মুয়াজ বিন এনাম
বিড়াল
ইঁদুরের যন্ত্রণা আর সহ্য করতে না পেরে মেসের কর্তা ঘোষণা করলেন, ‘একটি বিড়াল যে ঘরে নিয়ে আসতে পারবে, তার জন্য আগামী এক সপ্তাহ রান্নাসহ মেসের যাবতীয় কাজ মওকুফ।’
পুরস্কারটা সবারই পছন্দের। রান্না করতে কারোই ভালো লাগে না। কিন্তু আমাদের মেসে যে বাবুসাহেবরা থাকেন, তাদের দ্বারা বিড়াল ধরার কাজটা যে সম্ভব নয়, সেটা ভালোই জানা আছে।
আপাতত এসব চিন্তা বাদ দিয়ে আমিই সিদ্ধান্ত নিলাম একটি বিড়াল ঘরে নিয়ে আসার। সামান্য একটা বিড়াল ধরার ব্যাপারটা যে আহামরি কিছু নয়, সেটা আমার চেয়ে ভালো আর কেউ বুঝবে না। বিশেষ করে মেসের অন্যান্য বোর্ডার। ফুটপাতে ইদানীং প্রায়ই দেখা যায়, না খেতে পেয়ে অসংখ্য বিড়াল মারা যাচ্ছে। ওগুলোর মধ্য থেকে একটি বিড়াল যদি আমি নিয়ে আসি, তাহলে হয়তো খাবার নিয়ে তার আর কোনো চিন্তা করতে হবে না।
সকালের খাবার খেয়ে হাতের মধ্যে একটা ছোট্ট ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম বিড়ালের খোঁজে। মনে মনে ভাবছি, আজ একটা কেন, একসঙ্গে চার-পাঁচটা বিড়াল ধরে নিয়ে যাব! কর্তা মশাইর পছন্দমতো একটা রেখে বাকিগুলোকে না হয় ঠেঙ্গিয়ে বিদায় করা যেতে পারে! কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়। শুনেছি, বিড়াল নাকি একবার ঘরে আনলে বিদায় করা কষ্টকর! এমন মুশকিল থেকে রক্ষা পেতে একটা বিড়াল ধরে নিয়ে যাওয়া ঢের ভালো।
এসব কথা ভাবতে ভাবতে হেঁটে হেঁটে অনেক দূর পর্যন্ত চলে এলাম, কিন্তু একটা বিড়ালেরও দেখা পেলাম না! এতে অবশ্য অবাক হওয়ার মতো কিছু খুঁজে পেলাম না। কারণ, গ্রীষ্মের দুপুরে বেচারারা হাওয়া খাওয়ার জন্য বের হতেই পারে! এসব কথা ভেবে নিজেকেই সান্ত¡না দিচ্ছিলাম। কিন্তু দুপুর গড়িয়ে যখন বিকেল চলে আসতে লাগল, তখনো বিড়ালের কোনো খোঁজ না পেয়ে কিঞ্চিৎ হতাশ হলাম! তবে কি আজ সব বিড়াল ধর্মঘট ডেকে ফেলল?
জামরুলগাছের নিচে বসে অপেক্ষায় আছি একটা বিড়ালের। সারাদিনের পরিশ্রমে শরীরটা বেশ ক্লান্ত। গাছে ঠেস দিয়ে বসার কারণে কখন যে ঘুম এসেছে, বুঝতেই পারিনি। স্বপ্নে দেখলাম, একটা বিড়ালরাজ্যে বসবাস করছি আমি। চারদিকে শুধু ‘ম্যাঁও’ শব্দ ছাড়া আর কিছুই শুনতে পেলাম না। সাদা-কালোসহ বিচিত্র কত শত রঙের হাজারো বিড়াল ঘোরাঘুরি করছে চারপাশে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, এটা এমনই এক বন, যেখানে শুধু বিড়াল ছাড়া অন্য কোনো প্রাণীই নেই!
ইচ্ছা ছিল, এখান থেকে একটা বিড়াল ধরে নিয়ে মেসে চলে গেলেই ব্যাস! কিন্তু ধরব কিভাবে? আমি যে শত চেষ্টা করেও হাত-পা কিছুতেই নাড়াতে পারছি না! কয়েকটা ভয়ঙ্কর চোখের অধিকারী বিড়াল আমার দিকে ছুটে আসতে লাগল। আমি প্রাণপণে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলাম, কিন্তু মনে হচ্ছে, পেছন থেকে কে যেন আমাকে বেঁধে রেখেছে! বিড়ালগুলো আমার প্রায় কাছাকাছি চলে এলো। যেন চোখ থেকে আগুন ঝরে পড়ছে! হঠাৎ একটা বিড়াল তীব্র বেগে আমার দিকে ছুটে আসতে লাগল। লাফ দিয়েছে। এই বুঝি ধরে ফেলল আমাকে। আর ঠিক তখনই ধড়মড়িয়ে ঘুম থেকে উঠলাম। প্রচ- ভয় পাচ্ছি। সমস্ত শরীর থেকে ঘাম বেয়ে পড়ছে। সূর্য তখন ডুবে গেছে। অন্ধকারে শুধু ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক ছাড়া আর কিছুই শুনতে পেলাম না। উঠতে যাচ্ছিলাম, আর তখনই পাশ থেকে একটা আওয়াজ শুনতে পেলামÑ ‘ম্যাঁও’। লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। স্বপ্নের বিড়ালের আকৃতি হবে এটারওÑ এই ভেবে প্রাণপণে এক দৌড় দিলাম। একটু দূরে এসে খেয়াল হলো, জুতাজোড়া গাছের নিচেই ফেলে এসেছি। কিন্তু ফিরে গিয়ে নিয়ে আসার প্রয়োজন মনে করলাম না। জুতা গেছে, তাতে দুঃখ নেই। দুঃখ একটাই যে, একটা বিড়াল ধরে আনতে পারলাম না! আর সেজন্য রান্নার কাজ তো করতেই হবে, সেই সঙ্গে আজ সারা দিনের পরিশ্রম ফ্রি!
"