ইউনুস আহমেদ

  ০৬ জুন, ২০২০

রাজকন্যা কিয়ানা

রাজ্যের নাম কাবান্ডো। বিশাল এক পাহাড়ের ওপর সেই রাজ্যের অবস্থান। সেখান থেকে চারদিকে চারটি রাস্তা নেমে গেছে সমতলের দিকে। রাজার একমাত্র মেয়ে। সবাই বলে রাজকন্যা কিয়ানা। কিয়ানা যখন একটু বড় হলো তখন সে আর প্রাসাদে থাকতে চায় না। কিরান্ডা রাজ্যের প্রাসাদ- সে এক দেখার মতো বটে। দামি কাঠ দিয়ে প্রাসাদটি গড়া। মহামূল্যবান হিরা-জহুরুত দিয়ে সাজানো সেই রাজ্য। যে কেউ দেখে বেশ অবাকই হবে। তো কিয়ানা এক দিন বায়না ধরল, ঘুরতে বের হবে। রাজার অনুমতি চাইল সে। রাজা সাথে সাথে অনুমতি দিলেন কিন্তু বাঁধ সাধল রাজ্যের রাণী, কিয়ানার মা। রাজা বললেন, ভয় নেই, কিয়ানার অনেক সাহস। বাইরে বের না হলে নতুন নতুন জিনিস দেখবে কীভাবে আর শিখবেইবা কীভাবে। রাজারানির কথা শুনলেন না । কিয়ানাকে অনুমতি দিলেন। শুধু নিনাকে সাথে নিল কিয়ানা। রাজ্যের প্রধান উজিরের মেয়ে হলো নিনা। কিয়ানার খুব কাছের বন্ধু।

টগবগিয়ে ঘোড়া দুটি এগিয়ে চলছে। ঘোড়ার লম্বা কেশর বাতাসে ওড়ছে। সামনের সাদা ঘোড়ার ওপরে বসে আছে কিয়ানা আর পেছনের কালো ঘোড়ার ওপর নিনা। সরু পাহাড়ি রাস্তা। দু‘পাশে ঘন বন। বামপাশে ড়োরা বাঘের জঙ্গল। আর ডানপাশে সাদা সিংহের জঙ্গল। নিনা বলল,আমরা কোনটায় ঢুকব। কিয়ানা বলল, চল আমরা আগে ডোরা বাঘের জঙ্গলেই ঢুকি। ভয়ংকর এই ডোরা বাঘগুলিকে একটু কাছে থেকে দেখতে চাই। নিনা বলল, ঠিক আছে তাই হোক। ওরা দুজনে ডোরা বাঘের জঙ্গলে ঢুকে পড়ল। কিছুদূর যেতেই বাঘের ডাক শুনতে পেল। তবে সে ডাকে ওরা দুজনের কেউ-ই ভয় পেল না। কেমন যেন করুণ স্বরে ডাকছে ডোরা বাঘ। ঘোড়া থেকে নেমে ওরা ডোরা বাঘের কাছকাছি গেল। আরে একী! বড় একটা লোহার কাঁচায় ডোরা বাঘটি বন্দি। ব্যাপারটা কী? কে এই অকাজটি করল? কিরান্ডা রাজ্যে সবাই স্বাধীন। তবে ডোরা বাঘকে বন্দি করল কে? এমন সময় খাঁচার ভেতর থেকে ডোরা বাঘটি কথা বলে ওঠল, ‘রাজকন্যা কিয়ানা, ডোরা বাঘের জঙ্গলে তোমাকে স্বাগতম’। বাঘের মুখে নিজের নাম শুনে কিয়ানা বেশ অবাক হলো। সে বলল, ‘ডোরা বাঘ, তুমি কথা বলতে পার? তুমি আমার নাম জানলে কী করে?’ ডোরা বেশ ভার্িিক্ক গলায় বলল, ‘আমি হলাম কথা বলা ডোরা বাঘ। তুমি এই রাজ্যের একমাত্র রাজকন্যা, আর আমি তোমার নাম জানবো না, সেটা কী করে হয়?’ কিয়ানা বলল, ‘ঠিক আছে, সেটা বুঝলাম, কিন্তু তোমার এই বন্দিদশা কী করে হলো?’ ‘ডাইনি! একদল কালো ডাইনিরা আমাকে বন্দি করে রেখেছে। জঙ্গলের ভেতর দিয়ে ত্রিশ ক্রোশ এগিয়ে কালো ডাইনিদের আস্তানা। ওরা অনেক ভয়ংকর। ওখানে গেলে কেউ আর ফিরে আসতে পারে না’। ‘আমি ডাইনিদের আস্তানায় যাব, তোমাকে মুক্ত করব’-কিয়ানা ঘোষণা করল।

ত্রিশ ক্রোশ যেতে তিন দিন লাগল রাজকন্যা কিয়ানার। ভয়ংকর কালো ডাইনিদের সাথে বেশ একটা যুদ্ধ হয়ে গেল। নিনাও কম যায় না। সেও কয়েকটা কালো ডাইনি মেরে ফেলল তলোয়ার ঝাঁকিয়ে। তারপর আবার তিন দিনে ত্রিশ ক্রোশ ছুটে ফিরে এসে ডোরা বাঘকে খাঁচা থেকে মুক্ত করল রাজকন্যা কিয়ানা। খুশি হয়ে ডোরা বাঘটি ঘোষণা করল, ‘রাজকন্যা কিয়ানা, তুমি আজকে আমার যে উপকার করলে তা কোনদিন ভুলব না। কোন দিন যদি কোন বিপদে পড়, তবে এই ডোরাকে স্মরণ কর, মূর্হূত্যে সেখানে হাজির হবো’। ডোরা বাঘ, রাজকন্যা কিয়ানা আর উজিরের মেয়ে নিনা-ওরা বেশ বন্ধু হয়ে গেল। তারপর আর কি। ঘোড়ার কেশর দুলিয়ে বীরের মতো ফিরে আসল ওরা- ওদের প্রিয় কাবান্ডো রাজ্যে। কালো ডাইনিদের কবল থেকে ডোরা বাঘকে উদ্ধারের গল্প শুনে কাবান্ডো রাজ্যের সবাই ধন্য ধন্য করতে লাগল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close