আবদুস সালাম

  ১৮ জানুয়ারি, ২০২০

রাজার বিচার

সে অনেক দিন আগের কথা। এক দেশে বনের পাশে সুধানগর নামে একটা গ্রাম ছিল। সেই গ্রামের মানুষগুলো খুব সহজ-সরল। তাদের তেমন কোনো দুঃখ-কষ্ট ছিল না বললেই চলে। সকলে সুখেশান্তিতে জীবনযাপন করত। সুধানগরে মধু মিয়া নামে এক লোক বাস করত। সে ছিল বুদ্ধিমান। গ্রামের সবকিছু ছিল তার নখদর্পণে। যেকোনো সমস্যার সমাধান সে খুব সহজেই দিতে পারত। তার বিবেক-বুদ্ধি দিয়ে সূক্ষ্মভাবে বিচার করতে পারত। সে কারণে গ্রামে কোনো সমস্যা হলে সকলে এই মধু মিয়ার কাছেই ছুটে আসত। এসব নানাবিধ কারণে সে অনেকের কাছে ছিল সুপরিচিত এবং শ্রদ্ধার পাত্র।

মধু মিয়ার বাড়িতে একটি আমগাছ ছিল। সেই আমগাছে একটি বানর বাস করত। সে বানরকে খুব ভালোবাসত। তাকে ভালো ভালো খাবার খেতে দিত। কাছে এলে আদর করে গায়ে হাত বুলিয়ে দিত। তাই বানরও মধু মিয়াকে ভালো বাসত। সে তার খুব ভক্ত ছিল। মধু মিয়া যেখানে যেত বানরটি তার পিছু নিত। মধু মিয়াকে অনুসরণ করে গাছে গাছে ঘুরে বেড়াত। সুধানগর গ্রামে কয়েকজন দুষ্টু লোক বাস করত। তাদের মধ্যে সালেক ও মালেক ছিল দুই বন্ধু। তাদের স্বভাব ছিল চুরি করা। তাদের অত্যাচারে গ্রামবাসীরা অতিষ্ঠ ছিল। মধু মিয়ার সহযোগিতায় গ্রামবাসীরা তাদের বেশ কয়েকবার ধরেছে। বিচারে তাদের সাজাও হয়েছে। গ্রামের অন্য প্রান্তে বাসুদেব নামে আরেকজন বাস করত। তার স্বভাব ছিল লোকজনদের সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদ করা। যখন-তখন মানুষের গায়ে হাত তোলা। বিচারে তারও কয়েকবার শাস্তি হয়েছে। সালেক, মালেক ও বাসুদেব সব সময় মধুকে ভয় পেত। কারণ তারা জানত মধুর কানে কিছু গেলে তাদের শাস্তি অনিবার্য। শাস্তির ভয়ে তারা কিছুদিন অপকর্ম থেকে বিরত ছিল। এভাবে বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হয়।

অনেক দিন পর গ্রামের হালিম নামে এক গেরস্তের বাড়িতে সালেক মালেক চুরি করতে গিয়ে তারা ধরা পড়ে। ওই গেরস্ত মধু মিয়ার কাছে বিচার দেয়। মধু মিয়া তাদের উপযুক্ত শাস্তি দেয়। এর ফলে মধু মিয়া ও গেরস্তের প্রতি সেই দুজন ক্ষুব্ধ ছিল। তারা এর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য একটি পরিকল্পনা করে। তাদের পরিকল্পনায় বাসুদেবও যুক্ত হয়। তারা জানত মধু মিয়া প্রায় প্রতিদিনই গ্রামের শেষপ্রান্ত দিয়ে যাতায়াত করে। এলাকাটি বেশ নির্জন। এক দিন সন্ধ্যায় রাস্তা দিয়ে মধু মিয়া একাকী হেঁটে যাচ্ছিল। ঠিক সেসময় সালেক, মালেক ও বাসুদেব তাকে আক্রমণ করে। শত চেষ্টা করেও মধু তাদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। তারা মধুর চোখ বেঁধে ফেলে। তারপর জোরপূর্বক তাকে বনের মধ্যে নিয়ে যায়। বনটি ছিল হিংস্র জীবজন্তুতে ভরা। তারা চিন্তা করল মধু মিয়াকে হত্যা না করে বনের মধ্যে একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখবে। নিশ্চয় তাকে রাতের বেলা কোনো হিংস্র জীবজন্তু খেয়ে ফেলবে। মধু মিয়ার মৃত্যু হলেই তাদের উদ্দেশ্য সফল হবে। পরিকল্পনামতো তারা মধু মিয়াকে একটি গাছের সঙ্গে শক্ত করে বেঁধে রাখল। তারপর তারা বন থেকে বের হয়ে গেল। তারা ঘূর্ণাক্ষরেও জানতে পারেনি যে বানরটি তাদের এই কর্মকান্ড দূর থেকে লক্ষ করছিল। সকলে যখন বন থেকে বের যায়, তখন বানরটি মধু মিয়ার কছে পৌঁছায়। সে একে একে মধু মিয়ার চোখ, হাত ও পায়ের বাঁধন খুলে দেয়। মুক্ত হয়ে মধু বানরটিকে জড়িয়ে ধরে।

সালেক, মালেক ও বাসুদেব কী করে তা জানার জন্য মধু মিয়া সুধানগরে নিজের বাড়িতে না গিয়ে অন্য একটি গ্রামে কিছুদিনের জন্য আশ্রয় নেয়। পরদিন মধু মিয়ার কপালে কী ঘটেছে, তা দেখার জন্য দুই বন্ধু সকালবেলায় বনের মধ্যে প্রবেশ করে। কিন্তু তারা মধু মিয়ার কোনো চিহ্ন দেখতে পায় না। তারা ভাবে, নিশ্চয় মধুকে বাঘে খেয়েছে। এদিকে মধু মিয়াকে বাড়িতে না পেয়ে গ্রামবাসীরা খোঁজাখুঁজি শুরু করে। কিন্তু কেউ তার হদিস পায় না। একপর্যায়ে সালেক ও মালেক মধু মিয়ার স্বজনদের কাছে গিয়ে বলে যে, আমরা হালিম গেরস্তকে দেখেছি দুজন লোকের সহযোগিতায় মধু মিয়াকে জোরপূর্বক বনের মধ্যে নিয়ে যেতে। নিশ্চয় সে অসৎ উদ্দেশ্যে এমনটি করেছে। এসব ঘটনা জানার পর মধু মিয়ার স্বজনরা দেশের রাজার কাছে বিচার দেয়। রাজার শাসনব্যবস্থা ছিল কড়া। রাজা কাউকে প্রশ্রয় দিত না। আদেশ পেয়ে রাজার লোকজনরা হালিম গেরস্তকে ধরে আনে। বিচারের জন্য একটা দিন ধার্য করে। আদালতে সালেক ও মালেক মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়। বিচারের রায়ে হালিম গেরস্তের মৃত্যুদন্ড হয়। রায় কার্যকরের জন্য একটা নির্দিষ্ট দিন ধার্য করা হয়।

হালিম গেরস্তের মৃত্যুদন্ডের কথা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। সে কথা মধুর কানেও পৌঁছে যায়। মধু সিদ্ধান্ত নেয় রাজার সঙ্গে দেখা করবে। পরদিন রাজপ্রাসাদের হাজির হয়ে সে রাজার সঙ্গে দেখা করে। সব ঘটনা রাজাকে খুলে বলে। মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ায় রাজা সকলের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়। রাজার লোকজনরা সালেক, মালেক ও বাসুদেবকে ধরে আনে। বিচারে তারা অপরাধী প্রমাণিত হয়। কৃতকর্মের জন্য তারা রাজার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। কিন্তু রাজা তাদের কথায় কর্ণপাত করেন না। রাজা তাদের মৃত্যুদন্ড দেন। নির্দিষ্ট দিনে সেই রায় কার্যকর করা হয়। সালেক, মালেক ও বাসুদেবের মৃত্যুর পর গ্রামে শান্তি ফিরে আসে। গ্রামবাসীরা আবার সুখে-শান্তিতে জীবনযাপন করতে শুরু করে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close