মুহম্মদ কবীর সরকার
বাঘ ভাগাভাগি
টুনা আর টুনি মায়ের কাছে গল্প শোনে। বাঘের গল্প, শিয়ালের গল্প, মানুষের গল্প আরো কত রঙ-বেরঙের গল্প। তবে তাদের কাছে বাঘের গল্প শুনতে যেমন ভয় পাই তেমন আনন্দও পাই। বিশাল বড় তার আকৃতি।
বাংলার বাঘের রঙ হালকা হলুদ থেকে কমলা রঙের হয়ে থাকে। দেখতে যেমন বড় তেমন শক্তিশালীও নাকি! তাই তাদের বাঘ দেখার ইচ্ছা জাগে। টুনা বলে, আচ্ছা মা বাঘ থাকে কোথায়?
-কেন সুন্দরবনে!
এক সময় সারা বাংলা জুড়ে বাঘ ছিল। বাংলার বাঘের খ্যাতি সারা বিশ্বজুড়ে ছিল। তার গর্জন তিন কি.মি. পর্যন্ত শোনা যেত। চলাফেরা ছিল রাজার মতো। তার গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০-৬৫ কি.মি.। সাঁতারের গতিবেগ ৩২ কি.মি. প্রতি ঘণ্টায়।
টুনি উঠে বলে, এখন নেই কেন মা?
-মানুষের জন্য।
মানুষ কি বাঘ থেকে ও শক্তিশালী?
-না, বুদ্ধিমান!
না, বুদ্ধিমান বললে ভুল হবে। মানুষ অতিবুদ্ধিমান ও চালাক। একটা প্রবাদ আছে না ‘অতিচালাকের গলায় দড়ি।’
দিন দিন বাঘ শিকার ও গাছ কাটার ফলে বাঘের ও আমাদের বাসস্থল ধ্বংস করে ফেলেছে।
তাই তাদের বাসস্থল হারিয়ে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।
টুনা বলে, মা তুমি কি বাঘ দেখেছ?
-না, তবে আমার মায়ের কাছে শুনেছি।
টুনি বলে, মা আমরা বাঘ দেখব।
বাঘ তো সুন্দরবনে থাকে আর সুন্দরবন অনেক দূরে। তাছাড়া বাঘের সংখ্যাও কম। সুন্দরবন গেলে দেখা মিলতে নাও পারে।
টুনাটুনি বায়না ধরে, তারা সুন্দরবন যাবে এবং বাঘ দেখবেই।
মা বললো, আচ্ছা তোমরা আরেকটু শক্তিশালী হও। তোমাদের বাবা খাবার আনতে গেছে, আসুক।
অবশেষে বাবা বাড়ি ফিরল।
মা বলল, ওরা বাঘ দেখার জন্য সুন্দরবন যেতে চাই।
সুন্দরবন যাওয়া কি খামখেয়ালী ব্যাপার যে, বললে আর চলে গেলাম এক উড়ালে।
-আমি বলেছি তারা মানতে চায় না।
-আচ্ছা দেখি কী করা যায়।
-আমি আগে গিয়ে রাস্তা দেখে আসি। তারপর তাদের নিয়ে যাব যদি কাছে হয়।
টুনটুনি উড়তে উড়তে চলে গেল। সেও (টুনটুনি) শুনেছে সুন্দরবন ও বাঘের গল্প। কখনো দেখেনি। কিন্তু কোথাই কী! সারাদিন ওড়ার পরও সুন্দরবনের কোনো হদিস পেল না।
অবশেষে বড় একটা বাঘ দেখতে পেল রাস্তার মধ্যখানে। বড় বড় গাড়ি যাচ্ছে সে (বাঘ) একটু নড়ছে না। স্টাচু হয়ে দাঁড়িয়ে রইছে। টুনটুনি কতক্ষণ বসে দেখলো কিন্তু না বাঘ ক্লান্তিহীনভাবে দাঁড়িয়ে আছে একটু নড়ার সময় নেই। কোথায় তার গর্জন, কোথায় তার প্রতি ঘণ্টায় ৬০ কি.মি. দৌড়। কিছুই নেই।
যাকগে বাঘ তো পেলাম এবার যাই বাচ্চাদের নিয়ে আসি। মনে মনে বলল টুনটুনি।
বাসায় এসে বলে, বউ বাঘ পেয়েছি চল দেখে আসি।
তারপর সে তার বউ ও টুনাটুনিদের নিয়ে যাত্রা টাইগারপাসের দিকে। উড়তে উড়তে এসে পৌঁছালো।
বাবা টুনাটুনিদের দেখাচ্ছে ওইটা বাঘ!
-টুনি বলে, তাহলে সুন্দরবন কই? এখানে তো সব গাড়ি, বড় গাড়ি, ছোট গাড়ি পিপ পিপ।
-এখানে আগে সুন্দরবন ছিল, মা উঠে বলল। মানুষ গাছ কেটে কেটে রাস্তা বানিয়েছেন।
টুনা বলে, মা বাঘ দৌড়াচ্ছে না কেন? মানুষ গুলি বাঘকে ভয় পায় না কেন? বাঘের সাথে মানুষের বন্ধুত্ব হয়ে গেল এত বাঘ শিকার আর গাছ কাটার পরও।
বাঘের গর্জনও মনে হয় তিন কি.মি. যায় না।
টুনি বলে, এইটা তো নড়ছে না মা, মা আমি বাঘের কাছে যাব।
-না বাঘে কামড়ে দেবে।
-তাহলে মানুষদের কামড়ায় না কেন?
-ঠিক আছে যা।
টুনা বলে, আমি মাথায় বসব।
টুনি বলে, না আমি তার মাথায় বসব।
আচ্ছা ঠিক আছে যে আগে যেতে পারবে সে বসতে পারবে। পরে দুজন এক সাথেই বসল।
তারা কখনো মাথায় বসে কখনো পিঠে। আর গান ধরেছে...
বাঘ তুমি কি সত্যি গো বাঘ নাকি স্টাচু
বোকার মতো দাঁড়িয়ে আছো বুঝ না কিছু।
জঙ্গলে ছিল তোমার বাস, ছিলে বনের রাজা
এখন তুমি খাও কি ঘাস, কে দিল
এমন সাজা?
"