সুমন আহমেদ

  ০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

সোনার হরিণ

অনেক দিন আগের কথা। এক দেশে ছিল অসহায় অতিদরিদ্র নিঃসন্তান এক ব্রাহ্মণ আর তার বউ। অনেক দুঃখ-কষ্টে কাটত তাদের দিন। একবেলা খাবার জুটত তো আর একবেলা অনাহারেই কাটত! এক দিন মনের দুঃখে ব্রাহ্মণ সবকিছু ছেড়ে হাঁটতে হাঁটতে চলে গেলেন গভীর এক জঙ্গলে আর কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলেন এই জীবন থাকার চেয়ে না থাকাই বেশ ভালো! বরং এই বনের হিংস্র বাঘের একবেলা খাবার হয়ে মরতে পারলেও নিজেকে একটু সান্ত¡না দিতে পারব যে, জীবনটা বিফলে যাইনি...। ব্রাহ্মণের কথা শুনে হঠাৎ করে এক দৈত্য এসে হাজির হলেন। দৈত্যকে দেখে ব্রাহ্মণ ভয় পেয়ে গেলেন আর বলতে লাগলেনÑ শেষমেশ দৈত্যের হাতেই আজ প্রাণটা যাবে। দৈত্য ব্রাহ্মণের কাছে জানতে চাইলেন গভীর এই জঙ্গলে একা একা সে কাঁদছে কেন? ব্রাহ্মণ

তার সব দুঃখ-কষ্ট, দরিদ্রতা আর সন্তানহীনতার কথা খুলে বললেন দৈত্যকে। সব কথা শোনার পর ব্রাহ্মণকে একটা সোনার হরিণ দিয়ে বললেন এই নাও ব্রাহ্মণ; এই হরিণ তোমার সব দুঃখ কষ্ট, দরিদ্রতা এবং সন্তানহীনতা দূর করে দেবে। এই হরিণের কাছে যা চাইবে তাই পাবে। তবে চাওয়ার যেন সীমা থাকে আর সাবধান হরিণের কথা তোমার বউ ছাড়া কেউ যাতে কোনো দিন কোনোভাবেই জানতে না পারে। আর যদি হরিণের কথা কেউ জানতে পারে, তাহলে এর ফল ভালো হবে না। ব্রাহ্মণের হাতে সোনার হরিণ দিয়ে মুহূর্তেই দৈত্য উধাও হয়ে গেল। সোনার হরিণ নিয়ে ব্রাহ্মণ বাড়ি চলে গেলেন। বাড়ি গিয়ে তার বউকে সবকিছু খুলে বললেন আর সাবধান করে দিলেন দৈত্যের নির্দেশ সোনার হরিণের কথা যেন কেউ জানতে না পারে। তারপর কেটে গেল অনেক বছর। নিঃসন্তান ব্রাহ্মণ আর তার বউ আজ একটি ছেলেসন্তানের পিতা-মাতা। শুধু তাই নয়, তারা এখন এই রাজ্যের রাজা-রানি। আর কয়েক দিন পর তাদের একমাত্র ছেলের ২১তম জন্মবার্ষিকী। জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে পিতা-মাতার কাছে এক মহামূল্যবান জিনিস চাইলেন উপহার হিসেবে। রাত পোহালেই ছেলের জন্মদিন; ব্রাহ্মণ আর তার বউ মহাচিন্তায় পড়ে গেলেন। কী এমন জিনিস উপহার দেওয়া যাই ছেলেকে...। দুজনেরই চিন্তায় ঘুম আসছে না। হঠাৎ ব্রাহ্মণের বউয়ের মাথায় একটি বুদ্ধি এলো। ব্রাহ্মণকে বললেন, আমরা আগামীকাল আমাদের ছেলেকে সোনার হরিণ উপহার দেব। এর চেয়ে মহামূল্যবান আর কিছু হতে পারে না। বউয়ের কথায় ব্রাহ্মণ প্রথম রাজি হয়নি, তারপর ব্রাহ্মণের বউ বললেন, এখন আমাদের আর কোনো কিছুইর অভাব নেই। রাজপ্রাসাদ, সিংহাসন আর এই রাজ্যের মালিকই তো আমরা। এখন আর সোনার হরিণ দিয়ে কী করব? তার চেয়ে বরং আমাদের ছেলেকে উপহার দিলে অনেক খুশি হবে। অবশেষে ব্রাহ্মণ তার বউয়ের কথায় রাজি হয়ে গেলেন। জন্মদিনে ছেলেকে সবার সামনে সোনার হরিণ উপহার দিলেন এবং সোনার হরিণের রহস্যের কথা সবাইকে বলে দিলেন। সোনার হরিণ পেয়ে রাজকুমার মহাখুশি, সেই সঙ্গে রাজপ্রাসাদের সবাই। রাত হয়ে গেল ব্রাহ্মণ আর তার বউ ঘুমিয়ে পড়লেন। তারপর রাত শেষে ঘুম ভাঙতেই দেখেন, তারা শুইয়ে আছেন তাদের কবেকার সেই পুরোনো কুঁঁড়েঘরটাতে। রাজপ্রাসাদ নেই, সন্তান নেই এখন আর কোনো কিছুই অবশিষ্ট নেই, শুধু তাদের বহু বছর আগের সেই পুরোনো কুঁঁড়েঘরটা ছাড়া। সবকিছু হারিয়ে ব্রাহ্মণ আর তার বউ হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলেন আর বুঝতে পারলেন দৈত্যের নির্দেশ অমান্য করার ফল...।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close