সুজন সাজু

  ০৬ জুন, ২০২০

নাক্ষস আর টাক্ষস

নাক্ষস আর টাক্ষস দুজন ভালো বন্ধু। প্রশ্ন জাগতে পারে, নাক্ষস-টাক্ষস এগুলো আবার কী ? স্বাভাবিক,এমন নাম তো আগে শুনিনি। শোনার কথাও না। আসলে এরা হচ্ছে রাক্ষস প্রজাতির। এদের নামই হচ্ছে নাক্ষস আর টাক্ষস। নাম গুলো হওয়ার পিছনে এদের আকৃতিগত কারণও আছে। নাক্ষসের নাকটা হচ্ছে একটা ছোট খাটো বালতির মতো। বালতির মতো এই নাক দিয়েই নাক্ষসের খাওয়া দাওয়ার কাজটি চলে। এতো বড় নাকটির সৌজন্যে নাক্ষসের মুখটিও দেখা যায় সামান্যই। নতুন কেউ দেখলে অই নাকটাই পুরোটা দেখবে নাক্ষসের। এত্তো বড় নাকটির জন্যই রাক্ষস কুলে এর নাম হয় নাক্ষস। নাক্ষস বললেই কারো চিনতে বেগ পেতে হয়না। এই তো গেল নাক্ষসের কাহিনী। আর নাক্ষসের বন্ধু টাক্ষস ? টাক্ষসের শরীরটা কত বড় তা টাক্ষসও সঠিক জানেনা। কেন জানে না, তাও একটি কথা। এরা হচ্ছে রাক্ষস প্রজাতির। এরা অতো কিছু ভাববার জো নেই। যখন যা মনে ওঠে তাই করে ফেলে। ভালো মন্দ বিচার করার মত ওদের বিবেক কাজ করেনা। যা কিছু পাই,যত বড় খাবারই হোক না কেন, গোগ্রাসেই গিলে ফেলে। আস্ত একটা মানুষকে ও গিলে ফেলা টাক্ষসের জন্য কোন ব্যাপারই নয়। এখন কথা হলো, এর নামটা টাক্ষস কেন? হ্যাঁ, টাক্ষসের যত বড় শরীর তত বড় মাথা। মাথা কিন্তু এটা মাথাই! মাথাটা ছোট হলেও একটা ধানের ডোলের মত হবে। আর পেটটার কথা নাই বললাম। আন্দাজ করে ধরে নাও কত বড় হতে পারে। টাক্ষসের এত শক্তি, কয়েকটা হাতিকে তার হাতের তালুতে রাখা কোন সমস্যাই হবেনা। ছোট খাটো পাহাড়কে আঁছড়ে ফেলা টাক্ষসের জন্য মামুলি ব্যাপার। আর এই কাজ করতে করতে তার মাথার চুল গুলোই সব ক্ষয় হয়ে গেল। টাক্ষসের মাথাটা ঠিক কমলা লেবুর মত তেল তেলে। প্রথমে কেউ দেখলে ভরকে যাবে টাক্ষসের এমন রূপ। এই তেল তেলে টাক ওয়ালা মাথার সৌজন্যে নাম হলো টাক্ষস। রাক্ষস কুলে নাক্ষস আর টাক্ষসে এমন কোন কাজ নেই, তারা করতে পারেনা। সবাই রাক্ষস হলেও এদের মত পলোয়ান রাক্ষস কুলে দ্বিতীয় খুঁজে পাওয়া দুস্কর। প্রয়োজনে নাক্ষস আর টাক্ষস আকাশের মেঘও ছিঁড়ে নিয়ে আসার ক্ষমতা রাখে। কত শত জীবজন্তু ধরে মিনিটের মধ্যেই চালান করে দেয় উদরে তার ইয়ত্তা নেই। কিন্তু তাদের ক্ষিদেটা কখনো কমেনা। এটাই হচ্ছে সমস্যা। যত পাই তত চাই। নাক্ষসদের সামনে কোন প্রাণীই পড়তে চাইনা। সামনে পড়লে যে আর রক্ষে নেই। নাক্ষস আর টাক্ষস যুক্তি করল, তারা রাক্ষস কুলের বাইরে ঘুরতে যাবে। কোথায়? ভিন্ন কোন গ্রহে। ভেবে ভেবে সিদ্ধান্তে পৌঁছল, ওরা পৃথিবীতেই ঘুরতে আসবে। কেননা, এখানে মনুষ্যদের দেখার বড় শখ জেগেছে নাক্ষস আর টাক্ষসের মনে। কারণ, মনুষ্য কুলে তাদের খাবারের কোন সমস্যা হবে না। যেখানেই যাবে সেখানেই জুটে যাবে খাবার। কিন্তু এমন কথা টাক্ষস বললেও নাক্ষসের মনে সন্দেহ জাগছে। মানুষরা হলো সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী। সুযোগ পেলেই মনুষ্যরা আমাদেরও বন্ধি করে রাখবে। তবে তা এত সহজ নয়। তবুও ভেবে চিন্তে যাওয়ায় ভালো। টাক্ষস বলে, আমাদের শক্তির সামনে দশ বিশজন মনুষ্য কোন ব্যাপার? এক হাতের তালুতে পিসিয়ে মারবো ক্ষণিকের মধ্যে। নাক্ষস বলে, যা ভাবছ তা এত সহজ নয় রে টাক্ষস। আমাদের রাক্ষস কুলের পরিবেশ আর মনুষ্য কুলের পরিবেশ পুরো ভিন্ন। টাক্ষস বলে এত ভাবা ভাবি করে যাওয়া যাবে না। আমাদের রাক্ষস পলোয়ান যদি অতি ক্ষুদ্রকৃতির মনুষ্য নিয়ে চিন্তা করতে হয়,তাহলে আমরা রাক্ষস হলাম কী জন্য ? এসব বাদ দাও। যা ভেবেছি তাই হবে। মানে মনুষ্য কুলে বেড়াতে যাবে। ঠিক আছে নাক্ষস সায় দেয়। পরের দিন রওনা হলো পৃথিবীর প্রান্তে। নাক্ষসদের বহনকারী উড়াল গাড়ি দুদিন পর এসে থামল পৃথিবীর মাটিতে। তবে জনমানব হীন একটি ঘোর অন্ধকার জঙ্গলের কাছে আপাতত নাক্ষসদের অবস্থান। পৃথিবীর পরিবেশ দেখে নাক্ষস আর টাক্ষসের মনটা ভরে গেল। দেখতে দেখতে সময় অনেক পার হয়ে এল। টাক্ষস বলে নাক্ষস ভাই, ক্ষিদেটা ভীষণ পেল। খাবার তো কিছু জোগার করতে হবে। প্রবেশ করলো পাশের জঙ্গলে, দেখলো অনেক গুলো হরিণ ছানা খেলা করছে। দেখে টাক্ষসের মনটা লোভাতুর হয়ে গেল। কয়েকটি হরিণ ছানা ধরে দুজনেই আহারটা সেরে নিল। এখানে খাবারের কোন সমস্যা হবে না বুঝল নাক্ষস আর টাক্ষস। বেশ কয়েকদিন অতিক্রান্ত করলেও এখনো কোন মনুষ্য সমাগম এরিয়াতে যায়নি। ভাবতে ভাবতে একদিন পা বাড়াল জন সমাগমের দিকে। কিন্তু রাক্ষসের বেশে তো আর যাওয়া যাবে না। রুপটা মানুষের ন্যায় করে নিল নিজেদের। মানুষের মত হলেও চলনে বলনে ব্যাতিক্রম আছেই। নাক্ষস আর টাক্ষস তাদের মত চলছে। কিন্তু কথাবার্তা কিভাবে রপ্ত করা যায়, দুজনেই ভাবছে। দেখল বিশাল এক বটগাছ। কিছুক্ষণ জিরিয়ে নিল দুজন। দেখল এক বৃদ্ধ বটগাছের নিচে কিছু একটা করছে। বৃদ্ধ দেখে টাক্ষসের লোভ হল ওকে আক্রমন করে ভোজনটা সেরে নিতে। বৃদ্ধ কিন্তু এক সময় শক্তিমান যাদুকর ছিল। বৃদ্ধ হলেও মনোবল বেশ তুখোর। তন্ত্র মন্ত্র ভালোয় আয়ত্তে আছে। কত রাক্ষস টাক্ষসকে শাস্তি দিয়েছে তার কোন হিসেব নেই। নাক্ষস আর টাক্ষস এসে বৃদ্ধর সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে। বৃদ্ধ প্রথমে বুঝতে না পারলেও ওদের কথাবার্তায় ঠিকই সন্দেহ হল,এরা মানুষ নয়! ভিন্ন কোন গ্রহের প্রাণী। এবং তাকেই আক্রমন করতে এসেছে। যাদুকর এবার নিজের ক্ষমতা প্রয়োগ করার ফন্দি আঁটছে। রাক্ষসেরাও চাচ্ছে কিভাবে বৃদ্ধকে কব্জা করা যায়। নিজেদের মধ্যে ছায়া লড়াই বেশ জমে উঠেছে। রাক্ষসেরা কিন্তু আগুনকে বেশ ভয় পায়। জাদুকর এবার মন্ত্র গুণে নাক্ষস আর টাক্ষসকে এক প্রকার বন্দি করে ফেলল। নাক্ষস আর টাক্ষস বৃদ্ধকে আক্রমন করার সুযোগ পাচ্ছেনা এখন। এবার ভয় পেয়ে গেল নাক্ষস আর টাক্ষস! আর তো রক্ষে নেই। বৃদ্ধ জানতে চাইল, তোমরা রাক্ষস কুল থেকে কেন পৃথিবীতে এলে? বুঝাচ্ছি মজা, আগুনে পুড়িয়ে মারবো। যখন আগুন নিয়ে সামনে গেল,আরো ভয় পেয়ে গেল নাক্ষস আর টাক্ষস। কেঁদো কেঁদো স্বরে বলে আমরা আসলে তোমাদের পৃথিবীটা দেখতে এসেছি,তবে কাউকে ক্ষতি করতে নয়। তবে জন মানবের সামনে কেন এলে? ভুল স্বীকার করে, নাক্ষস আর টাক্ষস। বলে, আমাদের ছেড়ে দাও,আমরা আমাদের রাক্ষস কুলে চলে যাব। আর কোনদিন আসবনা তোমাদের পৃথিবীতে। অনেক আকুতি মিনতির পর বৃদ্ধ যাদুকর ছেড়ে দিল নাক্ষস আর টাক্ষসকে। ছাড়া পেয়ে দ্রুতই পৃথিবী ত্যাগ করল তারা। প্রতিজ্ঞা করল ভুলেও মনুষ্য কুলে আসবেনা আর।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close