ক্রীড়া ডেস্ক
প্যারিসেও রোনালদো-রাজ
অলৌকিক কিছু ঘটেনি। উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের দ্বিতীয় লেগেও জয় তুলে নিল রিয়াল মাদ্রিদ। ঘরের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে ৩-১ ব্যবধানে জেতার পর পরশু প্যারিসে পিএসজিকে ২-১ গোলে হারিয়েছে জিনেদিন জিদানের দল। দুই লেগ মিলিয়ে ৫-২ ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পড়ল নেইমারবিহীন দলটি। হেসে-খেলেই টানা অষ্টমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে পা রাখল ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা।
প্যারিসের মহারণের কারণে অনেকটা আড়ালে থেকে শেষ ষোলোর দ্বিতীয় লেগের অন্য ম্যাচটা। এদিন ঘরের মাঠ অ্যানফিল্ডে পোর্তর সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করেছে লিভারপুল। দ্বিতীয় সারির দল নিয়ে ড্র করার পরও খুশি হতে পারেনি অল রেডরা। তবে প্রথম লেগের ৫-০ গোলের দারুণ জয়টাই শেষ আটে জায়গা করে দিয়েছেন ইয়ুর্গেন ক্লপের দলকে।
অথচ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর হারের মধুর প্রতিশোধটা ঘরের মাঠ প্যারিসে নিতে চেয়েছিল পিএসজি। কিন্তু মহাযুদ্ধের আগেই হারাতে হয়েছে প্রাণভোমরা নেইমারকে। ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকারের শূন্যতাটা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে ফ্রেঞ্চ জায়ান্টরা। নেইমারহীন পিএসজি রিয়ালের বিপদসীমায় কয়েকবার হানা দিলেও সেগুলো ছিল ছন্নছাড়া। একের পর এক গোলের সুযোগ মিস করেছেন এনিসন কাভানি, অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়া, কিলিয়ান এমবাপ্পেরা। আপ্রাণ চেষ্টার ফল হিসেবে ৭১ মিনিটে গোলের দেখা পেয়েছিল পিএসজি। কিন্তু ততক্ষণে যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গেছে।
রেফারিকে মেজাজ দেখাতে গিয়ে ৬৬ মিনিটে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছেড়েছেন মার্কো ভেরাত্তি। তবে দশ জনের দলে পরিণত হওয়ার আগেই লুকাস ভাজকুয়েজের দুর্দান্ত ক্রসে মাথা ছুঁয়ে গোল করেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। কিন্তু এই লিডটা ধরে রাখতে পারেনি রিয়াল। কাভানি ম্যাচে ফেরান পিএসজিকে। তবে ম্যাচের শেষ দিকে ক্যাসেমিরোর গোলের সৌজন্যে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ইউরোপ সেরা দলটি। রিয়ালের জয়ের ব্যবধান আরো বাড়তে পারত। কিন্তু দুবার পিএসজি গোলরক্ষককে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি করিম বেনজেমা।
সুদূর রিও ডি জেনিইরোর একটি বিলাসবহুল রিসোর্টে টিভি পর্দায় দলের হারটা দেখেছেন নেইমার। সতীর্থরা যেভাবে প্রাণপণ লড়াই করেছেন তাতে খুশি হয়েছেন ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার। কিন্তু দলের হারে দারুণভাবে মর্মাহত হয়েছেন নেইমার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘এই হারে আমি খুব হতাশ। খুব খারাপ লাগছে যে দলকে সহায়তা করতে পারলাম না। তবে সতীর্থরা যেভাবে আপ্রাণ চেষ্টা করেছে তাতে আমি গর্বিত।’
স্বপ্নের চ্যাম্পিয়নস লিগের ট্রফি জিততে বিশ্ব রেকর্ড গড়ে নেইমারকে দলে টেনেছিলেন পিএসজি প্রেসিডেন্ট নাসির আল খেলাইফি। কাতারি এই ধন কুবের প্যারিসে এনেছিলেন বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় উঠতি তারকা এমবাপ্পেকেও। কিন্তু সবসময় অর্থ যে সাফল্য আনতে পারে না সেটা তিনি ভালোই বুঝতে পারছেন। চ্যাম্পিয়ন হতে হলে ভাগ্যকেও পাশে দরকার হয়। তাদের ভাগ্য খারাপ বলেই প্রথম লেগে বাজে রেফারিংয়ের শিকার হয়েছে পিএসজি। ফিরতি লেগের আগে প্রাণভোমরা নেইমারকে হারানোর ধাক্কা। সবমিলিয়ে আরেকবার স্বপ্নভঙ্গ হলো ফ্রেঞ্চ ফুটবলের রাজাদের।
আসলে রোনালদোর দুর্দান্ত ফর্মই এবারের আসর থেকে পিএসজিকে ছিটকে দিয়েছে। প্রথমবারের দেখায় পর্তুগিজ উইঙ্গার করেছেন জোড়া গোল। পরশু তার গোলে বাকি সম্ভাবনাটাও শেষ করে দিয়েছে। এই গোলে অনন্য একটা রেকর্ডের পাশে বসে গেছে রোনালদোর নাম। ২০০৩ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাটেডের হয়ে টানা নয় ম্যাচে গোল করে ডাচ কিংবদন্তি রুদ ফন নিস্টলরয় যে বিরল রেকর্ডটা গড়েছিলেন সেটাই এখন হয়ে উঠেছে নড়বড়ে। এই আসরের প্রতিটি ম্যাচে গোল করা রোনালদোর সামনে এখন অনন্য উচ্চতায় ওঠার হাতছানি।
এই মৌসুমটা ঘরোয়া ফুটবলে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি রিয়াল মাদ্রিদ। কিন্তু ইউরোপের রাজারা প্রিয় মঞ্চে ঠিকই দারুণ ছন্দে। অভিজ্ঞতা যে বড় একটা ব্যাপার সেটাও বুঝে গেছে পিএসজি। ছোট্ট একটা ভুল যে স্বপ্ন শেষ করে দিতে পারে সেটাও টের পেল স্বাগতিক শিবির। মূলত দ্যানি আলভেজের শিশুতোষ ভুলটাই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে ম্যাচে। মাঝমাঠে আক্রমণে ওঠা পিএসজি হঠাৎই কাউন্টার অ্যাটাকে হজম হজম করে বসে। রোনালদোর ওই গোলটা স্বাগতিক সমর্থকদের বুকে শূল হয়েই বিঁধেছিল।
ফলাফল
পিএসজি ১-২ রিয়াল
পোর্ত ০-০ লিভারপুল
"