ক্রীড়া ডেস্ক
শোকের আবহ বাংলাদেশ দলে
ভারতকে হারানোর চ্যালেঞ্জ
নেপালের কাঠমুণ্ডুতে বিমান দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা কাল পঞ্চাশ ছুঁয়েছে। নিহতের মধ্যে অন্তত পঁচিশজন বাংলাদেশি। মর্মান্তিক এই ঘটনায় শোকের চাদরে ঢেকে গেছে গোটা বাংলাদেশ। মাতমটা পৌঁছে গেছে শ্রীলঙ্কাতেও। যেখানে নিদাহাস ট্রফিতে অংশ নিয়েছে টাইগাররা। কিন্তু হাসিমুখে মাঠে নামতে পারছেন না মাহমুদউল্লাহ রিয়াদরা। আজ ভারতের বিপক্ষে শোকাহত একটা দলই লড়াইয়ে নামছে। এদিন কালো ব্যাজ পরে মাঠে নামছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটারা।
শুধু বাংলাদেশ দলই নয়, কলম্বোর আকাশেরও মন ভালো না। কাল সকাল থেকে থেমে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি নেমেছে শ্রীলঙ্কার রাজধানীতে। আকাশের এই কান্নার সঙ্গে মিশে গেছে মাহমুদউল্লাহ-মুশফিক-তামিমদের চোখের জল। বাংলাদেশ দলের অন্দরমহলের আবহটা যেন বিষাদময় হয়ে উঠেছে।
গতকাল বিকেলই বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা দুর্ঘটনার খবর শুনেছেন। এরপর থেকেই খেলোয়াড়েরা নানাভাবে জানার চেষ্টা করছেন হতাহত হওয়ার খবর। বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুর্ঘটনার ভয়াবহতা দেখে শোকের ছায়া নেমে এসেছে পুরো দলে। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ আজ জানতে চাইলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা কি না।
কাল গণমাধ্যমের কাছে বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাজ রিয়াদ জানতে চেয়েছেন এটাই কি দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা কিনা। শুধু তিনিই নয়, নিদাহাস ট্রফিতে অংশ নেওয়া তিন দলের সব ক্রিকেটারই খোঁজ খবর নিচ্ছেন নিহতদের বিষয়ে। প্রায়সবার মধ্যে একটা ভীতি কাজ করছে। কারণ এইসব ক্রিকেটারকে যে দেশ-বিদেশে সফর করতে হয় উড়োজাহাজে চড়েই।
পরশু খবরটা শোনার পর থেকেই শোকে কাতর হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। উজোজাহাজ দুর্ঘটনায় নিহতের শ্রদ্ধা জানাতে আজ ভারতের বিপক্ষে শোকের চিহ্ন নিয়ে মাঠে নামবে টাইগাররা। কাল ভারত ম্যাচ পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেছেন, ‘কাল (সোমবার) যখন আমরা খবরটা শুনলাম, খুবই মর্মাহত হয়েছি। শুনেছি, সেখানে ৩৫ থেকে ৪০ জনের মতো বাংলাদেশি ছিলেন। খুবই মর্মান্তিক। তারা কারও না কারও খুব কাছের মানুষ। খুবই বেদনাদায়ক। তাদের পরিবার ও স্বজনকে সমবেদনা জানাই। সৃষ্টিকর্তা যেন তার পরিবার পরিজনের এই শোক বইবার ক্ষমতা দেন, এ দোয়া করি।’
শোক সামলে অবশ্য কাল অনুশীলনের জন্য প্রস্তুত হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশ দল। অনুশীলন সময়কাল ছিল সকাল ১০টা। কিন্তু কলম্বোর আকাশ কেঁদে ওঠায় টাইগারদের অনুশীলন শুরু হয়েছে দুপুর একটার দিকে।
এক ম্যাচ আগেই ড্রেসিং রুম ডুবেছিল হতাশার অন্ধকারে। এখন সেখানেই সম্ভাবনার আলোর ঝিলিক। উড়ে বেড়াচ্ছে স্বপ্নের রেণু। ভেসে বেড়াচ্ছে ফাইনালের আশা। তবে এখনই ডানা মেলছে না দল। বাস্তবতার উপলব্ধি আছে বলে পা থাকছে মাটিতেই। বাংলাদেশ এগোতে চায় প্রতিটি ম্যাচ ধরে।
একটা ম্যাচ বদলে দিয়েছে বাংলাদেশকে। শ্রীলঙ্কার ছুড়ে দেওয়া ২১৪ রানের পাহাড় টপকে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নতুন শুরু করেছে টাইগাররা। সামনে এগিয়ে চলার পথচলায় বাংলাদেশ আজ পাচ্ছে ভারতকে। স্বপ্নের সীমানায় ফাইনাল থাকলেও মাহমুদউল্লাহর দৃষ্টি আপাতত পরের ম্যাচটিতে, ‘ভারত খুব ভালো খেলছে। টি-টোয়েন্টি সংস্করণটটিই এমন যে নির্দিষ্ট দিনে যে ভালো খেলবে, স্কিলগুলো ঠিকঠাক খেলতে পারবে, তাদেরই ফল ভালো হবে।’
গত কিছু দিনে বাংলাদেশ দল হারিয়ে খুঁজছিল নিজেদের। হাপিত্যেশ করছিল একটি জয়ের জন্য। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেই কাক্সিক্ষত জয়ের দেখা পেয়েছে বাংলাদেশ। শুধু একটি জয়ই নয়, যেভাবে জিতেছে বাংলাদেশ, সেটিই দারুণ চনমনে করে তুলেছে মিইয়ে থাকা দলকে। এই জয়কেই এখন সামনে এগিয়ে চলার পাথেয় মানছেন মাহমুদউল্লাহ। অধিনায়কের কণ্ঠে সেই আত্মবিশ্বাসের ছোঁয়া। তিনি বলেছেন, ‘আমি সবসময়ই বলছিলাম আমাদের সামর্থ্য আছে, বিশ্বাস আছে যে, আমরা ভালো করতে পারি। শুধু মাঠে করে দেখাতে হবে। দলের জন্য, দেশের জন্য কিছু করার তাগিদ ছিল। সেটাই হয়তো সবাইকে অনুপ্রাণিত করেছে।’ মাহমুদউল্লাহ আরো বলেছেন, ‘গত ম্যাচের জয়টি আমাদের আত্মবিশ্বাস অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। এখান থেকে হয়তো আমরা ইতিবাচক দিকগুলো নিয়ে সামনের ম্যাচগুলো খেলব।’
মাহমুদউল্লাহদের আশাটা পূরণ হবে কিনা সেটা জানিয়ে দিবে ভারত ম্যাচের ফল।
"