ক্রীড়া প্রতিবেদক
আরাফাত আগুনে ছাই আবাহনী
অবিশ্বাস্য, অভাবনীয়, অতুলীয় কিংবা অকল্পনীয়। প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে ইয়াসিন আরাফাত যা করলেন সেটার বিশেষণ হতে পারে এ রকম আরো অনেক কিছুই। কাল ঢাকা আবাহনী লিমিটেডকে একাই ধসিয়ে দিয়েছেন বিধ্বংসী এই পেসার। বাংলাদেশ ও ইতিহাসের প্রথম বোলার হিসেবে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে এক ম্যাচে তুলে নিয়েছেন আট উইকেট। ১১ মাস পর চোট কাটিয়ে কি ভয়ঙ্কর রূপেই না ফিরলেন আরাফাত! তার আগুন বোলিং নৈপুণ্যে ২৬.১ ওভারে ১১৩ রানে গুটিয়ে যায় আবাহনীর ইনিংস। জবাবে ১২১ বল ও ৮ উইকেট হাতে রেখে দারুণ জয় তুলে নেয় গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স।
ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে বুধবার টস হেরে ব্যাট করতে নেমে আরাফাতের সুইংয়ে এলোমেলো হয়ে পড়ে আবাহনী। পঞ্চম ওভারে মাত্র ১২ রানের মধ্যে হারায় ৫ উইকেট। দলীয় সর্বোচ্চ ৪৪ রান করেন মনন। ৪০ রান এসেছে মিঠুনের ব্যাট থেকে।
লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে বাংলাদেশের সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড ছিল আব্দুর রাজ্জাকের অধিকারে। ২০০৩-০৪ মৌসুমে ঢাকায় জিম্বাবুয়ে ‘এ’ দলের বিপক্ষে ১৭ রানে ৭ উইকেট নিয়েছিলেন বাঁ-হাতি এই স্পিনার।
অবশ্য রান তাড়ায় গাজীর শুরুটা ছিল নড়বড়ে। ২১ রানের মধ্যে মেহেদি হাসান ও মুমিনুল হক। তবে ফাওয়াদ আলমকে নিয়ে দলকে দারুণ এক জয় এনে দেন অধিনায়ক জহুরুল ইসলাম। ৭৮ বলে ৬টি চার ও একটি ছক্কায় ৫২ রানে অপরাজিত থাকেন জহুরুল। পাকিস্তানের মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান ফাওয়াদ ৭৩ বলে ৩৯ রানে। অবিচ্ছিন্ন তৃতীয় উইকেটে দুই জনে গড়েন ৯৩ রানের জুটি। ১০ ম্যাচে তৃতীয় হারের স্বাদ পেল আবাহনী। ১৪ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে রয়েছে তারা। সমান ম্যাচে পঞ্চম জয়ে ১০ পয়েন্ট নিয়ে আপাতত পাঁচ নম্বরে উঠে এসেছে গাজী।
এদিকে মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাবকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব। শাইনপুকুরের ২৫২ রানের লক্ষ্য ২০ বল বাকি থাকতে পেরিয়ে যায় সাবেক চ্যাম্পিয়নরা।
কাল আগে ব্যাট করতে নেমে ৩৬ রানে দুই উইকেট হারিয়ে শুরুটা ভালো হয়নি শাইনপুকুরের। সাদমান ইসলাম (৪৪) ও উদয় কাউলের (৫২) ব্যাটে শুরুর ধাক্কা সামাল দেয় শাইনপুকুর। এক সময়ে তাদের স্কোর ছিল ৪ উইকেটে ১৯৩ রান। শেষে প্রত্যাশিত ঝড় তুলতে পারেননি দলটির কেউই। ৫৮ রানে শেষ ৬ উইকেট হারানো শাইনপুকুর গুটিয়ে যায় ২৫১ রানে। জবাব দিতে নেমে মেহেদি মারুফের ৪১ ও আল আমিন জুনিয়রের ৩৫ রানের পরও ১২৭ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে প্রাইম ব্যাংক। ইউসুফ পাঠানের সঙ্গে ৭৮ রানের জুটিতে দলকে দুইশ রানে নিয়ে যান নাহিদুল। অবিচ্ছিন্ন ষষ্ঠ উইকেটে দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে ৫১ রানের জুটিতে দলকে নিয়ে যান জয়ের বন্দরে। ৭৮ বলে ৬টি চার ও একটি ছক্কায় ৭৩ রানে অপরাজিত থাকেন নাহিদুল। দারুণ ইনিংসে মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। ১০ ম্যাচে পঞ্চম জয় পেল প্রাইম ব্যাংক। সমান ম্যাচে পঞ্চম হারের স্বাদ পেল শাইনপুকুর। ওদিকে বিকেএসপিতে অগ্রণী ব্যাংকতে ৩ উইকেট হারিয়েছে প্রাইম দোলেশ্বর। অগ্রণী ব্যাংকের ২০৩ রান ২২ বল বাকি থাকতে পেরিয়ে যায় দোলেশ্বর।। আগে ব্যাট করতে নেমে ৫৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলা দলটিকে দুইশ রানে নিয়ে যান শামসুল ইসলাম ও ইসলামুল আহসান। ৬৪ রানে অপরাজিত থাকেন শামসুল। তার সঙ্গে ৮৩ রানের জুটি গড়া আহসান করেন ৪৬ রান।
জবাবে শুরুটা শুরুটা ভালো হয়নি দোলেশ্বরের। ৪০ রানে তিন উইকেট হারানো দলটি একশ পেরুতেই হারায় মার্শাল আইয়ুবকে। ফরহাদ হোসেনের সঙ্গে ৬৪ রানের জুটিতে ম্যাচ দলের মুঠোয় নিয়ে আসেন জোহাইব। ৭১ বলে ৪৯ রান করে ফরহাদের বিদায়ের পর দ্রুত ফিরে যান শরিফউল্লাহ। দলকে জয়ের খুব কাছে নিয়ে ফিরেন জোহাইব।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
অগ্রণী ব্যাংক-প্রাইম দোলেশ্বর
অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব : ৫০ ওভারে ২০৩/৭ (আজমির ৩০, ধাওয়ান ২৪, শামসুল ৬৪*, আহসান ৪৬, রাজ্জাক ৫*; শরিফউল্লাহ ৩/৩৫, জোহাইব ৩/৩৭, মামুন ১/২৪)
প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাব : ৪৬.২ ওভারে ২০৪/৭ (সায়েম ১৬, মাহমুদ ১১, মার্শাল ৪২, ফরহাদ ৪৯, জোহাইব ৪১, শরিফউল্লাহ ১০, শাহানুর ১০*; শফিউল ২/২৫, রাজ্জাক ২/৩৪, আহসান ১/২৭, জাভেদ ১/১৫)
ফল : প্রাইম দোলেশ্বর ৩ উইকেটে জয়ী
ম্যাচ সেরা : জোহাইব খান
শাইনপুকুর-প্রাইম ব্যাংক
শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব : ৪৯.৫ ওভারে ২৫১ (সাদমান ৪৪, সাব্বির ২৬, কাউল ৫২, হৃদয় ৩৯, আফিফ ২৪, সাইফ ১৯, গাফ্ফার ১২; নাহিদুল ১/২২, শরিফুল ৩/৪৬, দেলোয়ার ১/৪৪, এনামুল জুনিয়র ২/৪৭, মনির ৩/৪০)
প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব : ৪৬.৪ ওভারে ২৫২/৫ (মারুফ ৪১, আল আমিন জুনিয়র ৩৫, নাহিদুল ৭৩*, ইউসুফ ৩২, দেলোয়ার ২৪*; নাঈম জুনিয়র ২/৪৯, রায়হান ২/৫২)
ফল : প্রাইম ব্যাংক ৫ উইকেটে জয়ী
ম্যাচ সেরা : নাহিদুল ইসলাম
আবাহনী লিমিটেড-গাজী গ্রুপ
আবাহনী : ২৬.১ ওভার, ১১৩ (এনামুল ১০, সাইফ ১, মিঠুন ৪০, মনন ৪৬, মাশরাফি ৮, সন্দীপ ৩*; আরাফাত ৮/৪০, মেহেদি ০/৭, টিপু ২/২৩, নাঈম ০/১৯, রাব্বি ০/২৩)
গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স : ২৯.৫ ওভার, ১১৪/২ (জহুরুল ৫২*, মেহেদি ১০, মুমিনুল ১, ফাওয়াদ ৩৯*, মাশরাফি ১/১৮, আরিফুল ০/৭, সন্দীপ ১/১৯, সানজামুল ০/২৩, নাসির ০.১৭, মনন ০/৬, মোসাদ্দেক ০/১৯)
ফল : গাজী গ্রুপ ৮ উইকেটে জয়ী
ম্যাচ সেরা : ইয়াসিন আরাফাত
"