মুহাম্মদ নাজমুল ইসলাম

  ১৩ মে, ২০১৭

রহস্যময় রাত

এক

রিফাত। খুব দুষ্টু ছেলে। দিনেরবেলায় খেলাধুলা করে আর রাত হলে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা। এ যেন তার নিয়মিত রুটিন। আম্মু-আব্বুর কত্ত যে বকুনি। কিন্তু কিছুই সে পরোয়া করে না। যখন যা মনে চায়, তাই করে। আজ সোমবার। রিফাত বন্ধুদের কাছ থেকে জানতে পারল, পাশের গ্রামে যাত্রার আসর বসবে। শোনার পর দিনের শুরু থেকেই রিফাতের প্রস্তুতি চলছে। রিফাতের হাবভাব দেখে তার মা যাত্রার বিষয়টি কিছুটা আঁচ করতে পারলেন। বললেন, ‘বাবা রিফাত, দেখো, তোমার আগামী মাসে এসএসসি পরীক্ষা। তাই অনর্থক ঘোরাঘুরি না করে পড়তে বসো। তোমাকে পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতে হবে। কিন্তু রিফাত কি আর এসব কথায় পাত্তা দেয়? বরং সে তার মায়ের আলমারি থেকে কিছু টাকা বের করে হাটে গেল। রাত যখন ৮টা বাজে, তখন বন্ধুদের নিয়ে রিফাত যাত্রা দেখতে গেল। রাতটা অনেক মাস্তিতে কাটাল। শুধু যাত্রা দেখার মধ্যেই ক্ষান্ত রইল না, বরং নিয়ে যাওয়া টাকাগুলো দিয়ে জুয়া খেলল। যাত্রা দেখাও শেষ, পকেটের টাকাও শেষ। এবার ফিরে আসার পালা। কিন্তু রিফাতের বাড়ি আর বন্ধুদের বাড়ির বিস্তর দূরত্ব। ওদের যেতে হবে এক মেঠোপথ ধরে আর রিফাতকে আসতে হবে অন্য পথে। তাই রিফাত একাই ছুটল বাড়ির দিকে। রিফাত হাঁটছে আর কিছুটা ভয় পাচ্ছে। মনের ভেতর আনাগোনা করছে হরেক রকম কাহিনী। সময় যতই ঘনাচ্ছে, রিফাতের বুকের ধড়ক ধড়ক যেন ততই বেড়ে চলেছে। চলতি পথে পা যেন আর এক ইঞ্চিও এগোচ্ছে না।

দুই

রাত তখন আড়াইটার মতো হবে। রিফাত আসতে আসতে তাদের বাড়ি থেকে একটু পশ্চিম দিকে একটি সামাজিক কবরস্থানের কাছেই চলে এলো। সেখানে গ্রামের অনেকেরই কবর আছে। সে যখন কবরস্থানের একদম নিকটে চলে এলো, তখন হঠাৎ কেন যেন তার খুব ভয় লাগল। সে একটা কবরের কাছে ভয়ে দাঁড়িয়ে রইল। এমন সময় সে কোরআন তিলাওয়াতের আওয়াজ শুনতে পেল। সে খেয়াল করল, মসজিদের হুজুরের কণ্ঠ। সে সাহস করে উঁকি মেরে হুজুরকে দেখে কবরস্থানে উঠল। গিয়ে হুজুরের পাশে বসল।

হুজুর তাকে বললেন, ‘এত রাতে এখানে কেন এসেছো আর কোত্থেকেই বা এসেছো?’

রিফাত বলল, ‘আমি খেলা দেখে আসতেছি। কিন্তু কবরস্থান পর্যন্ত আসার পর আমার ভয় করছে। আপনাকে দেখে উঠে এলাম।’

হুজুর বললেন, ‘যাও তুমি বাড়ি চলে যাও।’

সে বলল, ‘আমার ভয় করে। আপনি যদি একটু দিয়ে আসেন, খুশি হতাম।’

হুজুর রাজি হলেন এগিয়ে দিতে। দুজনে মিলে রাতের অন্ধকারে চলতে লাগল।

একটু আসার পর হুজুর বললেন, ‘যাও, এবার চলে যাও।’

রিফাত বলল, ‘আরেকটু যদি আসতেন। এভাবে হুজুর তাকে বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে গেলেন।’ সে তার মাকে ডেকে বলল, ‘তাড়াতাড়ি দরজা খোলো। হুজুর এসেছে।’ তার মা হুজুরকে নিয়ে ঘরে আসতে বললেন। কিন্তু সে পেছনে ফিরে দেখে, হুজুর নেই।

পরদিন রিফাত হুজুরকে গিয়ে বলল, ‘হুজুর! কাল রাতে আমাকে দিয়ে আসার জন্য আপনি আমাদের বাড়িতে গেলেন; কিন্তু ঘরে ঢুকলেন না কেন? আম্মু খুব রাগ করেছে?’

শুনে হুজুর যেন আকাশ থেকে পড়লেন। বললেন, ‘কই আমি তো কাল আমার বাড়িতে ছিলাম। বাড়ি থেকে রাতেরবেলায় বেরই হইনি।’

তখন রিফাত হুজুরকে বিস্তারিত সব কাহিনী খুলে বলল। হুজুর ঘটনা শোনার পর রিফাতকে খুব শাসালেন। রিফাত এবার নিজের দোষ কিছুটা বুঝতে পারল। রিফাত এবার হুজুরের কাছে শপথ করল, সে আর কখনো রাতে কোনো অশ্লীল কাজে যাবে না এবং আব্বু-আম্মুর কথা ঠিকমতো শুনবে। আজ থেকে পড়ায় মনোযোগী হবে। আব্বু-আম্মুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিজেকে মনোনিবেশ করবে। আর কখনো অবাধ্য হবে না।

ঘটনাটি পুরো এলাকায় জানাজানি হলে লোকজন কবরস্থানটির চারদিকে দেয়াল করে ঘিরে দিল, যাতে কেউ অজু ছাড়া উঠতে না পারে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist