মাহাথির মোবারক

  ০৪ জুলাই, ২০২০

ছোট্ট মামণির তোতাপাখি

পলাশপুর গ্রামের নদীর তীরে বাস করত ছোট্ট মামণি নামে একটি মিষ্টি মেয়ে। তার মূলত নাম ছিল আদোরে মেয়েটি অনেক সুন্দর হওয়ার কারণে গ্রামের সবাই তাকে অনেক অনেক আদর করত। সবাই তাকে ভালোবেসে নাম দিয়েছিল ছোট্ট মামণি। মেয়েটির বয়স একদম কম হলেও সে অনেক সুন্দর করে কথা বলতে পারত। তাই তাকে কেউ কেউ তোতাপাখি বলেও ডাকত। এই ছোট্ট মামণি মানুষের মুখে তোতাপাখির নাম শুনতে শুনতে এক দিন তার বাবার কাছে জানতে চাইল আচ্ছা বাবা! তোতাপাখি কী? এটা কেমন পাখি। সবাই আমাকে তোতাপাখি বলে ডাকে কেন? তখন বাবা মুচকি হেসে জবাব দিল, তোতাপাখি হলো অনেক সুন্দর একটি পাখি। পাখিটি পাহাড়ে থাকে। আবার হাটবাজারেও বিক্রি হয়। সে মানুষের মতো অনেক সুন্দর করে মিষ্টি মিষ্টি কথাও বলতে পারে। তখন ছোট্ট মামণি বাবার কাছে বায়না ধরে বসল আব্বু আমাকে পলাশপুর হাট থেকে তোতাপাখি কিনে দিতে হবে। তারপর সাপ্তাহিক হাটের দিন ছোট্ট মামণিকে নিয়ে তার বাবা হাটে গিয়ে অনেক সুন্দর সুন্দর তোতাপাখি দেখতে পেল। পাখিগুলোকে খাঁচার ভেতর আটকে রাখা হয়েছে। আর পাখিগুলো এদিক-ওদিক হাঁটাহাঁটি করতেছে। কোনোটা কোনোটা আবার বের হয়েও যেতে চাচ্ছে। এসব দেখে মামণি বলল, বাবা! এত সুন্দর সুন্দর তোতাপাখিকে তারা কেন এভাবে আটকে রেখে কষ্ট দিচ্ছে? তাদের ছেড়ে দেয় না কেন? আর তুমি তো বললে তোতাপাখি কথা বলতে পারে। তাহলে তারা বলে না কেন আমাকে ছেড়ে দাও? আমি বনে চলে যাব। বাবা ছোট্ট মামণির একের পর এক প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে হয়রান হয়ে যাচ্ছে। তার পরও তার প্রশ্নের কোনো শেষ নেই। সুন্দর একটি তোতাপাখি কিনে বাড়িতে চলে গেল বাবা আর মেয়ে। ছোট্ট মামণি তোতাপাখিটিকে অনেক ভালোবাসতে শুরু করল। সারা দিন খাঁচার ভেতরে ভরে রেখে খাবার দেয়, পানি দেয়। একটু পর পর ছুটে আসে পাখিটির কাছে। সারা দিন তোতাপাখিকে নিয়ে খেলা করে। পাখিটিও মামণিকে ছাড়া খাবার খায় না। মামণি যখন মুখে তুলে দেয় তখন খায়। গত দুই দিন আগে মামণি মামার বাসায় ঘুরতে গিয়েছিল, তখন পাখিটি কিচ্ছু খায়নি সারা দিন চুপচাপ করে বসেছিল। তারপর মামণি আসার পর আবার সে আনন্দতে লাফিয়ে উঠল। আবার আগের মতো খেলা করতে শুরু করল।

মামণি এবার বাবাকে বলল, বাবা! যেদিন আমার এই তোতাপাখিটি কথা বলতে পারবে, ওইদিন আমি পাখিটিকে স্বাধীন করে দেব। ওইদিন তাকে মুক্ত আকাশে ছেড়ে দেব। আর আমার খাঁচায় ভরে রেখে তার সৌন্দর্য নষ্ট করব না। এভাবে কয়েক দিন পার হওয়ার পর হঠাৎ এক দিন সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই মামণি তোতার কাছে গেল। গিয়ে দেখে বসন্তের সকালের পাখিগুলো কিচিরমিচির শব্দে আর কোকিলের কুহু কুহু সুরে সেও সুর মিলিয়ে নাচতে শুরু করল। এমন সময় পাখিটি মামণিকে দেখে বলতে লাগল এই ছোট্ট মামণি! আমাকে তুমি ছেড়ে দাও। আমি ওই পাখিদের সঙ্গে খেলা করব। পাখির মুখে নিজের নাম শুনে মামণি তো খুশিতে বাক বাক হয়ে গেল। আনন্দে লাফিয়ে উঠল, কে কোথায় আছো তোমরা? এসো, দেখে যাও আমার তোতাপাখি আমাকে নাম ধরে ডেকেছে। সে শুধু কথায় বলতে পারে না, বরং আমার নামও বলতে পারে। মামণির খুশিতে বাবা মা বেরিয়ে এলো। মামণি এবার বলতে লাগল আমি আর পাখিটিকে ছেড়ে দেব না। ও আমার নাম বলতে পারে। তার পর থেকে পাখিটির জন্য তার মনে আরো ভালোবাসা বৃদ্ধি পেল। এক দিন পাখির খাঁচাটিকে নিচে নামিয়ে খাবারের জন্য মামণি ঘরে গেল ঠিক তখনি একটি বিড়াল এসে পাখিটির ওপর তার দারাল দাঁত দ্বারা হামলা করে বসল। পাখির চিৎকার শুনে মামণি জলদি ঘর থেকে বেরিয়ে এলো ততক্ষণে পাখিটি মাটিতে ডানা ঝাঁপটাতে লাগল। মামণি পাখির এই অবস্থা দেখে জলদি তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেল। ডাক্তার কাকা কিছু ওষুধ দিলে তা নিয়ে মামণি বাড়ি ফিরে এসে পাখিকে সেবা করে লাগল, কিন্তু তাতে কোনো কাজে আসছে না, পাখিটি আর মামণিকে নাম ধরে ডাকতে পারে না। সারাক্ষণ চুপটি মেরে বসে থাকে। তারপর দিন মামণি পাখিটিকে ওষুধ খাইয়ে রাতে ঘুমিয়ে পড়ল, সকালে এসে দেখে পাখিটি খাঁচার ভেতর লুটিয়ে পড়ে আছে আর একদল পিপীলিকা তাকে চারদিক হতে ঘেরাও করে ফেলেছে। সেই দিন এই মৃত্যু তোতাপাখিটিকে কোলে নিয়ে মামণি কান্নায় ভেঙে পড়েছে। সেদিন তার বুক ফাঁটা চিৎকারের আওয়াজে আশপাশের বাড়িগুলোর সব মানুষ একত্রিত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সেদিন কারো এমন কোনো ভাষা জানা ছিল না, যে ভাষার দ্বারা এই ছোট্ট মামণিকে তারা সান্ত্বনা দেবে। কারো এমন কোনো কথা জানা ছিল না; যা বললে ছোট্ট মামণির দগ্ধ হৃয়ের আগুন নিভে যাবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close