মশিউর রহমান

  ১১ জানুয়ারি, ২০২০

ধূলির গল্প

নিলয় বাবার হাত ধরে ইশকুলে যায়। ইশকুলে যাওয়ার পথে অনেক ধুলা তার নাকে এসে লাগে। সে বাবাকে প্রশ্ন করে, রাস্তায় এত ধুলো কেন বাবা? আমাদের ঘরে তো ধুলো নেই।

বাবা বলেন, আমাদের ঘরেও ধুলো আছে। আমরা সব সময় তা দেখতে পাই না।

বাবা বলেন, তোকে তাহলে ধূলির গল্পটাই বলি। তুই মন দিয়ে শোন, কেমন?

নিলয় বলে, ঠিক আছে বাবা। তুমি বলো আমি শুনব।

বাবা বলেন, ধূলি হচ্ছে একটা ছোট্ট ধুলোর কণা। সে বাতাসে ভেসে বেড়ায়। খেলে বেড়ায়।

নিলয় বলে, বাবা আমিও তো খুব ছোট্ট। আমিও তো ঘরের ভেতর আর ইশকুলের মাঠে খেলে বেড়াই।

বাবা বলেন, ঠিক বলেছিস সোনা। ধূলি নিয়ে আরো গল্প বলছি তুই শোন।

নিলয় মন দিয়ে বাবার কথা শোনে।

বাবা বলেন, ধূলির চারপাশে তারই মতো আরো অনেক ধুলোর কণারা আছে। ওরা সবাই মিলে নাচে, খেলে। এই তোর যেমন বাড়িতে বাবা-মা ও ইশকুলের বন্ধুরা আছে। তুই যেমন তোর বন্ধুদের সঙ্গে হেসে-খেলে বেড়াস, ধূলিরাও তেমনি বাতাসে হেসে-খেলে বেড়ায়...

নিলয় ইশকুলে চলে যায়। বাবার কাছ থেকে সেদিন আর ধূলির গল্প শোনা হয় না।

২.

পরদিন সকালে জানালা দিয়ে সূর্যের একচিলতে আলো নিলয়ের ঘরের ভেতর প্রবেশ করে। তখন সেই আলোতে নিলয় ধূলিকণাদের বেশ ভালো করে দেখতে পায়। সঙ্গে সঙ্গে সে বাবাকে ডেকে এনে বলে, বাবা দেখো আমাদের ঘরের ভেতরেও অনেক ধুলো। ওই জানালা দিয়ে যে আলোর রেখা আসছে, সেদিকে চেয়ে দেখো কত্ত ধূলিকণা!

বাবা বলেন, আমি তো তোকে আগেই বলেছিলাম, আমাদের ঘরেও অনেক ধূলি আছে। আমরা সব সময় তা দেখতে পাই না। এখন ধূলির আরো গল্প বলছি তুই মন দিয়ে শোন।

ধূলি তার চারপাশের বাতাসের অনেক খোঁজখবর রাখে।

সে জানে, বাতাস পৃথিবীকে জড়িয়ে থাকে। পৃথিবীর ওপর যা কিছু আছে সবাইকে বাঁচিয়ে রাখে। বাতাস কেবল ততটুকুই সূর্যের আলো আর তাপ পৃথিবীতে ঢুকতে দেয়, যতটুকু আমাদের বেঁচে থাকার জন্য দরকার। বুঝতে পেরেছিস?

নিলয় বলে, ঠিক বলেছো বাবা। আমাদের বেঁচে থাকার জন্যও তো ভালো ভালো খাবারের খুব দরকার। তেমনি বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেনেরও দরকার।

বাবা বলেন, ধূলি সম্পর্কে তোর আরো অনেক কিছু জানতে হবে। এই যেমন ধর, ধূলি বাতাসে ভেসে বেড়ায় আর বাতাসের রয়েছে নানা উপাদান। নানা রকম গ্যাস মিলিয়ে-মিশিয়ে তৈরি হয় বাতাস। এদের মধ্যে কোনোটা মানুষ ও পশুপাখিদের জন্য প্রয়োজনীয়। আবার কোনো কোনোটা গাছপালাদের বেঁচে থাকার জন্য খুবই দরকার। ধূলি কিন্তু এসব খবর রাখে।

এ ছাড়াও ধূলি জানে, তার চারপাশের বাতাসে আরো অনেক কিছু আছে। যেমনÑ জলীয়বাষ্প, যা আকাশে ওঠে যায়। অনেক জলীয়বাষ্প একসঙ্গে মিলে হয়ে যায় তুলতুলে মেঘ। বাতাস ধূলিকে উড়িয়ে সেই মেঘের কাছে নিয়ে যায়। ধূলিকণারা মেঘের সঙ্গে মিশলে মেঘ ভারী হয়। তারপর বৃষ্টি হয়ে মাটিতে নামে।

নিলয় অবাক হয়ে বলে, বৃষ্টি হতেও ধূলির সাহায্য লাগে?

বাবা বলেন, হ্যাঁ সোনা। ধূলি কিন্তু আরো অনেক কিছু করতে পারে।

কী করতে পারে বাবা?

এই যেমন ধর, ধূলিরা ফুলের পরাগরেণু, জলীয়বাষ্প ও বায়ুতে ভেসে বেড়ায়। সূর্যের আলো যখন এসবের মধ্য দিয়ে যায়, তখন তৈরি হয় এক ধরনের আলোর ফোয়ারা।

নিলয় বলে, আমরা যেমন সব সময় ধূলিকে দেখতে পাই না, তেমনি বাতাসকেও দেখতে পাই না। বাতাসের সঙ্গে তাহলে ধূলির কী সম্পর্ক বাবা?

বাবা বলেন, বাতাস আমরা দেখতে পাই না, কিন্তু বাতাস চললে আমরা বুঝতে পারি। আর তাকে আমরা হাওয়া বলি। এই হাওয়া কখনো শান্ত। কখনো ঝিরঝিরে। আবার কখনো ঝড়ের মতো। হাওয়া ধূলিকে নানা জায়গায় নিয়ে যায়। কখনো কখনো হাওয়া ধূলিকে আকাশের অনেক ওপরে নিয়ে যায়। মেঘেদের কাছে। পাখিদের কাছে। আবার কখনোবা উড়োজাহাজের কাছেও নিয়ে যায়।

নিলয় বলে, ধূলি তো আকাশে উড়ে উড়ে বেড়ায়। তাহলে রংধনুর কাছেও চলে যায়, তাই না বাবা?

বাবা বলেন, হ্যাঁ সোনা। ধূলি আকাশের নানা রং খুব ভালোবাসে। যখন হাওয়ায় জলকণা থাকে, তখন ধূলিকণারা এসে জলকণায় আটকে যায়। সূর্যের সাদা আলো জলীয়বাষ্প আর ধূলিকণায় বাধা পেয়ে সাত রঙে ভেঙে যায়। তখনই আকাশে রংধনু দেখা যায়। অসংখ্য ধূলিকণা একসঙ্গে মিশেই তো রংধনুর সৃষ্টি করে।

৩.

পরদিন সকালে আকাশে গোলাপি রঙের আভা ফুটেছে।

নিলয় বাবাকে ডেকে বলে, ওই দেখো বাবা, আকাশটা কেমন গোলাপি হয়ে উঠেছে। আচ্ছা বাবা, ভোরবেলা যখন সূর্য ওঠে, তখন আকাশের রং কেমন মিষ্টি গোলাপি রঙের দেখা যায়। তখন কেন নীল রঙের আকাশ দেখা যায় না?

বাবা বলেন, সূর্যের আলো যখন বাতাসের ভেতর দিয়ে যায়, তখন বাতাসে মিশে থাকা নানা গ্যাসীয় পদার্থের সঙ্গে তার ধাক্কা লাগে। আর ধাক্কা লাগে সেখানে ভেসে বেড়ানো ধূলিকণাদের সঙ্গে। এসব ধাক্কাধাক্কি আর ওলটপালটে আকাশকে গোলাপি করে দেয়।

গ্যাস, ধুলো আর অন্যান্য ছোট্ট ছোট্ট জিনিস সূর্যের আলো এদিক-ওদিক ছড়িয়ে দেয়। যখন তা বাতাসের মধ্য দিয়ে যায়, আকাশ তখন রং বদলায়। আর দিনের বেলায়, সূর্য যখন ঝলমলে আলো দেয়, আকাশের রং থাকে তখন গাঢ় নীল। আকাশ যখন নীল দেখা যায়, তখন আকাশে মেঘ থাকে না। ধূলিকণাও কম থাকে। ধূলিকণার কারণেই কখনো হালকা গোলাপি, হালকা নীল, আবার কখনো সাদা রঙের আকাশও দেখা যায়।

আবার বিকালবেলা সূর্য ডোবার সময় একই রকম ঘটনা ঘটে। তবে এ সময় বাতাসে অনেক বেশি ধোঁয়া, ময়লা ও ধুলো মিশে থাকে, তাই আকাশ হয়ে ওঠে হলুদ, কমলা বা লালচে।

নিলয় বলে, ধূলি তো আমাদের অনেক ক্ষতিও করে, তাই না বাবা?

বাবা বলেন, হ্যাঁ সোনা। ধূলিরা মানুষের নাক দিয়ে ঢুকে ফুসফুসে চলে যায়; তখন আমাদের খুব শ্বাসকষ্ট হয়। আমরা নিউমোনিয়াসহ নানা রোগে ভুগি। কখনো কখনো ধূলিঝড় হয়, তখন তো রাস্তায় বের হওয়াই যায় না।

আমাদের নিলয় সোনা গালে হাত দিয়ে বসে পড়ে।

সে ভাবে, ধূলি আর ওর বন্ধুরা ছোট্ট হতে পারে, কিন্তু তাদের অনেক ক্ষমতা। তারা আকাশের রং বদলে দিতে পারে। তারা রংধনু সৃষ্টি করতে পারে। তারা মেঘের সঙ্গে মিশে বৃষ্টিও নামাতে পারে! আবার ধূলি আমাদের অনেক ক্ষতিও করে!

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close