আহাদ আলী মোল্লা
ফুলপরিদের দেশে
আফসানা ক্লাস টুতে পড়ে। কোরবানির ঈদের ছুটিতে মামাবাড়ি বেড়াতে যায় সে। সঙ্গে বড় ভাই আফরোজ। জোছনা ভরা রাত। বিদ্যুৎ চলে গেলে মামি উঠানে পাটি পেতে দেন। ওদের সঙ্গে বড় মামাও পাটিতে বসেন। আফসানা বায়না ধরে আজ তাকে একটা ফুলপরির গল্প শোনাতে হবে। বড় মামা খুব রসিক মানুষ। ওরা যখনই মামাবাড়ি যায়, তখনই তিনি গল্প শোনান। রূপকথার গল্প। রাক্ষস-খোক্ষসের গল্প। নবাব আর রাজা-রানীর গল্প। তবে মামা আজ বলতে লাগলেন পরির গল্প। পরিরা কোথায় থাকে। কোথায় তাদের বাড়ি। তারা কী খায়। কত না প্রশ্ন আফসানার। মামা মজা করে করে সব প্রশ্নের জবাব দেন। গল্প শুনতে শুনতে উঠানের পাটিতেই ঘুমিয়ে গেল আফসানা। ঘুমানোর সঙ্গে সঙ্গে স্বপ্নের রাজ্যে চলে গেল সে। দেখতে শুরু করল স্বপ্ন।
আফসানা একটা ফুল বাগানে প্রজাপতি দেখছিল। কয়েকটা রঙিন প্রজাপতি ফুলে ফুলে মধু খাচ্ছে। এমন সময় আকাশ থেকে উড়ে এলো দুই পরি। সাদা পাখনাওয়ালা পরি। তাদের শরীর ফুলে ফুলে ঢাকা। হরেক রকম ফুল। মুখের হাসিতে যেন মুক্ত ঝরে পড়ছে। ওরা এসে বলল, আমরা ফুলপরি। ফুলের দেশে আমাদের বাড়ি। তুমি কি যাবে আমাদের দেশে? দুই পরির কথা শুনে খুশিতে বাগবাগ হয়ে উঠল আফসানা। সে ওদের পানে খানিক এগিয়ে গেল। বললো, অবশ্যই আমি তোমাদের দেশে যাব। ফুলের সঙ্গে খেলব, ঘুরব আর মজা করব। কথা শেষ হতে না হতেই আফসানাকে ডানার মাঝে তুলে নিয়ে দুই পরি উড়াল দিল। কত পাহাড় কত অরণ্য ছাড়িয়ে নীল আকাশের সাদা মেঘের সারি ডিঙিয়ে ছুটল তারা তাদের দেশে। পার হলো চাঁদের দেশ। তারার দেশ। কত না গ্রহের দেশ। তার পরে ফুলপরিদের দেশ। পরিদের দেশে ঢুকতেই ছুটে এলো আফসানার বয়সী ফুলপরিদের মেয়েরা। তাদের হাতে ফুলের ডালি। তারা ফুল ছিটিয়ে ছিটিয়ে আফসানাকে বরণ করে নিলো। কী আনুষ্ঠানিকতা। আফসানা অবাক হলো। এ কী! যেদিকে তাকাই ফুল আর ফুল। এ ফুল তো আমাদের দেশের মতো সাধারণ ফুল নয়। একেকটি ফুল দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। চারপাশ গন্ধে ম-ম করছে। পরির দেশের ফুলের রঙ-রূপও আলাদা।
হঠাৎ ফুলপরিদের আরও দুই মেয়ে ছুটে এলো আফসানার কাছে। বলল, আজ থেকে তুমি আমাদের বন্ধু। তারা আফসানার গায়ে তাদের দেশের ফুলের তৈরি পোশাক পরিয়ে দিল। বলল, এবার চলো রানী মা’র কাছে যাই। আফসানা প্রশ্ন করে- রানী মা কে?
: রানী মা আমাদের সবার রানী। মানে ফুলপরিদের রানী।
: তিনি কোথায় থাকেন?
: চলো নিয়ে যাই, দেখে নিও।
ফুলপরিদের মেয়েরা ডানায় চড়িয়ে ওদের রানি মা’র কাছে নিয়ে গেল আফসানাকে। রানী মাকে দেখে মন ভরে গেল তার। বিরাট এক সিংহাসনে বসে আছেন তিনি। ফুলের সিংহাসন। রানী মা’র সারা শরীরে হাজারো রঙের ফুল। আফসানাকে দেখেই ফুলপরিদের রানী উঠে দাঁড়ালেন। এক গাল হেসে বললেন, ‘এসো এসো আফসানা। ফুলপরিদের রাজ্যে তোমাকে স্বাগত জানাই।’ এবার আফসানার সারা দেহে হরেক রকমের গয়না পরিয়ে দিলেন তিনি। নূপুর, নোলক, চিকা, হার, ব্রেসলেট আরো কত গয়না। তবে সব গয়নাই ফুলের তৈরি। এরপর আরেক দল ফুলপরি নিয়ে এলো খাবার। হরেক রকমের রান্না। খাওয়ার আগেই গন্ধে ওর মুখে পানি জমে গেল। খাওয়াদাওয়া করে দেখল পৃথিবীতে এমন স্বাদের খাবার সে কোনো দিনও খায়নি। এখানকার মাছ-মাংসের আলাদা স্বাদ। যা খেতে ইচ্ছে, তা বলতে না বলতেই হাজির। এখানে কোনো কাজ নেই। শুধু খাওয়া আর আনন্দ করা। আফসানা খুব খুশি হলো। সে বলল, আমি আর কোনো দিন এদেশ থেকে ফিরে যাব না। হাসলেন পরিদের রানী। তিনি বললেন, এখানে থাকা যায় না। চিরস্থায়ী থাকতে হলে অনেক শর্ত আছে।
: কী কী সেই শর্ত বলুন রানী মা।
: তুমি কি পারবে তা পালন করতে?
: চেষ্টা করে দেখি রানী মা।
এখানে থাকতে হলে মিথ্যা বলা যাবে না। পরির দেশে মিথ্যা চলে না। হিংসা চলে না। চলে না গালাগালি, মারামারি। পৃথিবীর কোনো বাজে আচরণ করা যাবে না। আফসানা খুশিতে আটখানা। সে বলল, আমি তো এটাই চাই।
রানী মা বললেন, এখানে থাক। তবে সাবধান! শর্ত ভাঙলে এক ধাক্কায় পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
আফসানা এসব স্বপ্নে দেখছিল। হঠাৎ বড় মামা আফসানার পিঠে ধাক্কা দিতেই ওর ঘুম ভেঙে গেল। দেখল সে পরির দেশে নেই। পাশমোড়া দিয়ে উঠে বসে চোখ কচলাতে কচলাতে কান্না শুরু করল সে। বড় মামার ওপর তার খুব রাগ হলো। তিনি কেন তাকে জাগালেন। না হলে সে তো ফুলপরিদের দেশেই থাকত।
"