রুমান হাফিজ

  ১৫ জুলাই, ২০১৭

অনিকদের দাদু

ডিসেম্বর মাস এলেই অনিক অপেক্ষা করতে থাকে কখন দাদু আসবেন। আর দাদু আসা মানেই তো গ্রাম থেকে নিয়ে আসা কত্ত কিছু, সাথে দাদুর গল্পের ঝুলি তো আছেই! একমাত্র দাদুর কাছ থেকেই গল্প শুনতে পারে অনিক। দাদু ছাড়া আর কে গল্প শোনাবে? দাদুর মতো করে এ রকম দারুণ সব গল্প আর কেউ কি বলতে পারবে?

অনিকদের দাদু গ্রামেই থাকেন। গ্রামের একটা প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। চাকরির মেয়াদ সেই কবে শেষ হয়েছে, তবুও দাদু বিনা বেতনে স্কুলে পড়িয়েই যাচ্ছেন। বারবার অনিকদের আব্বু দাদুকে পড়ানো বাদ দিয়ে গ্রাম ছেড়ে চলে আসতে বলেছেন। শিক্ষকতা করতে করতে পেশাটা যে দাদুর নেশায় পরিণত হয়েছে। তিনি কি ছেড়ে আসতে পারেন? অনিকের আব্বু জাহিদ সজল প্রবাসী। আর আম্মু ফৌজিয়া লীনা শহুরে একটা স্কুলে শিক্ষকতা করছেন। আম্মুর স্কুলে অনিক আর একমাত্র ছোট বোন তাসরিনও পড়ে। তাসরিন সবে ক্লাস ওয়ানে পড়ছে আর অনিক চতুর্থ শ্রেণিতে।

বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার এক দিন পর যথারীতি দাদু চলে আসেন। দাদুকে পেয়ে অনিক কী যে খুশি! তার সঙ্গে সঙ্গী হয়েছে ছোট বোন তাসরিনও। এর আগে দাদু এলেও তাসরিন তেমন বুঝত না, কারণ সে ছোট ছিল। এবার তাসরিনও বুঝতে পারছে তার দাদু এসেছেন। সারাক্ষণ দাদুর সঙ্গেই আছে তারা। দাদু আসার পর থেকে থেকে দুই ভাইবোনের মধ্যে সেকি মিল! তা না হলে, দুজনের একসঙ্গে হওয়া মানেই একটা কিছু ঘটে যাওয়া। এই নিয়ে বেশ বেগ পেতে হতো আম্মু ফৌজিয়া লীনাকে। হয়তো গেইম খেলা নিয়ে ঝগড়া কিংবা টিভি রিমোট নিয়ে কাড়াকাড়ি। এক কথায় সব কাজেই তাদের মধ্যে মতপার্থক্য। কিন্তু দাদু আসার পর থেকে এসবের কিছুই নেই। দুজনের এই মিল দেখে অনিকদের আম্মুও বেশ খুশি। এখন গেইম খেলা কিংবা টিভি দেখা ওসবের কি সময় আছে? তাদের মধ্যে সব থেকে বড় আনন্দের উপকরণ দাদু বিদ্যমান! দাদুকে পেয়ে টিভি কিংবা গেইম খেলার কথা প্রায় ভুলেই গেছে দুজন।

প্রতিদিন সন্ধ্যার পর দাদু তাদের দুজনকে নিয়ে বসেন। ক্লাসের বই কিংবা অন্য কোন বই নিয়ে সেখান থেকে গল্পের মতো করে তাদের অনেক কিছুই বলেন দাদু। গল্পে গল্পে নতুন অনেক কিছুই শেখা হয়ে যায় তাদের। দাদু তাদেরকে তার জীবনে ঘটে যাওয়া বাস্তব ঘটনাগুলোই গল্পের আকারে বলেন। গল্প শোনায় অনিক বেশ মনোযোগী হলেও তাসরিন মাঝেমধ্যে এদিক সেদিক নড়াচড়া করে বসে। দাদু তাসরিনকে তার কোলে বসিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আরো গল্প বলেন। দাদুর গল্পে তাসরিন কখন যে ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে যায়, তা টেরই পান না দাদু। গল্পের আসর শেষ করে সবাই একসঙ্গে খেতে বসেন। খাবার মুখে দিয়ে দাদু বললেন-‘আচ্ছা বৌমা, ওদেরকে নিয়ে বেশি দূরে নয় কাছাকাছি কোথাও ঘুরে আসলে কেমন হয়?’

-‘হ্যাঁ আব্বা বেশ ভালো হবে’ অনিকদের আম্মু দাদুর কথায় একমত পোষণ করে বললেন। পরদিন বিকেলবেলা দাদু অনিক, তাসরিন আর তাদের আম্মুকে নিয়ে গেলেন গাজীপুরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে। পার্কে এসে দুই ভাইবোন কী যে খুশি! অনিক বারবার দাদুকে এটা-ওটা প্রশ্ন করছে। দাদুও অনায়াসে উত্তর দিচ্ছেন। অনিকের প্রশ্নে বিরক্ত হয়ে আম্মু বকা দিতে গেলে দাদু বাধা দেন। সেই সঙ্গে বিভিন্ন জিনিস দেখিয়ে সেটার সঙ্গে একেকটা গল্পও জুড়ে দিচ্ছেন দাদু। এই পার্কে আছে হাতি-ঘোড়া, বাঘ-ভাল্লুক, কুমির, ময়ূর ইত্যাদি নানা জাতের প্রাণী। বেশ ভালোই লাগছে তাদের। একবার চানাচুরওয়ালা দেখে তাসরিন বায়না ধরে সে চানাচুর খাবে। শুনেই দাদু বললেন, সব্বোনাশ! তাসরিন দাদু আগে কি আমি বলিন, বাইরের খোলা কোনো কিছু খেতে নেই? এতে নানারকম অসুখবিসুখ হতে পারে। দাদুর কথা শুনে তাসরিন বলল, আচ্ছা দাদু আর কখনোই বলব না। দাদুর সঙ্গে নাওয়াখাওয়া, বেড়াতে যাওয়া, গল্প শোনা সব মিলিয়ে কিভাবে যে সময়গুলো পার হয়ে যাচ্ছে। জানুয়ারি মাস শুরু হতেই দাদু আবার গ্রামে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দাদু চলে যাবেন-এ কথা শোনার পর থেকে অনিক আর তাসরিনের সে কি কান্না! কাঁদতে কাঁদতে একদম পাগলপ্রায়। আদরের নাতি-নাতনিদের অবস্থা দেখে দাদু বেশ চিন্তায় পড়ে গেলেন। এদিকে অনিকদের আম্মুও এই নিয়ে চিন্তিত। দাদুর সঙ্গে এতদিন ওরা যেভাবে ছিল তিনি চলে গেলে ওদেরকে সেভাবে কে রাখবে? সব কিছু তো আগের মতোই অগোছালো হয়ে যাবে! বিষয়টা নিয়ে দাদুর সঙ্গে তিনি খোলামেলা আলোচনা করলেন। অনিকের আব্বুও জানতে পেরে এই নিয়ে দাদুর সঙ্গে কথা বলেছেন। ছেলে, বৌমার অনুরোধ আর অনিকদের অবস্থার কথা চিন্তা করে দাদু সম্মতি দিলেন। প্রিয় নাতি-নাতনিদের ছেড়ে তিনি কি আর দূরে থাকতে পারেন?

অনিক আর তাসরিন যখন শুনতে পেল দাদু তাদের ছেড়ে আর চলে যাবেন না। সবসময় তাদের সঙ্গেই থাকবেন। তখন ভাইবোনের খুশি আর দেখে কে! খুশিতে দাদুকে জড়িয়ে ভাইবোনের এত্তগুলা চুমু খেতে দেখে দাদু তো রীতিমতো অবাক! হাসিমাখা মুখে দাদু তখন তাদের জড়িয়ে ধরলেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist