শরীফ সাথী
ঠোঁট ছুঁয়েছে হাসি
দাদু তাড়াতাড়ি এসো ভিজে যাবে তো। বারান্দায় উঠতেই ঝমঝম করে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। প্রতিদিনের মতো আজকেও নাতির আবদার-দাদু বড্ড ভালো, আনন্দের মজার গল্প শোনাও না? দাদু বলল, পড়াশোনা না করে শুধু শুধু গল্প শোনা? নাতির ত্বরিত জবাব, না পড়িনি? এই তো এখুনি একটি ছড়া মুখস্থ করলাম।
মেঘ গুড় গুড় করেরে
বাদল বুঝি ঝরেরে
ঘাসের পাতার হাসি দেখে
টাপুর টুপুর পড়েরে।
ব্যাঙ ঘ্যাঙ ঘ্যাঙ ডাকেরে
দুচোখ ছবি আঁকেরে
ভিজছে সবাই উদাস মনে
পাখির মতো ঝাঁকেরে।
এই বৃষ্টির দিনেরে
ছোলা বাদাম কিনেরে
খেয়ে আত্মা ভরছে নারে
দাদুর গল্প বিনেরে।
দাদুর বুকড়া দাঁতের ফাঁক দিয়ে মুচকি মুচকি হাঁসি ঝরে পড়ল। নাতিকে বুকে জড়িয়ে বলল, আমি আমার দাদুর কাছে অনেক আগে যে গল্প শুনেছিলাম। বাজার করতে গিয়ে বিদেশি সাহেব দেখে সেই গল্পটি আজ মনে পড়ে গেল। দাদু হাসতে হাসতে বলা শুরু করল।
বহু বছর আগের কথা। আফ্রিকা মহাদেশ থেকে দুই আফ্রিকান খোঁচা খোঁচা দাড়িগোঁফ ভর্তি নাগরিকদ্বয় এই বাংলায় বেড়াতে এসেছিল। সবুজ-শ্যামল মাটিময় ভেদ করে ছুটে চলা ঝরনা নদী। প্রকৃতির অপরূপ ছবি নিদারুণভাবে তাদের চোখে ফুটে উঠেছিল। এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে ছুটে চলা। সব কিছুই অসাধারণ। নাতি দাদুকে বলল, দাদু আসলেই আমরা সুন্দরের পূজারির এই দেশ পেয়েছি। তাহলে বলো দেখি, আমাদের জাতীয় ফল কী? আমি জানি দাদু। আমাদের জাতীয় ফল কাঁঠাল, জাতীয় ফুল শাপলা, জাতীয় পাখি দোয়েল। তাহলে বলছি শোন, ওই আফ্রিকান নাগরিকদ্বয় ঘুরতে ঘুরতে এই বৃষ্টিভেজা মৌসুমে নিভৃত পল্লøী গ্রামে এসে পড়ে। তাদের চোখের সামনে পাকা পাকা কাঁঠাল দেখতে পেয়ে মহাখুশি। তারা টিভিতে হনুমানের কাঁঠাল খাওয়া দেখেছে। হাতে ধরে মুখ ঘষে ঘষে খেতে দেখেছে। তাই ওনারা কাঁঠাল সংগ্রহ করে হাত দিয়ে ছিঁড়ে মুখ ডুবিয়ে ডুবিয়ে খেতে লাগল। মুখভর্তি দাড়িগোঁফে কাঁঠালের আঠায় ছেরাবেরা হয়ে গেল। শেষ পর্যন্ত কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে দাড়িগোঁফ কামিয়ে পথে চলতে থাকে। এভাবে ওরা যে পথেই যাক না কেন সেভ করা মানুষ দেখলেই হেসে উঠত। আর দুজন বড্ড আনন্দ করত এই ভেবে যে, ওইসব মানুষও বুঝি আমাদের মতন কাঁঠাল খাওয়ার শিকার হয়েছে। তাই দাড়িগোঁফ সেভ করে চলেছে।
বাইসাইকেল চড়ে এক ভদ্রলোক প্রধান সড়কে যাচ্ছিল। বিদেশি নাগরিকদ্বয় প্রধান রাস্তায় উঠতেই চোখ পড়ে যায়। ওই আরোহী পূর্ণাঙ্গই ক্লিন সেভ করা ফিটফিটে লোক। ওরা তাকিয়ে জোরে জোরে হাসতে লাগল। আরোহী ওভাবে হাসতে দেখে রেগে অস্থির হয়ে সামনে এসে জিজ্ঞাসা করলÑহাসছ কেন? বিদেশিদ্বয় বহুদিন ঘোরার পর কিছু কিছু বাংলা শিখে ফেলেছিল। তাই তারা মুখে হাত দিয়ে বলল, তুমিও যা খেয়ে এমন আমরাও তা খেয়ে এমন। আরোহী বুঝতে না পেরে হা করে থাকল। দাদুর এই কথা শুনতে শুনতে নাতির ঠোঁট ছুঁয়ে হাসি আসে হেঃ হেঃ হেঃ হেঃ।
"