আব্দুস সালাম

  ২৪ জুন, ২০১৭

আদিবা ও কাকের ঈদ আনন্দ

আদিবাদের বাসাটি তৃতীয় তলায়। বাসার সামনে একটি ছোট্ট কৃষ্ণচূড়া গাছ। গাছটির কয়েকটি ডালপালা ঘরের বারান্দা স্পর্শ করে আছে। বারান্দায় দাঁড়ালে কৃষ্ণচূড়া গাছটি ভালোভাবে দেখা যায়। আদিবা বেশিরভাগ সময় বারান্দায় খেলা করে। আর কৃষ্ণচূড়ার ডালে বসে থাকা কাকগুলোকে দেখে। তার মা তাকে ঘরের ভেতরে খাওয়াতে পারে না। সে সবসময় বারান্দায় বসে খেতে চায়। বারান্দায় বসে খেতে তার খুব ভালো লাগে। আর তাকে খাওনোর সময় নানান ধরনের গল্প বলতে হয়। বারান্দার গ্রিল ধরে সে যখন বাইরের দৃশ্য দেখতে থাকে ঠিক তখন তার মা সুযোগ বুঝে তার মুখে খাবার তুলে দেয়। আদিবার বাবা তার জন্য কয়েকদিন আগে একটি টি-টেবিল কিনেছে। টেবিলটা বারান্দাতেই রাখা হয়েছে। আদিবার মা টি-টেবিলে বসেও মাঝে মাঝে তাকে খাওয়ায়। আদিবাও টি-টেবিলে বসে খেলা করে।

আদিবাকে খাবার খাওয়াতে দেখলে কয়েকটি কাক বারান্দার নিকটে কৃষ্ণচূড়ার ডালে বসে পড়ে। কোনোটি আবার গ্রিলে বসে পড়ে। আবার উড়ে যায়। আবার আসে। তাদের উদ্দেশ্য, আদিবার খাবারে ভাগ বসানো। বারান্দার কার্নিসে খাবারের উচ্ছিষ্ট অংশ ছুড়ে দিলেই কাকেরা মজা করে খায়। আদিবা মাঝে মাঝে তার মুখের খাবার কাককে খাওয়ানোর জন্য কার্নিসের ওপর ছুড়ে ফেলে। কাকের খাবার খাওয়া দেখলে তার খুব ভালো লাগে। কাককে কোনো খাবার না দিয়ে যেন সে খেতেই পারে না। বাবা-মাও তার খুশিতে খুশি। আদিবা সবসময় তার মায়ের কাছে কাকদের নিয়ে নানারকম প্রশ্ন করে। রাতেরবেলায় কাকেরা কোথায় থাকে, ডালের ওপর ঘুমায় কীভাবে, ঘুমালে নিচে পড়ে যায় না কেন, ঝড়বৃষ্টির সময় কাকগুলো কী করে ইত্যাদি ইত্যাদি। আদিবার এসব প্রশ্নে মা অবশ্য বিরক্ত হয় না। সুন্দরভাবে উত্তর দেয়।

দিনে দিনে কাকগুলো আদিবার বন্ধু হয়ে যায়। বারান্দায় আদিবাকে দেখলেই কাকগুলো তার নিকটে চলে আসে। প্রথম প্রথম আদিবা কাক দেখে ভয় পেলেও এখন আর পায় না। মা তাকে বুঝিয়ে বলেছে, কাকরা পরিবেশের বন্ধু। এরা আমাদের কোনো ক্ষতি করে না। ময়লা আবর্জনা খেয়ে পরিবেশকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাখে। একদিন একটি কাক ভাঙা প্লাস্টিকের খেলনা মুখে করে এনে আদিবার সামনে ফেলে দেয়। কাকের খেলনা ফেলা দেখে আদিবা এক দৌড়ে তার মাকে গিয়ে জানায়। মাও বুঝিয়ে বলে কাকগুলো তোমার বন্ধু তাই তোমার জন্য খেলনা নিয়ে এসেছে। মায়ের কথা শুনে সে বলে : তবে পচা খেলনা দিল কেন, ভালো খেলনা দিতে পারে না? বাজারে তো অনেক ভালো ভালো খেলনা পাওয়া যায়। এ রকম নানান প্রশ্ন তার মায়ের নিকট ছুঁড়ে দেয়।

মা বলেন, কাকদের তো টাকা নেই তাই তোমার জন্য নতুন খেলনা কিনতে পারেনি। ঠিক আছে, তোমার পছন্দ না

হলে খেলনাটি ফেলে দাও। আদিবার মা উত্তর দেয়। সেই খেলনাটি ফেলে দেওয়া দেখে কাকটিও বুঝতে পারল যে,

আদিবার খেলনাটি পছন্দ হয়নি। তাই সেই কাকটি আর কখনো আদিবার জন্য মুখে

করে কিছু আনত না।

দেখতে দেখতে ঈদ চলে আসে। দুই দিন পরেই ঈদ। ঈদ উপলক্ষে আদিবার জন্য নতুন জামা-কাপড় কেনা হয়েছে। সে ইতোমধ্যেই জেনেছে ঈদের দিন ভালো ভালো খাবার রান্না করা হবে। মাছ-মাংস, পোলাও, সেমাই, সুজি, ফিরনি রান্না করা হবে। সে তার মায়ের নিকট জিজ্ঞাসা করে : কাকের জন্য কী কী খাবার রান্না করবে? ওরা কি সেমাই-সুজি, মাছ-মাংস-পোলাও পছন্দ করে? শুনে মা বলে : হ্যাঁ, ওরা রান্না করা সেমাই-সুজি পছন্দ করে, কিন্তু মাছ-মাংস-পোলাও পছন্দ করে না। তবে মাছ-মাংস কুটার সময় মাছের যে আঁইশ-কাঁটা ও মাংসের হাড়-চর্বি ফেলে দেওয়া হয় তা কাকের খুব পছন্দের খাবার। তাহলে তুমি সবসময় ময়লার ঝুড়িতে ওগুলো ফেলে দাও কেন? আদিবা পাল্টা প্রশ্ন করে। সবসময় ফেলি না, মা। কিছু আঁইশ-কাঁটা ও চর্বি কাকের জন্য রান্না-ঘরের কার্নিসে ফেলে দিই। তুমি রান্না-ঘরে থাকো না তো তাই দেখতে পাও না। তার মা উত্তর দেয়। মায়ের উত্তরে আদিবা সন্তুষ্ট হতে পারল না। সে বলল : ঈদের দিন কিন্তু ওগুলো ফেলে দেবে না। আমার হাতে দেবে। আমি কাকগুলোকে খাওয়াব। ঠিক আছে মা, তাই হবে। তার মা উত্তর দেয়।

ঈদের দিন খুব সকাল থেকেই আদিবার মা রান্নাঘরে রান্নাবান্নার করার কাজে ব্যস্ত থাকে। আজ আর সে মাছ-মাংসের আঁইশ-কাঁটা ও হাড়-চর্বি ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দেয়নি। একটি বাটিতে রেখে দেয়। আদিবার বাবা ঈদের নামাজ পড়তে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর আদিবা ঘুম থেকে ওঠে। আজ ঈদের দিন। আদিবা খুব খুশি। বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখে বেশ কিছু কাক কৃষ্ণচূড়া গাছের ডালে বসে আছে। আদিবাকে দেখে কয়েকটি কাক বারান্দায় ছুটে আসে। আজ সব কাককে সে খাওয়াবে। কোনো কাকের যেন মন খারাপ না থাকে। সে মায়ের কাছে ছুটে গিয়ে কাকের কথা বলে। আর মা বাটিতে রাখা মাছের আঁইশ ও হাড়-চর্বিগুলো আদিবার হাতে দেয়। আদিবাকে কোলে নিয়ে মা ওগুলো কাকের উদ্দেশে কার্নিসের দিকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। অনেকগুলো কাক কার্নিসের দিকে ছুটে আসে। কা কা রবে তারা আনন্দ প্রকাশ করতে থাকে। কাকগুলোর আনন্দ দেখে আদিবাও খুশি হয়।

বিকেল বেলা বাড়িতে অনেকগুলো মেহমান আসে। মেহমানদারি করার জন্য আদিবার মা ব্যস্ত থাকে। এই সুযোগে আদিবা মাঝে মাঝে রান্নাঘরে ঢুকে পড়ে। কয়েকটি পিরিচে ঢেকে রাখা সেমাই-সুজি কাকের জন্য বারান্দার গ্রিল দিয়ে বাইরে ফেলে দেয়।

কাকগুলো বারান্দায় কাকা রবে চিৎকার করতে থাকে। আজকের দিনটা সত্যিই কাকের জন্যও খুব আনন্দের। এত বেশি খাবার কাকগুলো আগে কখনো খায়নি। মেহমানদের বিদায় দিয়ে আদিবার মা রান্নাঘরে যায়। হঠাৎ তার চোখে পড়ে সব ক’টি পিরিচ খালি। ঘরের ভিতর আদিবাকে পাওয়া যায় না। বারান্দায় দৌড়ে যায়। গিয়ে দেখে আদিবা তখনও একটা পিরিচ হাতে কাকগুলোকে সেমাই-সুজি খাওয়াচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist