আব্দুস সালাম

  ০৪ নভেম্বর, ২০১৭

বাঘের মৃত্যু

বাঘের অত্যাচারে বনের পশুপাখিরা অতিষ্ঠ। তারা বাঘের ভয়ে সন্ত্রস্ত। বাঘ কাউকেই ছাড় দেয় না। যাকে পায় তাকেই খেয়ে ফেলে। পশুর শাবক তার পছন্দের খাদ্য। বাঘের অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য একদিন সব পশুপাখি শিয়াল পন্ডিতের বাড়িতে গেল তার সঙ্গে পরামর্শ করতে। শিয়াল সব কথা শুনে বলল, তোমরা ঠিকই বলেছ। বাঘটি খুব হিং¯্র এবং ভয়ংকর। বাঘের অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য একটা উপায় বের করতেই হবে। তোমরা যদি আমাকে সাহায্য কর তাহলে আমি কাজ শুরু করতে পারি। সকলে সমস্বরে বলল : হ্যাঁ, হ্যাঁ কাজ শুরু কর। আমরা তোমার সাথে আছি। তুমি যেভাবে সাহায্য চাইবে আমরা সেভাবেই তোমাকে সাহায্য করব।

: আমার মাথায় একটা পরিকল্পনা আছে। তার জন্য আমাদের একটু পরিশ্রম করতে হবে। তোমরা আগামীকাল সকলে আর একবার এসো। আমরা বাঘের সঙ্গে দেখা করতে যাব। দেখি শেষপর্যন্ত কী করতে পারি।

শিয়ালের কথামতো সকল পশুপাখি পরের দিন বাঘের সঙ্গে দেখা করার জন্য তার গুহাতে গেল। গুহার সামনে এত পশুপাখিকে একসঙ্গে দেখে বাঘের মনটা খুশিতে নেচে ওঠে। লোভে তার জিভ দিয়ে লালা পড়তে থাকে। শিয়াল বাঘকে বলল, আপনি তো বনের রাজা। আপনি পেটের ক্ষুধা মেটানোর জন্য সারাবনে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়ান। এটা আমাদের জন্য মর্যাদার নয়। আমরা চাই না বনের রাজা খাবারের সন্ধানে বনের মধ্যে কষ্ট করে ঘুরে বেড়াবে।

: খাবারের সন্ধানে যদি বের না হই, তাহলে আমি বাঁচব কীভাবে? না খেয়ে তো শেষপর্যন্ত মরতে হবে। তখন কী হবে, শুনি?

: না, না। তা কেন হবে? আমরা আছি না। শুনুন রাজামশাই। এখন থেকে আপনি গুহাতেই থাকবেন। আমরা আপনার জন্য খাবারের ব্যবস্থা করব। আর হ্যাঁ, আপনার এই গুহাতে আর থাকা চলবে না। আমরা আপনার জন্য সুন্দর একটা থাকার ব্যবস্থা করে দেব। সেখানেই আপনি থাকবেন।

বাঘ মনে মনে খুশি হলো। সে ভাবল, অনেক দিন পরে হলেও আমার সুদিন এসেছে। এখন আর চিন্তা কিসের?

বনের মাঝখানে একটা পাহাড় ছিল। সেই পাহাড়ে ছিল সুন্দর একটি গুহা। গুহায় ঢোকার পথটি ছিল সরু। সেই গুহাতেই বাঘটির থাকার ব্যবস্থা করা হলো। গুহাটি দেখে বাঘ খুশি হলো। সে মনে মনে বলল, কী মজা! আমি বনের রাজা। এখন থেকে আমাকে আর খাবারের জন্য চিন্তা করতে হবে না। গুহাতে বসে বসেই মজার মজার খাবার খেতে পারব। শিয়াল পন্ডিত প্রতিদিন বাঘের জন্য কে কীভাবে খাবার সরবরাহ করবে তার দায়িত্ব বণ্টন করে দিল। প্রথম দিন খাবার সরবরাহের দায়িত্ব পড়ল বানরের ওপর। বানর তার পছন্দ মতো বিভিন্ন গাছ থেকে পাকা পাকা মজাদার ফলমূল সংগ্রহ করল। তারপর একটা ঝুড়িতে করে বাঘের গুহাতে নিয়ে গেল। বাঘ সেসব ফলমূল দেখে বানরের প্রতি খুব রেগে গেল। বাঘ তাকে ধমক দিয়ে বলল, এসব কী নিয়ে এসেছিস? তোরা জানিস না আমি মাংসাশী প্রাণী। আমি মাংস ছাড়া কিছু খাই না। এক্ষুণি আমার জন্য টাটকা টাটকা মাংস নিয়ে আয়। নইলে কিন্তু তোদের কপালে দুঃখ আছে বলে দিলাম! বানর ভয়ে ভয়ে বাঘকে বলল, ‘আপনার পছন্দের খাবারগুলো যদি বলতেন? তাহলে আমার জন্য ওগুলো সংগ্রহ করতে সুবিধা হতো।’

বাঘ বলল, আমার খাদ্য তালিকায় রয়েছে বন্য শূকর, ভাল্লুক, বুনো গরু, হরিণ, হাতির বাচ্চা। অবশ্য বড় শিকার যদি না পাস তাহলে কাঁকড়া, ব্যাঙ, পাখি, মাছ দিলেও চলবে। আমি ওগুলো দিয়েই আহার সেরে নেব। খাবারের পদগুলো জেনে বানর সোজা শিয়াল পন্ডিতের উদ্দেশে রওনা দিল।

বানর শিয়ালের নিকট সব ঘটনা খুলে বলল। তার কথা শুনে শিয়াল খুব দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল। সে আবার সব পশুপাখিকে নিয়ে একটা সভা করল। তারা বাঘের খাবার জোগাড় করার বিষয়টি নিয়ে আলাপ আলোচনা করল। তারা বলল, আমাদের পক্ষে বাঘের খাবার জোগাড় করা সম্ভব নয়। কারণ কেউই বাঘের খাবার হিসেবে তার কাছে যেতে চাইবে না। তাছাড়া আমরা কাউকে হত্যা করে বাঘের আহারের জোগান দিতে পারব না। অবশেষে তারা সিদ্ধান্ত নিল যে, বাঘকে যেভাবেই হোক হত্যা করতে হবে। তাহলেই আমাদের মুক্তি। নইলে আর রক্ষা নেই। কোনো কোনো পশুপাখি বলল, বাঘের গায়ে তো অনেক শক্তি। আমরা তো তার শক্তির সঙ্গে পেরে উঠব না। তাহলে কীভাবে তাকে হত্যা করব? তাদের কথা শুনে শিয়াল পন্ডিত বলল, হাতি যদি এ ব্যাপারে সাহায্য করে তাহলে বাঘকে জব্দ করা আমাদের জন্য সহজ হবে। হাতি উত্তর দিলÑ‘প্রাণ বাঁচানোর জন্য আমি অবশ্যই সাহায্য করব।’ অন্যদিকে একটা দিন ধৈর্য ধরে থাকার কথাটি বলার জন্য শিয়াল বানরকে বাঘের নিকট পাঠাল। শিয়ালের কথামতো বানর বাঘকে সান্ত¡না দিয়ে এলো। বাঘ বানরের কথামতো ক্ষুধার জ্বালা নিয়ে গুহার মধ্যে অপেক্ষা করতে থাকল।

পরের দিন খুব সকালে হাতি শিয়ালের নিকট এলো। শিয়াল হাতিকে বড় একটি পাথরখন্ড দেখিয়ে বলল, এটি দিয়ে বাঘের গুহার মুখটি ঢেকে দিতে হবে। যাতে করে বাঘটি আর বের হতে না পারে। হাতি শূড় দিয়ে পাথরখন্ডটি তুলে গুহার উদ্দেশ্যে হাঁটা দিল। সেখানে পৌঁছে গুহার মুখটি ঢেকে দিল। বাঘটি তখন ঘুমাচ্ছিল। এরপর অন্যান্য পশুপাখিরাও ছোট ছোট পাথরের টুকরা দিয়ে গুহার মুখটি ঢেকে দিল। ঘুম থেকে উঠে বাঘটি গুহার মুখটি ঢাকা দেখল। সে ভীষণ রেগে গেল। সে গুহার ভেতর ভয়ঙ্করভাবে গর্জন করতে থাকল। সে বলল, যে এই কাজ করেছে তাতে শাস্তি পেতেই হবে। তারপর সে চেষ্টা করল গুহার মুখ থেকে পাথর সরাতে। কিন্তু শত চেষ্টা করেও পাথরখন্ডটি সরাতে পারল না। পাথরখন্ডটি সরাতে না পারায় বাঘটি ভয় পেয়ে গেল। সে মনে মনে বলল, এগুলো সব আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে এসব করা হয়েছে। আমার লোভ করা মোটেও উচিৎ হয়নি। লোভ করার ফলে এখন আমার মৃত্যু অনিবার্য। ওদিকে ক্ষুধার জ্বালায় বাঘের পেট চুঁইচুঁই করতে থাকে। এভাবে গুহার মধ্যে দু’দিন বন্দি থাকার পর বাঘটি মারা গেল। বাঘটি গুহার মধ্য হতে বের হতে পারেনি দেখে পশুপাখিরা নিশ্চিত হলো যে, তার মৃত্যু হয়েছে। এর ফলে সব পশুপাখি নির্ভয়ে বনের মধ্যে সুখে-শান্তিতে জীবনযাপন করতে থাকল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist