সৈয়দ আসাদুজ্জামান সুহান

  ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

গুল্টে মামার জাদুবিদ্যা

একদিন গুল্টে মামা এসে মহল্লার সব ছোট ছেলেমেয়েকে ডেকে এনে বললেন, তিনি নাকি আসামের কামরূপ-কামাক্ষার দুর্গম উপত্যকায় তপস্যা করে জাদুবিদ্যা রপ্ত করে এখন একজন নামকরা জাদুকর। দেশের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জাদু প্রদর্শনের জন্য গুল্টে মামার নিয়মিত ডাক আসে। এবার তিনি বিদেশে গিয়েও জাদু দেখাবেন। গুল্টে মামার কথা শুনে সবাই বেশ উৎফুল্ল কিন্তু জারিফ তার একটা কথাও বিশ্বাস করেনি। তবে সে কিছু না বলে সবার সঙ্গে তাল মিলিয়ে গুল্টে মামাকে জাদু দেখাতে চেপে ধরে। তিনি তখন এমন ভাব দেখালেন, যেন বেশ বিরক্ত হচ্ছেন কিন্তু ভেতরে ভেতরে খুশিতে গদগদ করছেন। যাহোক, শেষ পর্যন্ত তিনি সবার অনুরোধে জাদু দেখাতে রাজি হলেন।

জোকারের মতো অদ্ভুত একটা পোশাক পরে বিশাল আয়োজন সাজিয়ে গুল্টে মামা খানিক সময়ের জন্য ধ্যানে বসেন। ধ্যানের মধ্যে বিড়বিড়িয়ে মন্ত্র পড়তে থাকেন। হঠাৎ মোটামুটি চিৎকার করেই গুল্টে মামা ডিবাইসকা ডিবাইসকা চিক বুম বুম বুম বলে ধ্যান ভাঙেন। তারপর একটা রঙিন লাঠি হাতে নিয়ে অনেক কসরত করে মাথার ওপর ঘোরাতে থাকেন। হঠাৎ করে নতুন একটা মন্ত্র পড়ে সবার সামনে লাঠিটা শক্ত করে চেপে ধরতেই ওটা হয়ে যায় রঙিন কাগুজে ফুল। তখন সবাই অবাক বিস্ময়ে জোরে জোরে হাততালি দিতে থাকে।

এভাবে একের পর এক করে গুল্টে মামা আরো তিনটা জাদু দেখালেন। সেগুলো ছিল প্লেয়িং কার্ডের কালার ও নাম্বার পরিবর্তন করা, পানিকে দুধ বানিয়ে দেওয়া এবং সর্বশেষ একটি ছোট্ট লাল বল থেকে একই সাইজের আরেকটি নীল বল বের করা। সবাই জাদুগুলো দেখে গুল্টে মামাকে হাততালিতে বাহ্ বাহ্ দিতে থাকল। তখন জারিফ বলে উঠে, মামা এগুলো তো সহজ ও কমন জাদু, এবার কঠিন কিছু দেখাও, তখন গুল্টে মামা রাগান্বিত স্বরে বলেন, আচ্ছা ঠিক আছে। এবার তোদের রোমহর্ষক একটা জাদু দেখাব। আমার গলায় ফাঁস দেওয়া মোটা রশি বাঁধা থাকবে। ওই রশির দুই মাথা ধরে তোরা সবাই টানাটানি করবি, কিন্তু আমার কিচ্ছুটি হবে না।

গুল্টে মামার কথা শুনে সবাই তখন পিলে চমকে উঠে। সমস্বরে সবাই এই জাদু দেখতে অসম্মতি প্রকাশ করে। জারিফ তখন বলে উঠে, আরেহ, গুল্টে মামা তো বলেছেন, উনার কিচ্ছুটি হবে না। তাহলে আর ভয় না পেয়ে চল জাদুটা দেখি। তখন গুল্টে মামাও বলেন, ওরে ভীতুর দল, জাদু দেখার আগেই ভয়ে চুপসে গেলি! আমি হলাম একজন নামকরা জাদুকর। সত্যিই আমার কিচ্ছুটি হবে না। তারপর গুল্টে মামা তার জাদুর ঝাঁপি থেকে একটা প্রস্তুত করা ফাঁসির রশি বের করেন। সেটা গলায় ফাঁস বেঁধে রশির দুই মাথা দুই দলের হাতে দেন। তারপর জারিফকে বলেন, তার দুই চোখ ও দুই হাত পিছন দিক দিয়ে বেঁধে দিতে। জারিফ গুল্টে মামার কথামতো ঠিক তাই করল।

তারপর গুল্টে মামা সবাইকে বললেন রশির দুই মাথা ধরে দুই দল মিলে সর্বশক্তি দিয়ে টানাটানি করতে। সবাই তখন তাই করলো কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো গুল্টে মামার সত্যি সত্যিই কিছুই হচ্ছে না। তখনই জারিফের মনে খটকা লাগে এবং তার মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি বের হয়ে আসে। সে ইশারায় সবাইকে থামিয়ে রশির দুই মাথা একটা সিলিং ফ্যানের ওপরে ঘুরিয়ে তারপর সবাই মিলে দেয় আস্তে করে টান। তখনই গুল্টে মামা লম্বা জিহ্বা বের করে বাঁচাও বাঁচাও বলে চেঁচাতে থাকেন। গুল্টে মামার করুণ অবস্থা দেখে কারো আর বুঝতে বাকি রইল না, আজও গুল্টে মামা নতুন করে জাদুবিদ্যার গুল মেরেছেন। আসলে গুল্টে মামা একজন ভুয়া জাদুকর। জাদুর নামে সবকিছুই ছিল প্রযুক্তি ও গুল্টে মামার হাতের কারসাজি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close