ান্ট এসএস রোমা। দ্বিতীয় লেগে শাখতার দোনেৎস্কের বিপক্ষে তারা জয় পেয়েছে ১-০ গোলে। প্রথম লেগে রোমা হেরে গিয়েছিল ২-১ গোলে। পরশু নিজেদের মাঠে বসনিয়ান ফরোয়ার্ড এডিন জেকোর একমাত্র গোলে শেষ আট নিশ্চিত করেছে ইউসেবিও ডি ফ্রান্সেসকোর শিষ্যরা। ৫২ মিনিটে এডিন জেকো গোলে এগিয়ে যায় রোমা। এরপর ম্যাচে ফিরতে শাখতারের খেলোয়াড়রা আক্রমণ চালাতে থাকে রোমার রক্ষণভাগে। কিন্তু ৭৯ মিনিটে ইভান অরডেটসের লাল কার্ডে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় ইউক্রেনের ক্লাবটি। জয়ের জন্য ড্র হলেও চলত শাখতারের। কিন্তু ১০ জনের দল নিয়ে আর লড়াইয়ে ফিরতে পারেননি তারা। এ্যাওয়ে গোলে শেষ আট নিশ্চিত করেেেছ রোমা।
ফলাফল
ম্যানইউ ১-২ সেভিয়া
*দুই লেগ মিলিয়ে ২-১ গোলে
জিতে শেষ আটে সেভিয়া
এএস রোমা ১-০ শাখতার
*দুই লেগ মিলিয়ে ২-২ গোলে ড্র।
অ্যাওয়ে গোলে শেষ আটে রোমা
"